|
|
|
|
ত্রিফলা বাতির ভিড়েও আঁধার দিঘার বাজার |
সুব্রত গুহ • দিঘা |
প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। একদিকে যখন লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তাজপুর সৈকত যাওয়ার রাস্তা আলোকিত করার জন্য পথবাতি বসাচ্ছে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। তখন দিঘার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা বলে পরিচিত নেহরু মার্কেট ডুবে রয়েছে অন্ধকারে। দীর্ঘ কয়েক দশকের পুরনো নেহরু মার্কেটে কোনও আলোর ব্যবস্থাই করে উঠতে পারেনি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। নেহরু মাকের্ট ব্যবসায়ী মহল বারবার পর্ষদের কাছে আলোর ব্যবস্থা করার জন্য স্মারকলিপি দিলেও কাজ হয়নি।
দিঘা থানা ও ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত নেহরু মার্কেট প্রায় সাড়ে চারশোর মতো বিভিন্ন খুচরো ও পাইকারি দোকান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে সবজি ও মাছের বাজার। নেহরু মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মনতোষ জানা জানান, গোটা মার্কেটে ২৯২টি স্টল ছাড়াও বিশাল চত্বর জুড়ে দৈনন্দিন বাজার নিয়ে বসেন দেড়শো জনেরও বেশী ব্যবসায়ী। বাজারে কোনও আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পর শুধু ব্যবসায়ীদের নিজস্ব দোকানের আলোয় চারিদিকে আলো আঁধারি পরিবেশ তৈরি হয়। তার মধ্যেই কেনাবেচার কাজ চালিয়ে যেতে ব্যধ্য হন ব্যবসায়ীরা। রাতে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে চলে যাওয়ার পর গোটা মাকের্ট এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। দিঘা শহর জুড়ে ত্রিফলা বাতির আলোর রোশনাইয়ের মধ্যে অন্ধকারে ডুবে নেহেরু মাকের্ট যেন একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। অন্ধকারে এলাকা জুড়ে এমন আতঙ্কের আবহ তৈরি হয় যে ব্যবসায়ী সমিতির নৈশ প্রহরীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। |
|
নেহরু মার্কেটে আলো আঁধারি পরিবেশে চলছে কেনাকাটা।—নিজস্ব চিত্র। |
মনতোষবাবুর অভিযোগ, “নেহরু মাকের্ট ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে মার্কেটে আলোর ব্যবস্থা করার জন্য একাধিকবার উন্নয়ন পর্ষদে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কোনও কাজ হয়নি।” মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের কথায়, দিঘা রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হওয়ার সুবাদে সারাবছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। আলো না থাকায় মার্কেটে রাতের অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি দিঘা মোহনাতে ওড়িশার এক ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনার পর থেকেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। নেহরু মার্কেট সহ গোটা দিঘা শহর জুড়ে রাতে পুলিশের নজরদারি চললেও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েই গেছে। শুধু তাই নয়, মার্কেটে নিকাশির ব্যবস্থাও না থাকার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু জলে ডুবে যায় গোটা মার্কেট এলাকা। দিঘার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একদিকে গোটা মার্কেট জুড়ে ভ্যানরিকশা, সাইকেল আর মোটর সাইকেলের দাপাদাপি আর ব্যবসায়ীরা দোকান ছেড়ে প্রায় রাস্তা দখল করে দোকানের পসরা সাজিয়ে রাখায় চলাফেরা করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
নিরাপত্তার কারণেই মার্কেটে আলোর ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন বলে স্বীকার করছেন দিঘা থানার ওসি অজিত ঝা। অবশ্য দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পষর্দের নির্বাহী আধিকারিক সৌমেন পাল নেহরু মার্কেটে আলো না থাকা ও বেহাল পরিস্থিতির জন্য মার্কেটের ব্যবসায়ীদেরই দায়ী করেছেন। সৌমেনবাবু বলেন, “নেহরু মার্কেটে আগে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই আলো দীর্ঘসময়ে নষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও আলোর ভাড়া বাবদ পর্ষদের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। বার বার তাগাদা দিলেও নেহরু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সেই টাকা দীর্ঘদিন বকেয়া ফেলে রেখেছেন। পর্ষদের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বকেয়া টাকা মেটালে তবেই নেহরু মার্কেটে আলোর ব্যবস্থা করা হবে।” সৌমেনবাবু জানান, পর্ষদের বতর্মান আর্থিক পরিস্থিতিতে এতো টাকা বকেয়া রেখে মার্কেটে আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। অন্য দিকে, সৌমেনবাবুর বক্তব্য মানতে রাজি নন মনতোষবাবু। তিনি বলেন, “পষর্দের জটিলতার কারণেই দীর্ঘদিন ভাড়া আদায় বন্ধ ছিল। নেহরু মার্কেটে প্রথমে স্কোয়ার ফুট হিসেবে ভাড়া ২০ থেকে ৫০ পয়সা থাকলেও পর্ষদ একলাফে সেই ভাড়া ২০ থেকে ২৫ গুন বৃদ্ধি করেছে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ তা দেওয়া অসম্ভব বলে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন তাঁরা। পরে পষর্দের সঙ্গে বৈঠকের পর ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যবসায়ীরা মেনে নিলেও পড়ে থাকা বকেয়া ভাড়া এক সাথে মেটানো সম্ভব নয়। তাই আস্তে আস্তে বকেয়া ভাড়ার টাকা পষর্দকে দেওয়া হচ্ছে।”
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সৈকত শহর দিঘাকে যখন গোয়ার মতো করে তৈরি করার চেষ্টা ছলছে। তখন উন্নয়ন পর্ষদ আর ব্যবসায়ীদের কাজিয়ায় দিঘার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেহরু মাকের্টের এমন বেহাল অবস্থায় শুধু স্থানীয় বাসিন্দারাই নন, দিঘায় বেড়াতে আসা পযর্টকরাও বিস্মিত। |
|
|
|
|
|