বিরল অস্ত্রোপচারে মেরুদণ্ড সোজা হল কিশোরীর
প্রায় ছ’ফুট লম্বা মেয়েটা ষোলো বছর বয়সে এই প্রথম শিরদাঁড়া সোজা রেখে, মাথা উঁচু করে হাঁটতে পারছে। আবেগে, আত্মবিশ্বাসে আর জিতে যাওয়ার উচ্ছ্বাসে কথা বলতে গিয়ে কথা ফুরিয়ে যাচ্ছে তার।
বুধবার একঘর অতিথি-অভ্যাগত-চিকিৎসক-সাংবাদিকের সামনে একটু হাঁফিয়ে, একটু থেমে সেই কিশোরী রশ্মিতা বলছে, “করুণা করত লোকে আমায়। আমি মুখ খুললে অনেকে বিদ্রুপ করে বলত, ‘‘সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না তার আবার এত কথা!’ কেউ বলত, গত জন্মের পাপের ফল। চিকিৎসকেরা আমাকে দ্বিতীয় জীবন দিলেন।”
ছোটবেলা থেকেই রশ্মিতা গুহর শিরদাঁড়ার গড়ন ছিল উল্টো। পাশ থেকে দেখলে মানুষের শিরদাঁড়ার আকার অনেকটা ধনুকের মতো দেখায়। রশ্মিতার ক্ষেত্রে সেই ধনুকটি ছিল উল্টোমুখী। ফলে ভাল করে দাঁড়াতে বা সোজা হয়ে শুতে পারত না রশ্মিতা। গত ৩০ জুলাই দুর্গাপুর মিশন হাসপাতালে জটিল ও দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের পর সেই শিরদাঁড়া ৯৯ শতাংশ সোজা হয়ে গিয়েছে বেলুড়ের অগ্রসেন বালিকা সদনের এগারো ক্লাসের ছাত্রীটির। সার্জন অভিষেক রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে রশ্মিতার অস্ত্রোপচার করেছেন। তাঁর কথায়, “আমরা অষ্টাবক্র-র গল্প পড়েছি, ভিক্টর হিউগো-র লেখা হাঞ্চব্যাক অফ নতরদাম পড়েছি। রশ্মিতাকে প্রথম বার দেখে সেই সব মনে পড়ছিল। আমাদের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল এই অস্ত্রোপচার।”
চিকিৎসক অভিষেক রায় ও সত্যজিৎ বসুর সঙ্গে রশ্মিতা গুহ। ছবি: দেবস্মিতা চক্রবর্তী।
কী থেকে এমন বিকৃতি ছিল রশ্মিতার দেহে? চিকিৎসকদের কথায়, জন্ম থেকেই ‘মারফান সিনড্রোম’-এ আক্রান্ত ছিল রশ্মিতা। আট মাস বয়সে তার এই জিনগত রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এটি এক ধরনের ‘কানেকটিভ টিস্যু ডিসঅর্ডার।’ বিশ্বে প্রতি ৩-৫ হাজার মানুষের মধ্যে এক জনের এটি হতে পারে। এতে শরীরের বিভিন্ন সংযোগস্থলের লিগামেন্ট, মাংসপেশি, হাড় ও স্নায়ু মাত্রাতিরিক্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। রোগী অস্বাভাবিক লম্বা হয়। বুকের খাঁচা হয় অত্যন্ত সরু। ফুসফুসের ক্ষমতা সাধারণের থেকে ৪০% কম হয়। ফলে রোগী তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রমশ বিকল হয়ে অকালে মৃত্যু হয় রোগীর।
রশ্মিতারও চোখ এবং হৃৎপিণ্ড আক্রান্ত হয়েছিল আগেই। রেটিনা ছিঁড়ে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিল রশ্মিতা। বছর দু’য়েক আগে তার হৃৎপিন্ডের বাঁ দিকের নিলয় ও মহাধমনীর সংযোগকারী টিস্যু চওড়া হয়ে ‘এওটিক ভাল্ব’ ফুটো হয়ে গিয়েছিল। তখন অস্ত্রোপচার করে তা ঠিক করেছিলেন ওই হাসপাতালেরই কার্ডিওলজিস্ট সত্যজিৎ বসু। এত কিছুর পরে শিরদাঁড়ায় আবার বড় অস্ত্রোপচার হলে হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ পড়ার আশঙ্কা ছিল। ফুসফুস বিকল হতে পারত, শিরদাঁড়াও পাকাপাকি ভাবে নষ্ট হতে পারত। অস্ত্রোপচারে ভুল হলে অবশিষ্ট চোখের দৃষ্টিও যেতে পারত।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য জয় হয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রেরই। ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, গলার নীচ থেকে পেলভিস পর্যন্ত মোট ২৩টা স্ক্রু দিয়ে আটকে সোজা করা হয়েছে রশ্মিতার শিরদাঁড়া। খরচ পড়েছে ১৪ লক্ষ টাকার মতো।
এত দিন এক বারে ১০ মিনিটের বেশি হাঁটতে পারত না রশ্মিতা। টানা বসে থাকতে পারত না। শুতে হত পাশ ফিরে। তাই নিয়েই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। এখন শিরদাঁড়া সোজা করে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যেতে আর বাধা নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.