সম্পাদক সমীপেষু...
আর আমরা শিক্ষকরা দায়ী নই?
শিক্ষার মান নিয়ে হা-হুতাশ এখন আমাদের অভ্যেসে দাঁড়িয়েছে। তা আর নতুন করে পীড়াও দেয় না। এই অক্ষমতাকে শুধুমাত্র আশাহীনতার ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝা শক্ত। এর পিছনে যে অশিক্ষা রয়ে গেছে, তা হচ্ছে নিজের অক্ষমতাকে ঢাকা দিতে ‘বড় অক্ষমতা’র দোহাই।
প্রায় এক দশক বিদ্যালয় ও কলেজ স্তরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার সূত্রে মনে হয়েছে, শিক্ষককুলের একটা বড় অংশের জীবনাচরণ স্ববিরোধিতা ও প্রবঞ্চনায় ভরা, যাঁরা অবসরের বেশির ভাগ সময় জুড়ে এল আই সি, জি আই সি, মেডিক্লেম, সুদের হার আর কর কম দেওয়ার নিত্যনতুন উপায়ের খোঁজে কাটান আর শ্রেণিকক্ষে ‘টাকা মাটি, মাটি টাকা’ স্লোগানে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্লোভ ছাত্র তৈরি করেন। ভরা সিজনে সন্তানের শিক্ষার জন্য ‘হক’-এর ছুটি নিয়ে অধিকার ভোগে তৃপ্ত হন এবং ‘তেত্রিশ কোটি’ সন্তানের কথা শোচনাহীন ভাবে ভুলে যান। শ্রেণিকক্ষে যথা সময়ে ঢোকার কথা বিস্মৃত হন, কোনও ছুতোয় ঘণ্টাখানেক আগে প্রতিষ্ঠান ছাড়তে পারলে আপ্লুত হন। আর স্বাধীনতা দিবসে জাতি গঠনের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার উপর নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন। এবং ছাত্রদের দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতিকে গাল পাড়েন। ছুটির পরে রিকশা স্ট্যান্ডে রিকসা না-পেলে এই মর্মে জ্বলে ওঠেন যে, এরা শুধু অধিকার বুঝেছে কিন্তু দায়িত্বের ছিটেফোঁটাও বোঝেনি। প্রান্ত থেকে আসা (হয়তো সে এক প্রথম প্রজন্মের ছাত্রছাত্রী, হয়তো দৈনিক ১০-১৫ কিমি সাইকেল চালিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে) ছাত্রছাত্রীর একটি কাঙ্ক্ষিত ও মহার্ঘ স্বাক্ষর প্রার্থনাকে অবলীলায় ‘পরের সপ্তাহে এসো’ বলে সহকর্মীর সঙ্গে মত্ত হন সংসারী গল্পে। কী ভীষণ অর্থকষ্টে দিন কাটছে এই শাক্তসংগীত ঘরানার আক্ষেপে। কেননা, তিনি যে দশ বছরের শিক্ষকতার মাথায় তাঁর দ্বিতীয় ফ্ল্যাটটি কিনে ফেলেছেন। অতএব দোষ কারও নয় গো মা!

মধ্যবিত্তের সমস্ত বদ অভ্যাসগুলিকে কেবল রপ্ত করছি না, বুদ্ধির জোরে (নইলে এত্ত ডিগ্রির কী-ই বা মূল্য!) তাকে যুক্তিসিদ্ধ অলংকার করে তুলছি। ছাত্ররা যে আমাদের উন্নতমার্গের জ্ঞান আহরণে অক্ষম, এ কথা কেবল মনের গভীরেই উপলব্ধি করছি না, সময়ে সময়ে গর্বভরে প্রকাশও করছি। আর সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার টাকা খরচ করেও শহরে নামীদামি স্কুলের টিচাররা যে আমাদের প্রতিভাবান সন্তানদের কাঙ্ক্ষিত দেখভাল করছেন না, সমাজটা যে এক্কেবারে গোল্লায় যাচ্ছে এমন কথাও দ্বিধাহীন ভাবে উচ্চারণ করছি। ভাবটা এমন, মাইনা তো আমি নিচ্ছি, পরিষেবা কই? আর নিজেকে আড়াল করার পন্থা হিসেবে ভাবছি, আমার মাইনা তো দেয় সরকার। সরকারি নির্দেশনামাকে পালন করে তার প্রতি আনুগত্য তো প্রকাশ করছিই। খামকা ‘মূর্খ’গুলির প্রতি দায়প্রকাশের দরকার কী?
