এসএসকেএম
ইমার্জেন্সিতে চিকিৎসা নিখরচাতেই, নির্দেশ
মার্জেন্সি ওয়ার্ডে রোগী এসেছেন। তড়িঘড়ি তাঁর চিকিৎসা শুরু হল। দিতে হল ওষুধ, জীবনদায়ী ইঞ্জেকশন। চালু করতে হল অক্সিজেনও। কিন্তু এর কোনওটিই রোগীর পরিবারের লোককে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হল না। হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা নিজেদের মজুত সামগ্রী থেকেই সব কিছু দিয়ে দিলেন।
মনে হতে পারে, এটি হয়তো বা কোনও অভিনব বিষয়। আদতে মোটেই তা নয়। ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে প্রাথমিক চিকিৎসা নিখরচায় হওয়াটাই সরকারি নিয়ম। কিন্তু সমস্যা হল, প্রায় কোথাওই তা মানা হয় না। এ বার সেই পুরনো নিয়ম নতুন করে বলবৎ করতেই নির্দেশ জারি করতে হল এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
চলতি সপ্তাহেই সমস্ত বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে ইমার্জেন্সিতে কী কী জিনিস সব সময়ে মজুত রাখা দরকার, তার তালিকা তৈরি করবেন হাসপাতালের কর্তারা। শুধু তা-ই নয়, রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকেরাও যাতে নিজেদের এই ‘অধিকার’ সম্পর্কে সজাগ থাকেন, সেই কারণে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের সামনে বড় বোর্ড লাগানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এসএসকেএমের এই পদক্ষেপ যাতে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালগুলিও অনুসরণ করে চলে, ধাপে ধাপে তা নিশ্চিত করতে চান স্বাস্থ্যকর্তারা।
এই নিয়ম বহু হাসপাতাল না মানায় একাধিক বার বিতর্কের মুখে পড়েছে সরকারি স্বাস্থ্য-পরিষেবা। বছর চারেক আগে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই ধরনেরই একটি ঘটনার পরে সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তথা আর জি করের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অসীম দাশগুপ্ত এ ব্যাপারে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিলেন।
সরকারি হাসপাতালে ইমার্জেন্সি বিভাগে যে রোগীরা আসবেন, তাঁরা দরিদ্র হন বা ধনী, তাঁদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব যে হাসপাতালেরই, সে কথা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ ছিল ওই নির্দেশিকায়। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি।
সব সরকারি হাসপাতালে যা পাওয়া আদতে রোগীর অধিকার, তা নিশ্চিত করার জন্যই আলাদা করে নির্দেশ জারি কেন করতে হল? স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব পার্থজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ইমার্জেন্সিতে রোগীর কোনও খরচ হওয়ার কথাই নয়। সাধারণ ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার পুরোটাই হাসপাতালের বহন করার কথা। তবে ভর্তির ক্ষেত্রে যদি রোগী বিপিএল তালিকাভুক্ত হন, তা হলে তিন দিনের মধ্যে তাঁকে সেই শংসাপত্র পেশ করতে হয়। তা হলে তিনি ফ্রি বেড পান। এই বিষয়টি সম্পর্কে হাসপাতালের সব স্তরের কর্মীরই অবহিত হওয়ার কথা।”
এসএসকেএমের ইমার্জেন্সিতে রোগী হয়রানি সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। কী ধরনের অভিযোগ? যেমন, পা ভাঙার যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে রোগী পৌঁছেছেন হাসপাতালে। তাঁর পরিবারের লোককে বলা হয়েছে, প্লাস্টারের সরঞ্জাম কিনে আনুন, তার পরে প্লাস্টার হবে। কিংবা মাথা ফেটে গিয়েছে, বলা হয়েছে, সেলাইয়ের সুতো বাইরে থেকে না আনলে ক্ষতস্থানে সেলাই করা যাবে না। একই রকম ভাবে শ্বাসকষ্টের রোগীর প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, পোড়ার মলম কিংবা সাধারণ স্যালাইনও প্রায় সব সময়েই কিনে আনতে বলা হয়। ফলে অনেকটা সময় তো নষ্ট হয়ই, উপরন্তু দুর্ঘটনা বা ওই জাতীয় কোনও ক্ষেত্রে আহতের সঙ্গে অনাত্মীয় কেউ থাকলে সরঞ্জাম কে কিনবেন, সে নিয়েও প্রায়ই টালবাহানা শুরু হয়। এর ফলে বহু রোগীর চিকিৎসা দেরিতে শুরু হয়েছে। যার জেরে কখনও কখনও রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও উঠেছে।
এসএসকেএম তথা ‘ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’ (আইপিজিএমইআর)-এর অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে এলে রোগীকে ওষুধ বা সরঞ্জাম কিনে আনতে বলা তো এক ধরনের অপরাধ। এটা কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা খবর পাচ্ছিলাম, কিছু চিকিৎসক এবং নার্স রোগীদের হাতে স্লিপ ধরিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ অথবা ইঞ্জেকশন কিনে আনতে বলছিলেন। যা বাইরে থেকে কিনতে বলা হচ্ছে, তার প্রায় সবই কিন্তু হাসপাতালে থাকে। আর যদি না-ও থাকে, তা হলে আগাম সেটা জানাতে হবে যাতে তা কিনে রাখা যায়। রোগীর প্রাপ্য তাঁকে দিতেই হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.