গণহত্যার দায়ে এ বার বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র এক প্রভাবশালী শীর্ষ নেতাকে ফাঁসির আদেশ দিল ঢাকার আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। চট্টগ্রাম থেকে চার বারের
|
সাকা চৌধুরী |
সাংসদ। বিএনপি-র নীতিনির্ধারক স্থায়ী কমিটির সদস্য। বাংলাদেশ তাঁকে চেনে রাজাকার-শিরোমণি সাকা চৌধুরী নামে। হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন ও সংখ্যালঘু বিতাড়নের ন’টি মামলায় আদালত আজ তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করার পরে চট্টগ্রামের রাউজানে বাড়ি বাড়ি শাঁখ বেজেছে।
রায়কে স্বাগত জানিয়ে ঢাকার শাহবাগ ও চট্টগ্রামে বেরিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল। ও দিকে বিচারপতি রায় পড়ার সময়ে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আগাগোড়া বিদ্রূপের হাসি হেসেছেন সাকা চৌধুরী।
বিএনপি আমলে যে জাহাজ থেকে আলফার জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র চট্টগ্রামের জেটিতে নামানো হয়েছিল, তার মালিক ছিলেন এই সাকা চৌধুরী। তীব্র ভারত-বিরোধী এই বিএনপি নেতা অশালীন ও বিতর্কিত মন্তব্য করে বার বার প্রচারে এসেছেন। এমনকী তাঁর নিজের দলের মহিলা নেত্রী খালেদা জিয়াও সাকা-র অশালীন মন্তব্য থেকে রেহাই পাননি। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য দলও তাঁকে বিশেষ ঘাঁটায়নি। বিচারপতি আজ তাঁর রায়ে বসেছেন, চট্টগ্রামের গহিরা, জগতমহলাপাড়া, সুলতানপুর, বণিকপাড়া প্রভৃতি গ্রামে শত শত সংখ্যালঘু মানুষকে সাকা-র নির্দেশে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। |
রায় ঘোষণার পরে ঢাকায় আদালতের সামনে উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি। |
অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, “চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংখ্যালঘু বিতাড়নে সাকা চৌধুরী যে নৃশংস ভূমিকা নিয়েছিলেন, গণহত্যা চালানোর পরেও এত দিন যে ভাবে স্পর্ধা ভরে আস্ফালন করে গিয়েছেন বোধ হয় ভাবেননি কোনও দিন এই দিনটা আসবে। এই রায় জাতির কলঙ্কমোচন।” ১৯৭১-এ চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতনচন্দ্র সিংহের বাড়িতে হামলা করে পাক সেনা। দানবীর নামে পরিচিত নূতনচন্দ্রকে পাক সেনারা গুলি করার পরে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য গুলি করেন সাকা চৌধুরীও। এই অপরাধে আজ তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। নূতনচন্দ্রের ছেলে প্রফুল্লরঞ্জন সিংহ বলেন, “৪২ বছর পরে বাবার খুনি শাস্তি পেয়েছে, এর চেয়ে সুখবর আর কী হতে পারে! এ বার এই রায় কার্যকর হোক, যাতে অপরাধী তার প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে বেরিয়ে না আসতে পারে।”সাকা চৌধুরীর বাবা মুসলিম লিগ নেতা মেহবুব কাদের চৌধুরী অবিভক্ত পাকিস্তানে আইনসভার স্পিকার ছিলেন। কিছু দিন পাকিস্তানের অস্থায়ী প্রেসিডেন্টও ছিলেন। সাকা চৌধুরী দর্পের সঙ্গে বলেন “উত্তরাধিকার সূত্রে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার নামে পাকিস্তান ভাঙার বিরোধী। এ নিয়ে আমার কোনও খেদ নেই।” পাকিস্তানকে ভাগ করার জন্য তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবিও জানিয়ে এসেছেন। হুসেইন মহম্মদ এরশাদের আমলে কিছু দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকার পরে সাকা বিএনপি-তে যোগ দেন। গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি ছিলেন সংসদে বিরোধী দলের চিফ হুইপ।
সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায়ের পরে বিএনপি কাল চট্টগ্রাম ও রাঙামাটিতে হরতাল ডাকলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এমনকী দলের চট্টগ্রামের নেতারাও মুখ খুলতে চাননি। রাউজানে সাকা-র বাহিনী কয়েক জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করে। কিন্তু রায়কে স্বাগত জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশে অনেক বেশি মানুষ অংশ নেন। ফাঁসির রায় অবিলম্বে কার্যকর করার দাবিও জানানো হয়। |