|
|
|
|
বিনোদন |
ফিল্ম সিটি তৈরির ভাবনা মহিষাদলে
বরুণ দে • মহিষাদল
দেবাঞ্জনা ভট্টাচার্য • কলকাতা |
|
|
ফিকে হয়ে যাওয়া ঐতিহ্যটা ফের প্রাণ পাচ্ছে। বাংলা ছবির শ্যুটিংয়ের ঠিকানা হিসেবে জেগে উঠছে মহিষাদল। পরিস্থিতি এতটাই সম্ভাবনাময় যে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাচীন এই জনপদে অত্যাধুনিক ফিল্ম সিটি তৈরির ভাবনাও শুরু হয়েছে।
মহিষাদল রাজবাড়িকে কেন্দ্র
করে ফিল্ম সিটি তৈরিতে আগ্রহী প্রযোজনা সংস্থা এস কে মুভিজ। সংস্থার কর্ণধার হিমাংশু ধানুকা বলেন, “মহিষাদল রাজবাড়ি ও আশপাশের এলাকাটা একেবারে ‘মিনি রামোজি রাও’। আমরা এখানে ফিল্ম সিটি গড়তে চাই। রাজপরিবারকে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছি। ওঁরা রাজি আছেন।” মহিষাদল রাজপরিবারের সদস্য সৌর্যপ্রসাদ গর্গেরও বক্তব্য, “এখানে একটা ফিল্ম সিটি তৈরির ইচ্ছে রয়েছে। রাজবাড়ি সংরক্ষণ করা দরকার। রাজবাড়ির পাশে সুন্দর বাগান তৈরি হতে পারে। রাজ্য সরকার যদি সাহায্য করে, তাহলে এ সব করতে অসুবিধে হবে না।” সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত প্রশাসনও। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের আওতাধীন মহিষাদলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে, আলো লাগানো হয়েছে। এলাকার উন্নয়নে সবই করা হবে।” মহিষাদলকে পুরসভা করার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর বেশ কয়েকটি ফিল্ম সিটি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হুগলির উত্তরপাড়া, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন মহিষাদল। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ছবির শ্যুটিং হয়েছে এখানে। দেব, শুভশ্রী, নুসরত অভিনীত ‘খোকা ৪২০’ সিনেমার গানের দৃশ্য-সহ অনেকটা অংশের শ্যুটিং হয়েছে মহিষাদল রাজবাড়িতে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা অঙ্কুশ ও নুসরত অভিনীত সিনেমা ‘খিলাড়ি’ এবং জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘সতী’র শ্যুটিংও এখানেই হয়েছে। |
|
মহিষাদল রাজবাড়িতে ‘খোকা ৪২০’ ছবির দৃশ্যে দেব ও শুভশ্রী। ছবি এস কে মুভিজের সৌজন্যে। |
মহিষাদলে শ্যুটিং অবশ্য এই নতুন নয়। এক সময় এখানে তপন সিংহের ‘অতিথি’ এবং অজয় করের ‘দত্তা’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল। ‘ঘরে বাইরে’ ছবির আউটডোর লোকেশন ঠিক করতে কাছেই গেঁওখালিতে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়ও। ঠিক হয়েছিল, নদীতীরে গ্রামীণ হাট, বটগাছ ঘেরা এলাকায় সন্দীপের স্বদেশি বক্তৃতার দৃশ্যটি শু্যট করা হবে। পরে সিদ্ধান্ত পাল্টায়। মাঝে কয়েক বছর মহিষাদলে শ্যুটিং করতে বিশেষ কেউ আগ্রহ দেখায়নি। এখন আবার ছবিটা পাল্টেছে। রাজপরিবারের সদস্য সৌর্যপ্রসাদ বলছিলেন, “বাংলা ছবির শ্যুটিং তো হচ্ছেই। কয়েকটি হিন্দি সিনেমা নিয়েও কথা চলছে।”
ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে তৈরি মহিষাদল রাজবাড়িতে পুরনো ও নতুন দু’টি প্রাসাদ
রয়েছে। ঘরে ঘরে দুর্মূল্য সব ছবি, আসবাব। প্রাচীন গোপালজিউ ও রামজিউ মন্দিরও দর্শনীয়। রাজবাড়ি ঘেঁষে চলে গিয়েছে হিজলি টাইডাল ক্যানাল। কাছেই গেঁওখালির উজাড় করা নিসর্গ। এক দিকে হলদি নদী, অন্য দিকে রূপনারায়ণ। যে সব অভিনেতা এখানে শ্যুটিং করেছেন, মহিষাদলের প্রেমে পড়েছেন তাঁরাও। পরপর দু’টি ছবির শ্যুটিংয়ে বেশ কিছু দিন মহিষাদলে কাটিয়েছেন অভিনেত্রী নুসরত জাহান। তিনি বলেন, “দারুন অভিজ্ঞতা। অনেক রাতেও লোকজন ভিড় করে শ্যুটিং দেখতেন।” অভিনেতা অঙ্কুশের কথায়, “রাজবাড়িটা অসাধারণ। এই প্রথম ওখানে গেলাম। আশা করছি আবার শ্যুটিংয়ের জন্য মহিষাদল যাওয়ার সুযোগ হবে।”
মহিষাদলে সিনেমা শ্যুটিংয়ের পরম্পরা যে আপাতত চলবে, তা নিশ্চিত। হিমাংশু ধানুকার কথায়, “মহিষাদল আমাদের ‘লাকি চার্ম’। যতগুলো সিনেমা-সিরিয়ালের শ্যুটিং এখানে করেছি, সব হিট। ফলে, এখানে শ্যুটিং করবই।” |
|
শ্যুটিংয়ের মহিষাদল |
হাতের কাছেই: কলকাতা থেকে ১০০ কিমি |
দুর্দান্ত লোকেশন: হলদি ও রূপনারায়ণের তীরে মনোরম নিসর্গ। রয়েছে বিশাল রাজবাড়ি চত্বর, পুরনো মন্দির। রাজবাড়িতে বড় ইউনিট নিয়ে শ্যুটিংয়ের সুবিধা, হলদিয়াও কাছেই। |
আগে শ্যুটিং: তপন সিংহের ‘অতিথি’ (১৯৬৫), অজয় করের ‘দত্তা’ (১৯৭৬) |
সম্প্রতি হয়েছে: ‘খোকা ৪২০’, ‘খিলাড়ি’, ‘সতী’ সিরিয়ালের শ্যুটিং |
|
|
|
|
|
|