ব্যান্ডেলের পরে এ বার কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আমূল সংস্কারের কাজে হাত দিতে চলেছে রাজ্য সরকার। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও জার্মান ব্যাঙ্ক। বাকি টাকা দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জোগাড় করা হবে।
দেশের মধ্যে ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেই প্রথম বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় ২১০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটের আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের গোড়ায়। এর জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক রাজ্যকে প্রথম দফায় ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ২০১৪-এর শেষের দিকে ওই কাজ শেষ হওয়ার কথা। সেই পথে হেঁটেই কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিটি ২১০ মেগাওয়াট করে তিনটি ইউনিট সংস্কার করবে বিদ্যুৎ দফতর। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “আগামী বছরেই আন্তর্জাতিক বাজারে দরপত্র হেঁকে সংস্থা বাছাইয়ের কাজ সেরে ফেলা হবে, যাতে ২০১৫-র গরমের পরেই ওই তিনটি ইউনিটে হাত দেওয়া যায়। কারণ, ২০১৭-র গরমের আগেই ফের সেগুলি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম।”
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২১০ মেগাওয়াট করে মোট ছ’টি ইউনিট রয়েছে। তার উৎপাদন ক্ষমতা ১,২৬০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে যে তিনটি ইউনিট সংস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, সেই এক, দুই এবং তিন নম্বর ইউনিট ২৮-৩০ বছরের পুরনো। বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের এক কর্তা বলেন, “বয়সের ভারে ইউনিটগুলি দুর্বল হয়ে পড়েছে। গরমে কার্যত জোর করেই উৎপাদন চালু রাখতে হয়। রুগ্ণ হওয়ার কারণে দূষণ বাড়ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।” নিগম সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও জার্মান ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা কোলাঘাট ঘুরে দেখেছেন। তার পরেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক ৩১৫ কোটি টাকা এবং জার্মান ব্যাঙ্ক ৭৬০ কোটি টাকা রাজ্যকে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।
ওড়িশা, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা-সহ বেশ কিছু রাজ্যও রুগ্ণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংস্কারে বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঋণ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ওই কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক ও অর্থ মন্ত্রকও। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সবার আগে সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দেওয়ায় সবার আগে ঋণ নেওয়ার ছাড়পত্রও পেয়েছে। নিগমকর্তাদের বক্তব্য, সংস্কারের মাধ্যমে টারবাইন-সহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিয়ন্ত্রক যন্ত্রগুলির খোলনলচে বদলে ফেললে ওই তিনটি ইউনিটের কর্মক্ষমতা ১০ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে আরও ১৫-২০ বছর অনায়াসে চলতে পারবে সেগুলি।
কিন্তু সংস্কারের জন্য তিনটি ইউনিট বসিয়ে দিলে তো বিদ্যুৎ উৎপাদনও ৬৩০ মেগাওয়াট কমে যাবে? সেই ঘাটতি মিটবে কী ভাবে?
এক নিগম-কর্তার বক্তব্য, “সাগরদিঘিতে ৫০০ মেগাওয়াটের যে দু’টি ইউনিট তৈরির কাজ চলছে, সেখানে ২০১৫ থেকেই ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। হলদিয়ায় সিইএসসি-র ৬০০ এবং ডিপিএল-এর ২৫০ মেগাওয়াটের দু’টি নতুন কেন্দ্রেও তার মধ্যে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে ২০১৫-এ রাজ্যের হাতে বাড়তি ১,৮৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ থাকবে।” তাঁর দাবি, সেই কারণেই কোলাঘাটের তিনটি ইউনিট বসিয়ে দিলেও অতটা অসুবিধে হবে না।
পরিবেশ দূষণ কমাতেই বিশ্ব ব্যাঙ্ক এখন পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংস্কারে ঋণ দিচ্ছে। তিন-চার দশকের পুরনো ইউনিটগুলির সংস্কার হলে এক দিকে যেমন উৎপাদন বাড়বে, তেমনই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কমবে দূষণও। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সঙ্গে সহমত কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকও। ওই মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “নতুন প্রকল্প গড়তে সব রাজ্যেই কমবেশি জমি সংক্রান্ত সমস্যা আছে। সমস্যা রয়েছে কয়লা পাওয়ার ক্ষেত্রেও। কিন্তু চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উৎপাদন বাড়াতেই হবে। তাই কেন্দ্রও চাইছে, সব রাজ্যই যাতে পুরনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংস্কারে হাত দেয়।” সেই ভাবনায় পশ্চিমবঙ্গই আপাতত এগিয়ে।
|