কাশ ফুলে দোষ নেই, পাট চাষে আছে। সীমান্ত জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে সাত আট ফুট লম্বা কাশ গাছ। অথচ পাট চাষে প্রবল আপত্তি সীমান্তরক্ষীদের। তবে কাশ ফুলে ছাড় কেন? মুর্শিদাবাদের ১৩০ নম্বর ব্যাটেলিয়নের অ্যাসিস্ট্যান্ট কম্যান্ডার রবি কুমার হাসতে হাসতে বলেন, “ব্যাপারটা ঠিক সে রকম নয়। সীমান্তে নজরদারির ক্ষেত্রে পাট ও কাশ দুই-ই সমান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু চাষিদের নিষেধ করলে পাট চাষ বন্ধ রাখা যায়। কিন্তু কাশ তো আর কেউ চাষ করেন না। তাহলে কাকে নিষেধ করব? আবার কিছু দিন পর তা মিলিয়েও যায়।
খেতে কাজ করার সময় সেই সাদা চরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনকেমন করে ওপার বাংলার সজিবর রহমান বাচ্চুর। একটা সময় কাশবনের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাঁরা চলে আসতেন এপার বাংলার কোনও পুজো মণ্ডপে। সীমান্তে তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আর এখন? সজিবরের আক্ষেপ, “সে সব দিন এখন কোথায়? ওই দূরের কোনও গ্রাম থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ, মাইকের গান। কাশফুলের মতো আমরাও যদি মিলেমিশে
যেতে পারতাম!” |
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার দুধারে, চরের মাঠে পাট ও অন্যান্য লম্বা গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে বিএসএফের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু সীমান্তের ফাঁকা মাঠে প্রকৃতির নিয়মে অবাধে বেড়ে ওঠে কাশবন। বর্ষার শুরুতেই মাথা তুলে দাঁড়ায় তারা। শরতে সাদা ফুলে ভরিয়ে দেয় সীমান্ত। মুর্শিদাবাদের রানিনগর সীমান্তের এক বাঙালি জওয়ান যেমন বলছেন, “নিরাপত্তার প্রশ্নে কাশবন নিয়ে আমরা খুব একটা মাথা ঘামাই না। ও এমনি থেকেই হয়, আবার মিলিয়েও যায়। তবে কি জানেন, এই সময়টা এলেই বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। ছেলেবেলার পুজোর দিনগুলির কথা মনে পড়ে যায়। নদী কিংবা নয়ানজুলির দু’ধারে কাশ ফুল দেখে বড় হয়েছি। মাঝে মাঝে মনে হয় একঘেঁয়ে এই সীমান্তে ভাগ্যিস কাশ ফুল ফোটে, না হলে শরৎকালকে তো আলাদা করে বুঝতেই
পারতাম না!”
বছর পনেরো আগেও পুজো কিংবা ঈদের সময় সীমান্ত থাকত অন্য মেজাজে। উৎসবের মরসুমে সীমান্ত পারাপার করলে তেমন কিছু বলত না বিএসএফ-বিডিআর (এখন বিজিবি) কোনও পক্ষই। তবে তাদের বলে আসতে হতো। অনুমতিও মিলে যেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তও বদলে গেল। বদলে গেল সীমান্তের সেই ‘চলো, ঠিক হ্যায়’ গোছের মনোভাবও।
সীমান্তের রুখাশুখা হরেক নিয়মে বাংলাদেশের চরঘাট, আড়ানি, ইসবপুর এলাকার মানুষ এখন আর এ পারে আসেন না। মিলিয়ে গেছে পায়ে পায়ে হাঁটা সেই আলপথও। তবে চরাচর আলো করে ফুটে থাকা কাশ ফুল আজও দু’দেশের মানুষকে জানিয়ে দেয় আগমনী বার্তা।
প্রতি বছর। |