কথাটা এই নয় যে, আমি শিক্ষককুলের মাইনার অতিরেক নিয়ে প্রশ্ন তুলছি, বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরকার হাত তুলে নিলে সমস্যার সামধান হবে বলে মনে করছি। সম্মানজনক যাপনের জন্য অর্থ প্রয়োজন, নিশ্চয়তাও দরকার। প্রয়োজনে তা নিয়ে শিক্ষক সমাজকে লড়াইও করতে হয়। তবু অর্থ বিষয়ে এক জন ব্যবসায়ীর (বেশির ভাগ সময়) বোঝাবুঝির চাইতে এক জন শিক্ষকের বোঝাপড়ায় কিছু পার্থক্য থাকবে, এটাই কাঙ্ক্ষিত। শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের ফলপ্রকাশের দিন ‘টেনশন’ করছেন, ছাত্রছাত্রীদের ভালমন্দ ফলের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিচ্ছেন, এ জিনিস ইদানীং চোখে পড়বে না, পড়লেও কদাচিৎ।
অসংখ্য গুণী আত্মসম্মানযুক্ত মহৎ মানুষ এখনও এ পেশায় আছেন। এঁরা নমস্য। কিন্তু মানসিক দেউলিয়াপনার যে চর্চা গর্বভরে প্রকাশ্যে শুরু হয়েছে, তার কথা ভেবে ভয় হয়।
নিজের নিজের ছোট ছোট বৃত্ত তৈরি করে অনেক খণ্ড যুক্তিজালে ‘নিত্যসত্য’ থেকে সরে আসছি আমরা। এ সময়ের প্রধান দায়িত্ব বোধহয় নিজেদের ভ্রম আর ছিদ্রগুলিকে খুঁজে বার করা, শোচনায় দগ্ধ হওয়া। যাতে অদূর ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারি।
একটি মৃত্যু, অনেক প্রশ্ন
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের করুণ মৃত্যু যে কোনও মানুষেরই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হন, তা হলে দুর্নামের জন্য তিনি সমান ভাবেই দায়ভাগ স্বীকার করবেন না কেন?
বি এড কোর্সে মনোবিজ্ঞান পড়ানো হয়। উদ্দেশ্য, ছাত্রছাত্রীর মানসিক অবস্থার সঙ্গে সহজেই পরিচিত হওয়া এবং সেই সঙ্গে প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ঐন্দ্রিলার ক্লাস টিচারদের কি তা হলে কোনও মনোবিজ্ঞান সম্মত ধারণা ছিল না? তা না হলে ক্লাশ করতে আসা ঐন্দ্রিলার চোখে-মুখে ফুটে ওঠা ভয়ার্ত ভাব কারওর নজরেই বা পড়বে না কেন?
সংশ্লিষ্ট স্কুলের অধ্যক্ষা দুঃখপ্রকাশ করে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ঠিকই, কিন্তু অনেক পরে। ভাঙচুরের দিন। মাতৃত্বের তাগিদে স্নেহে আপ্লুত হয়ে জেল থেকেই নিজের মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে অধ্যক্ষা উন্মুখ হয়েছিলেন (১৬-৯)। অথচ একমাত্র সন্তানের নির্মম মৃত্যুর পরেও তিনি কেন তার মাকে সান্ত্বনা দানে বিরত থাকেন?


মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়
কয়েকটি কথা বলতে চাই।
মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায় যে সাউথ পয়েন্টের সহ প্রতিষ্ঠাত্রী নন, সেটি প্রতিষ্ঠিত। শ্রীমিতেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য অনুযায়ী মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়কে সাউথ পয়েন্ট স্কুলে নিয়োগ করা হয় পত্র মারফত।
শ্রীগঙ্গোপাধ্যায়ের মতো আমারও হয়তো সাল তারিখ এখন ঠিক মনে নেই। সে জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে এটা আমার ঠিক মনে আছে যে, মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায় সাউথ পয়েন্টে ‘প্রথম থেকেই’ ছিলেন না। তখন স্কুলে ছিলেন তিন জন মাত্র শিক্ষিকা সবাই ইংরেজ। বোর্ডম্যান নামে দুই বোন ও শ্রীমতী রায়চৌধুরী (বিবাহ সূত্রে লব্ধ পদবি)।
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিভাগ থাকে। যথা, প্রাক্-প্রাথমিক (নার্সারি ও প্রেপ), প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক। এই সব বিভাগের প্রধানরা কিন্তু কেউই অধ্যক্ষ/অধ্যক্ষা নন। তাঁরা সবাই কাজ করেন সমগ্র প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ/অধ্যক্ষার তত্ত্বাবধানে।
মিলাডা গঙ্গোপাধ্যায়ের জ্ঞান বা অবদান সম্বন্ধে আমি কোনও প্রশ্ন তুলিনি। এক জন শিক্ষক হিসাবে অন্য কোনও শিক্ষককে, বিশেষত মাতৃস্থানীয়া শিক্ষিকাকে, হেয় প্রতিপন্ন করার অভিপ্রায় আমার কখনও ছিল না, এখনও নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.