কৃষি শ্রমিকের অভাবে যেমন ইদানীং ভুগতে হচ্ছে চাষিদের, তেমনই গত কয়েক বছর ধরে পটুয়াদেরও ভোগাচ্ছে শ্রমিকের অভাব। হুগলির বিভিন্ন এলাকার প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই শিল্পের ভরা মরসুম, বিশেষত দুর্গা পুজোর আগে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকেরা আসতেন। ইদানীং শ্রমিক পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। যদি বা পাওয়া যায়, তার জন্য মজুরি গুনতে হচ্ছে বেশি। শিল্পীদের মতে, গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে তুলনায় কম পরিশ্রমে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া, ভিন রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতাও আছে। তার উপরে প্রতিমা শিল্পের ব্যাপারে আগ্রহ কমেছে নতুন প্রজন্মের। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছর ধরে শ্রমিক মেলা ভার। |
মগ্ন শিল্পী। শ্রীরামপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
গুপ্তিপাড়া কুমোরপাড়ায় বাবু পাল ৩৫টি প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন। শিল্পীর বাবা রামচন্দ্র পাল জানালেন, ৬-৭ জন শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। কাটোয়ার আলমপুরের যুবক সাগর পাল গত কয়েক বছর ধরে এখানে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “ভাল মজুরির কাজ পেলে কেউ ঠাকুর বানানোর কাজ করতে চান না। ভিন্ রাজ্যেও চলে যান অনেকে।” চণ্ডীতলার জঙ্গলপাড়ার বছর ছাব্বিশের যুবক সমীর অধিকারী মশাট কদমতলার একটি ঠাকুর তৈরির স্টুডিওতে কাজ করেন। বললেন, “নতুন ছেলেরা এই কাজে তেমন আসছেন না। এখানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। মজুরি ততটা নয়।” সিঙ্গুরের বুড়িগ্রামের মৃত্শিল্পী বিদ্যুত্ পাল এ বার ৪৩টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, “যে হারে শ্রমিকের খরচ বা কাঁচামালের দাম বেড়েছে, তাতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি কই! অথচ বছরের এই বিশেষ সময়টার দিকেই তো আমরা তাকিয়ে থাকি।”
শ্রমিক-সমস্যার পাশাপাশি কাঁচামালের দামও চিন্তায় রেখেছে মৃত্শিল্পীদের। শ্রীরামপুরের চাতরায় কুমোরপাড়া দীর্ঘদিনের পুরনো। কেমন চলছে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য?
শিল্পীদের বক্তব্য, দিন দিন কাঁচামালের দাম বাড়ছে। কার্তিক পাল এ বার ২৩টি ঠাকুর গড়ছেন। জানালেন, গত বার একটি বাঁশের দাম ছিল ১১০-১২০ টাকার মধ্যে। এ বার তা অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। কাটোয়া থেকে শোলার তৈরি ডাকের সাজ আসে। তারও দাম বেড়েছে অনেকটা। প্রতিমার কাপড় থেকে রং সব ক্ষেত্রেই বাজারদর লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। কার্তিকবাবু বলেন, “হুগলি ছাড়াও নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমানের নানা জায়গা থেকে অনেকে এখানে কাজ করতে আসেন। পুজোর ৩-৪ মাস আগে থেকে তাঁরা আসেন। সংখ্যাটা অবশ্য কমছে। যুত্সই কোনও কাজ না পেলে তবেই ঠাকুর তৈরিকে পেশা করছে তাঁরা।” কুমোরপাড়ার বর্ষীয়ান শিল্পী স্বপন পালের কথায়, “এই শিল্পের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। অথচ অনেক শিল্পীই হালে পানি পাচ্ছে না। অন্য শিল্পের মতো সংগঠিত হলে হয় তো সমস্যা কমত।”
অনেকেই সরকারি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন এই শিল্পে। বছর কয়েক আগে কুমোরটুলির পরিকাঠামোগত সংস্কার নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে রাজ্য সরকার। কিছু কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপও করা হয়। যদিও প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, কিছু কুমোরের উদ্যোগের অভাবে সেই কাজ বিশেষ এগোয়নি। তবে হুগলির জেলার পটুয়াদের বড় অংশই মনে করেন, সরকারি হস্তক্ষেপ এই শিল্পের ক্ষেত্রে খুবই দরকার। এক তো পরিকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। তার উপরে কাঁচামালের দাম নিয়ন্ত্রণ বা সরকারি ভর্তুকিরও প্রয়োজন আছে।
চাতরা কুমোড়পাড়ায় ২৭ ঘর শিল্পী আছেন। তবে কোনও সংগঠন নেই। বহু আগে সংগঠন তৈরির চেষ্টা হলেও তা দানা বাঁধেনি। অধিকাংশ শিল্পীই ঋণ নিয়ে ঠাকুর গড়েন। তাঁরা জানান, এক সময় মহাজনি ঋণের সুদ গুনতে লাভের গুড় পিঁপড়েয় খেতো। এখন অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ মেলে। তবে উত্পাদিত দ্রব্যের নির্দিষ্ট দাম না থাকায় সমস্যা হয়। বাজারমূল্যের উপরেই প্রতিমার দাম নির্ভর করে। শিল্পীর নামযশ থাকলে ভাল দাম পান। না হলে অল্পেতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় পটুয়াদের।
|
জয়ী তৃণমূল ছাত্র পরিষদ
নিজস্ব সংবাদদাতা • পাঁচলা |
অনাস্থায় জিতে ছাত্রসংসদের দখল এল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে। পাঁচলার গঙ্গাধরপুর মহাবিদ্যামন্দিরের ছাত্র সংসদের ৩৬টি আসনের সব ক’টি আগে ছিল ছাত্র পরিষদের দখলে। গত ২০ সেপ্টেম্বর ২২ জন তৃণমূল ছাত্র পরিষদে যোগ দেন। তাঁদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপরে মঙ্গলবার গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি হয়। কলেজ সূত্রের খবর, ২২-১৪ ব্যবধানে হারেন সাধারণ সম্পাদক। তাদের সদস্যদের জোর করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ যোগদান করানোর অভিযোগ করেছে ছাত্র পরিষদ। অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। |