এত দিন সংবাদপত্রে বা টিভিতে দেখেছি শহরের রাস্তায় শ্লীলতাহানি ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। কিন্তু আমার উপরেও যে এ রকম হামলা হতে পারে, তা কল্পনাতেও ছিল না। সেটাই ঘটল রবিবার রাতে, কালিকাপুরে। আমার বাড়ির খুব কাছেই। ঘটনার কথা ভেবে আমি এখনও আতঙ্কিত। আমাকে তো প্রতি দিন অফিস যেতেই হবে। ছাড়া পেয়ে ওরা আমার ক্ষতি করবে না তো!
গত তিন বছর ধরে মিন্টো পার্কের একটি মোবাইল সংস্থার অফিসে কাজ করি। প্রতি দিনের মতো রবিবারও রাত পৌনে ন’টা নাগাদ অফিস থেকে বেরোই বাড়ি ফেরার জন্য। যখন অফিস থেকে বেরিয়ে বাসে উঠলাম, তখনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। সাড়ে ন’টার কিছু পরে যাদবপুর থানার কাছে বাস থেকে নেমে কালিকাপুরের অটো ধরি। বাড়িতে বলে এসেছিলাম রাতের খাবার কিনে আনব। সেই মতো আমি প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টরের পূর্বাচল বাসস্টপে অটো থেকে নেমে পড়ি। তখনও বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তা ফাঁকা। কালিকাপুর বাজারে সব দোকান বন্ধ থাকায় ভিতরের রাস্তা দিয়ে কালিকাপুর মোড়ে যাই। সেখানেও দোকান বন্ধ। ফের প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টর দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হই। মোবাইলে ঘড়ি দেখলাম, রাত ন’টা পঞ্চান্ন। বাড়িতে মা-বাবা চিন্তা করবে বলে জোরে হাঁটতে শুরু করলাম।
বৃষ্টি পড়ে চলেছে। রাস্তা ফাঁকা। পাশ দিয়ে দ্রুত গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি, একটি সাইকেলে দু’জন আসছে। আনোয়ার শাহ কানেক্টর থেকে আমাদের বাড়ি যেতে হলে কালিকাপুর এসবিআই-এর সামনে দিয়ে যেতে হয়। তার আগে পুরসভার একটি ভ্যাট রয়েছে। ওই জায়গা পার হওয়ার সময়ে হঠাৎ টের পেলাম, এক সাইকেল আরোহী আমার শরীরে হাত দিচ্ছে। অন্য জন সাইকেলের পিছনে বসে রয়েছে।
খুব ঘাবড়ে যাই। এর পরে চিৎকার শুরু করি। ফাঁকা রাস্তায় চিৎকার শুনে কেউ আসেননি। এর মধ্যে দেখি, ওই দু’জন কালিকাপুরে রোডের দিকে চলে গেল। আমিও ওদের ধাওয়া করি। তখনই দেখি, গরফা থানার দুই পুলিশকর্মী মোটরবাইকে চেপে আমার দিকে আসছেন। আমাকে দৌড়তে দেখে ওঁরা জিজ্ঞাসা করেন, কী হয়েছে? আমার কথা শুনে ওই দুষ্কৃতীদের খোঁজ শুরু করেন তাঁরা। এর মধ্যেই আমি মা-বাবাকে ফোন করে রাস্তায় আসতে বলি। কালিকাপুর রোডে কিছুটা দূরে যাওয়ার পরেই দেখি, এক জনকে ধরে ফেলেছে পুলিশ। রাস্তার পাশে একটা সাইকেলও পড়ে। আমি পুলিশকে বলি, ওই ছেলেটাই আমার শ্লীলতাহানি করেছে। এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে আমার মা-বাবা ও ভাই চলে এসেছে। ধৃত ছেলেটাকে নিয়ে গরফা থানায় চলে যায় পুলিশ। পরে আমি বাবাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করি।
এই ঘটনা কখনও ভুলব না। ফাঁকা রাস্তায় একা হেঁটে যেতে আমার ভয় করছে। বাবা-মাও আমাকে আর একা ছাড়তে চাইছেন না। কিন্তু অফিসে তো যেতেই হবে। তাই ঠিক করেছি, অফিস থেকে ফেরার সময়ে বাবা, মা বা ভাইকে বলব রাস্তায় এসে দাঁড়াতে।
কলকাতা শহরে এত ভয়ে ভয়ে যাতায়াত করতে হবে, আগে ভাবিনি।
|
শহরে ফের ‘যৌন নিগ্রহ’
নিজস্ব সংবাদদাতা |
শুক্রবার রাতে পার্ক স্ট্রিটের পানশালায় শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন এক তরুণী। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার ই এম বাইপাস লাগোয়া কালিকাপুরে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করলেন অফিস-ফেরতা কুড়ি বছরের এক তরুণী। পুলিশি তৎপরতায় অবশ্য ওই রাতেই ধরা পড়েছে এক দুষ্কৃতী। পুলিশ জানায়, রবিবার রাত দশটা নাগাদ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টরের কালিকাপুরে সাইকেল আরোহী এক যুবক পিছন থেকে এসে ওই তরুণীর শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ। গরফা থানার টহলরত দুই পুলিশকর্মী তাঁর চিৎকার শুনে ধাওয়া করে এক অভিযুক্তকে ধরেন। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম বিশ্বজিৎ মণ্ডল। তার বাড়ি সার্ভে পার্ক থানা এলাকায়। তরুণীর বাবা সোমবার জানান, ওই ঘটনায় আতঙ্কিত হলেও তাঁরা পুলিশের উপরে ভরসা রাখছেন। তাঁর দাবি, আবার একই রকম ঘটনা ঘটলে তাঁর মেয়ে ফের প্রতিবাদ করবেন। |