|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
অনাস্থাপ্রস্তাব? |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নৈরাজ্যবাদীদের স্বপ্ন পূরণ হইতেছে, এমন দাবি করিলে কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি হইবে। কিন্তু অর্থের সংস্থান বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সরকার অতি জরুরি কিছু ক্ষেত্র বাদে আর সব কাজ বন্ধ রাখিল— এমন ঘটনা বিরল। গত সতেরো বৎসরে এই প্রথম বার সরকারকে ‘শাটডাউন’ করিতে হইল। সামরিক ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য পরিষেবা জাতীয় কিছু ক্ষেত্র চলিতেছে, আর সমস্তই বন্ধ। সরকারি কর্মীরা বাধ্যতামূলক বিনা বেতনের ছুটিতে। ৩০ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক বৎসর শেষ হইয়াছে। ১ অক্টোবর হইতে নূতন বৎসর, ফলে প্রতিটি খাতেই নূতন ব্যয়বরাদ্দ স্থির করা বিধেয়। সমস্যা হইয়াছে, সরকারের ধারের ঊর্ধ্বসীমা না বাড়াইলে টাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব নহে, এবং রিপাবলিকানরা সেই সীমা বৃদ্ধিতে সম্মতি জানাইতে নারাজ। তাঁহাদের দাবি, ওবামার স্বাস্থ্যব্যয় সংক্রান্ত আইনে (যাহা ‘ওবামা-কেয়ার’ নামেই সমধিক পরিচিত) খরচে কাটছাঁট না করিলে তাঁহারা নূতন ঋণে সম্মত হইবেন না। মার্কিন পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ, কংগ্রেস ও সেনেটে প্রস্তাব পাশ করাইতে না পারিলে প্রেসিডেন্টেরও হাত বাঁধা। রিপাবলিকানরা কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০১৪ সালে আবার সেনেট নির্বাচন। ফলে, রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধিরা এই মুহূর্তে তাঁহাদের কট্টরতম অংশ টি পার্টি-র বিরাগভাজন হইতে নারাজ। অতএব, মোক্ষম জট পাকিয়াছে। অতি দ্রুত সমাধানসূত্র না মিলিলে মার্কিন অর্থনীতি, বিশ্ব-অর্থনীতিও, ফের ধাক্কা খাইবে বলিয়াই আশঙ্কা।
এই অচলাবস্থার কারণ হিসাবে ওবামা-কেয়ার লইয়া রিপাবলিকান বনাম ডেমোক্র্যাট দ্বন্দ্বের কথা বলিলে তাহা খণ্ডদর্শন হইবে। ইহাই আপাত কারণ, সংশয় নাই। দুই পক্ষের অবস্থানেই কিছু যুক্তি রহিয়াছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাঁহারা এখনও স্বাস্থ্য বিমার আওতার বাহিরে, তাঁহারা সমাজের দুর্বলতম শ্রেণির মানুষ। রাষ্ট্র যদি কাহারও জন্য কিছু করিতে চাহে, তবে সর্বপ্রথম এই শ্রেণির কথা ভাবাই বিধেয়। কিন্তু রিপাবলিকানরা যে প্রশ্ন তুলিয়াছেন, অর্থাৎ অর্থনীতি যখন সংকটাকীর্ণ তখন এই খয়রাতি যুক্তিযুক্ত কি না, তাহাও উড়াইয়া দেওয়ার নহে। কিন্তু এই তর্কটি অথবা তাহার আপাত-সমাধানসূত্রহীনতা মূল সমস্যা নহে। অচলাবস্থার মূল কারণ, গণতন্ত্রের প্রকৃত পরিসর হইতে বিচ্যুত হওয়া। যে কোনও দেশেই তাহা ঘটা দুঃখের, আধুনিক দুনিয়ায় গণতন্ত্রের পীঠস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটিলে আরও দুঃখের।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যবস্থাটি দ্বি-দলীয়। দুইটি দল আছে বলিয়া নহে। এই দুইটি দল— শাসক এবং বিরোধী পক্ষ— যে কোনও প্রশ্নে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় পৌঁছাইলে তবে সেই সিদ্ধান্তটি আইনি স্বীকৃতি পায় বলিয়া। একনায়কের হাত ধরিয়া যাঁহারা সওয়া ঘণ্টায় তিব্বতে পৌঁছাইবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিয়াছেন, তাঁহাদের নিকট এই ব্যবস্থাটি অলীক ঠেকিতে পারে। কিন্তু ইহাই গণতন্ত্রের আদর্শ ব্যবস্থা। ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের নিউ ডিল-ই হউক বা জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই আলোচনার পথেই সিদ্ধান্ত হইয়াছে। সিদ্ধান্ত ঠিক হউক অথবা মারাত্মক ভুল, এই ব্যবস্থায় বিরুদ্ধ মত শুনিবার এবং তাহাকে যথেষ্ট জায়গা করিয়া দেওয়ার সু-অভ্যাস গড়িয়া উঠে। ১ অক্টোবর হইতে চালু হওয়া ‘শাটডাউন’ গণতন্ত্রের এই অনুশীলনে মার্কিন রাজনীতিকদের ব্যর্থতার প্রমাণ হইয়া থাকিল। ওবামা-কেয়ার লইয়া বিরোধ নূতন নহে। ২০১১ সালেও একেবারে শেষ মুহূর্তে ‘শাটডাউন’ এড়ানো সম্ভব হইয়াছিল। এত দীর্ঘ আলোচনাতেও সমাধানসূত্র মিলিল না কেন? দায়বদ্ধতার অভাব ছিল? উভয় পক্ষও অযৌক্তিক ভাবে অনড় ছিল? না কি, গণতন্ত্রে সকলেরই আস্থা কমিতেছে? ‘শাটডাউন’-এর সংকট কাটিবার পরেও এই প্রশ্নগুলি কিন্তু থাকিয়া যাইবে। |
|
|
|
|
|