|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
|
মেয়েরা পারছে যে! |
সঞ্চারী মুখোপাধ্যায় (‘কিছু মিস করছি না তো’?, ২৯-৮) মুম্বইয়ে শক্তি মিলসের কথা বলেছেন। সাধারণ ভাবেই শ্রমিক শ্রেণি যেমন শ্রমের সম্মান, কাজের অভিজ্ঞান হারিয়েছেন, গ্রামগঞ্জের কৃষিজীবী আর বিভিন্ন বৃত্তিতে থাকা খেটে-খাওয়া মানুষও হারিয়েছেন তাঁদের স্থানাঙ্ক। কৃষিকে অলাভজনক করার জন্য ভর্তুকি বন্ধ, সারের বর্ধিত দাম, সীমিত জল— এ সব নিয়ে বিপর্যস্ত কৃষি, মৃতপ্রায় কৃষক সমাজ।
আবার উন্নত টেকনোলজির কাছে পরাজিত পুরুষের পেশির দাপট। যন্ত্র ছাঁটাই করছে মানুষকে। কেড়ে নিয়েছে শতাব্দী-পুরনো কত পুরুষানুক্রমিক বৃত্তি। নতুন পেশায় তারা বিল্ডিং তৈরির বা টাওয়ার নির্মাণের ঠিকা শ্রমিক। স্টেশনে টার্মিনাসে প্লাস্টিক ব্যাগের ডালা নিয়ে দূর দেশে পাড়ি দেওয়া ব্যর্থ ইকেরাস...
পাশাপাশি ছিছিক্কার করা ঘরের কাজ, মেয়েলি কাজের দক্ষ আঙুলগুলো কেমন করে ব্রেক পেয়ে সুপার হিট হয়ে যাচ্ছে। সূক্ষ্ম যন্ত্রের কাজের ধৈর্য, অধ্যবসায়, মগ্নতা আর অভিনিবেশের জন্য মেয়েদেরই আধিপত্য কাপড় কারখানা, ঘড়ির কারখানায় আর ঊনকোটি বিভিন্ন কাজে। শুধুমাত্র বিয়ে আর সন্তান ধারণের পাঠ্যক্রম থেকে বেরিয়ে মেয়েরা লেখাপড়া শিখে শিক্ষকতা বা সরকারি নিরাপদ চাকরিতে আটকে না-থেকে ছড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন কাজে। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উকিল জজ ম্যাজিস্ট্রেট পাইলট— এ সব বৃত্তির পাশাপাশি কত স্বাধীন বৃত্তি। অর্থনৈতিক সমস্যার মোকাবিলায় অন্দরমহলের অলক্ষ্যে থাকা অন্নপূর্ণারা এগিয়ে আসছেন বিভিন্ন পেশায়। প্রথম বাইরে আসার, কাজ পাওয়ার আনন্দে, কী তাঁদের আত্মপ্রত্যয় আর স্বপ্ন।
অনবরত কাজ হারানো, বহু শতাব্দী-লালিত ‘হি-ম্যান’, ‘রাফ-টাফ’ ইমেজ হারানো পুরুষের এই বাস্তব সহ্য হওয়ার কথা নয়! মুখে-চোখে শরীরভাষায় কী তাদের বিরক্তি রাগ ভ্রুকুটি— এত মেয়ে কেন!
বিপণন পৃথিবীতে মেয়েদের বেশ্যা হওয়ার স্বাধীনতা ছিল অথবা উপোসী হওয়ার বা ভিক্ষুক হওয়ার। কিন্তু পুরুষের ভাত-কাপড়ের সাম্রাজ্য দখল করার এই স্পর্ধাটা নতুন। পৃথিবীর যত যুদ্ধ, রাজনৈতিক পালাবদল— এই দখলকে ঘিরেই। নারী যেখানে উপলক্ষ মাত্র ছিল, এখন সরাসরি সমরে। স্বাভাবিক ভাবেই ডোমেস্টিক ভায়লেন্সের বেড়ি পেরিয়ে এখান তারা সরাসরি পাবলিক ভায়লেন্সের জোনে।
দীর্ঘ কর্মহীনতা, নিরাপত্তাহীনতা, জীবিকা সংশয়ে শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চলের আলপথ আর নয়ানজুলি জুড়েও তৈরি হয় অপরাধের নানা সুড়ঙ্গ পথ। সে সব বন্ধ না-হলে দিনে দিনে বাড়ে কামদুনি, ধুপগুড়ি, কেন্দুপুকরের অসংখ্য এপিসোড।
মূল সমস্যার সমাধানে না-গিয়ে সংখ্যালঘু সংখ্যাগুরু উচ্চবর্ণ অন্ত্যজের তাস খেলার মতো লীলাময় জগতের পুরুষ আর প্রকৃতিকে যুযুধান প্রতিপক্ষ করে দিলেই সমস্যার সমাধান হয় না। সত্যিই অদ্ভুত আঁধার। এবং সমস্যা গভীর, গভীরতর। |
তৃপ্তি সান্ত্রা। মালদহ
|
তারসানাই |
কবীর সুমনের লেখায় (রবিবাসরীয় ২৫-৮) দেখলাম, ‘...এসরাজের ব্রিজে দম-ঘোরানো গ্রামোফোনের ধ্বনি-প্রক্ষেপণ যন্ত্রাংশটি জুড়ে দিয়ে যে পান্নালাল ঘোষ তারসানাই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছিলেন, তাঁকেই বা মনে রেখেছেন ক’জন এই দেশে?’ তারসানাই সম্পর্কে অন্য রকম একটি তথ্য পেয়েছিলাম একটি বইয়ে: ‘...এসরাজে গ্রামোফোনের সাউন্ডবক্স লাগিয়ে তৈরি যে ‘তারসানাই’ যন্ত্রটি গানের সঙ্গে বাজতে দেখা যায়, সেটিও তাঁরই পরিকল্পনা।’ ‘তাঁরই মানে এখানে পান্নালাল ঘোষের নয়, সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর। বইটির নাম ‘সংগীতশাস্ত্রী সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর স্মৃতি’, লেখক সিদ্ধার্থ রায়। প্রকাশক ‘ঋতাক্ষর’। ৩০-৩১ পৃষ্ঠায় এই বাক্যটি আছে। একাশি বছর বয়স্ক লেখককে ফোন করে জানলাম তাঁর সংগীতগুরু সুরেশচন্দ্রই তারসানাই যন্ত্রটির উদ্ভাবক এবং পান্নালাল ঘোষ কিছু দিন সুরেশচন্দ্রের কাছে তালিম নিয়েছিলেন।
কেউ যদি এ বিষয়ে নির্ভুল তথ্য জানান, ভাল লাগবে। প্রসঙ্গত, ‘পথের পাঁচালী’ ছবিতে দুর্গার মৃত্যুসংবাদ পাওয়ায় হরিহরের কান্না যে বাজনায় বেজে উঠেছিল তা তো ছিল এই তারসানাই এবং সেটা বাজিয়েছিলেন দক্ষিণামোহন ঠাকুর, সুরেশচন্দ্রেরই অন্য এক শিষ্য। |
মানব চক্রবর্তী। কলকাতা-৪০ |
|
|
|
|
|