সম্পাদকীয় ১...
অবশেষে
তেরো বছর পরে যে বিচার, বস্তুত বিচারের প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়, তাহাকে বিলম্বিত বিচার বলিলে সম্ভবত অত্যুক্তি হয় না। সাড়ে নয়শো কোটি টাকার পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত রাষ্ট্রীয় জনতা দল নেতা লালুপ্রসাদ যাদব বিশেষ সিবিআই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হইয়াছেন। তাঁহার সহিত অবিভক্ত বিহারের আর এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র সহ মোট ৪৫ জনই দোষী সাব্যস্ত। বহু টানাপড়েন, মুলতুবির পর মামলাটি সিবিআই আদালতে এবং বিহারের বাহিরে স্থানান্তরিত হয়। বিচারপ্রক্রিয়া চলা-কালে বেশ কয়েক জন সাক্ষীর মৃত্যুও হইয়াছে, যাহার সব কয়টি ঠিক স্বাভাবিক মৃত্যু বলিয়া গণ্য নয়। তবু, যত বিলম্বই হউক, শেষ পর্যন্ত ধর্মের কল যে নড়িয়াছে, তাহা তুচ্ছ করিবার নহে। এই রায়ে এই আশাটুকু জাগ্রত হইয়াছে যে, দুর্নীতিগ্রস্তরা যত ক্ষমতাশালীই হউন, তাঁহাদের শেষ পর্যন্ত সাজা পাইতে হইবে। আইনের চোখে যে সকলেই সমান, প্রভাবশালী রাজনীতিকরাও তাহার ঊর্ধ্বে নন, ইহা সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকাই যথেষ্ট নয়, বিচারব্যবস্থাকেও তাহা নিয়মিত প্রতিপন্ন করিতে হয়। লালুপ্রসাদ ও জগন্নাথ মিশ্রের মতো ওজনদার রাজনীতিককে দোষী সাব্যস্ত করিয়া আদালত সেই দায়বদ্ধতার প্রমাণও দিল।
লালুপ্রসাদ ইতিমধ্যেই জেলহাজতে প্রেরিত। তাঁহার সাংসদ-পদ যে পত্রপাঠ খারিজ হইতে চলিয়াছে এবং আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগও যে তিনি পাইবেন না, ইহা এক প্রকার নিশ্চিত। সন্দেহ করিবার কারণ আছে যে, তাঁহাকে বা তাঁহার মতো ওজনদার রাজনীতিকদের এই পদচ্যুতির আশঙ্কা হইতে বাঁচাইবার জন্যই কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার অর্ডিনান্স জারি করে। কিন্তু আপাতত সেই অধ্যাদেশ বিশ বাঁও জলে। লালুপ্রসাদের এই পরিণতি তাঁহার রাজনৈতিক গণভিত্তিকে কত দূর ক্ষতিগ্রস্ত করিবে, তাহা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। এ কথা ঠিক যে, তাঁহার অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় জনতা দল নির্বাচনী প্রচার জমাইতে পারিবে না। দলে দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব গড়িয়া তোলার কোনও প্রচেষ্টা দলিত-অনগ্রসরদের মসিহাস্বরূপ রাজনীতিকরা সচরাচর করেন না। বড় জোর নিজেদের সন্ততির হস্তে উত্তরাধিকার ন্যস্ত করেন। ইহা মুলায়ম সিংহ যাদবের ক্ষেত্রে যতটা, লালুপ্রসাদ যাদবের বেলাতেও ততটাই সত্য। তাই এখনই রাবড়ী দেবীর পাশাপাশি তাঁহার কনিষ্ঠ পুত্র তেজস্বী যাদবের নামও শুনা যাইতেছে। তাঁহাদের ওজন স্বভাবতই লালুপ্রসাদের সমান নয়।
তথাপি এই ধাক্কায় দলের নির্বাচনী নিয়তি ধাক্কা খাইবে, এমন বড় মনে হয় না। যাঁহারা আত্মপরিচয়ের রাজনীতি আঁকড়াইয়া থাকেন, তাঁহাদের নেতারা দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এমনকী খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধে অভিযুক্ত হইলেও কিংবা দোষী প্রমাণিত হইলেও তাঁহাদের জনসমর্থন সহসা হ্রাস পায় না। হয় তাঁহাদের অনুগামীরা ধরিয়া লন, তাঁহাদের নেতাকে অন্যায় ভাবে, ষড়যন্ত্র করিয়া উচ্চ বর্ণের রাজনীতিকরা ফাঁসাইয়াছেন, নতুবা কতকটা আত্মপ্রসাদের সঙ্গেই ইহা প্রচারিত হয় যে, দুর্নীতি-স্বজনপোষণে লিপ্ত হওয়ার একচেটিয়া অধিকার এতদ্দ্বারা উচ্চ বর্ণের নেতাদের হাত হইতে কাড়িয়া লওয়া হইতেছে, ইহাতে দোষের কী আছে? লক্ষণীয়, শিবু সোরেনের মতো দণ্ডিত জনজাতীয় নেতার ‘গুরুজি’ অভিধা তাঁহার অনুগামীদের কাছে অক্ষুণ্ণ থাকে এবং তিনি উপর্যুপরি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হইতে থাকেন, যত ক্ষণ না নিজের পুত্রকে সেই সিংহাসনে বসাইতেছেন। লালুপ্রসাদ যাদবও কি একই প্রক্রিয়ায় নিজে জেলে গিয়া সম্পূর্ণ অ-রাজনৈতিক স্ত্রী রাবড়ী দেবীকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বানান নাই? বিহারের জনসাধারণ তো সেই বন্দোবস্ত বিনা প্রশ্নে মানিয়াও লইয়াছিলেন। তাহার অর্থ অবশ্যই এই নয় যে, উচ্চবর্ণের রাজনীতিকদের দুর্নীতি-দোষ নাই। কিন্তু পরিচিতির রাজনীতি সমস্যাটিকে একটি বিশেষ মাত্রা দেয়। লালুপ্রসাদ তাহার এক প্রকট নজির।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.