পুজোর মরসুমে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা ঠিকঠাক মেটানোর লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উৎসবের দিনগুলোয় নিজস্ব উৎপাদন ও সরবরাহ যাতে অব্যাহত থাকে, সে জন্য রক্ষণাবেক্ষণের পালা তো চলছেই, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থা থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ কেনার বন্দোবস্তও প্রায় সারা।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোয় বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা সামাল দিতে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি) এবং ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন (এনএইচপিসি)-সহ বিবিধ সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার বন্দোবস্ত করে রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে ভুটানি জলবিদ্যুৎ কেনা হবে বেশি পরিমাণে।
বিদ্যুৎ দফতর-সূত্রের খবর: সপ্তমীর দিন কাজ হয়ে অধিকাংশ অফিস, কল-কারখানা ছুটি হয়ে যায় বলে তার পরে পুজোর বাকি দিনগুলোয় চাহিদা খানিকটা কমে যায়। তবে পঞ্চমী থেকে সপ্তমী তিন দিনে চাহিদা থাকে তুঙ্গে। কারণ তখন অফিস-কাছারি যেমন খোলা থাকে, তেমন মণ্ডপে আলোকসজ্জাও চোখ ধাঁধাঁতে থাকে।
সেই বাড়তি চাহিদা মোকাবিলা করতেই বাজার থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ আনতে হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত।
দফতরের খবর: পুজো কমিটিগুলোর আবেদনের ভিত্তিতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি হিসেব কষে দেখেছে, সিইএসসি-এলাকা ধরে পুজোর ক’দিন সারা পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের মোট চাহিদা দাঁড়াবে ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এর মধ্যে শুধু পুজোকমিটিগুলিকে বিদ্যুৎ জোগাতেই লাগবে অন্তত তিন হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ রাজ্যকে পুজোর বিশেষ ক’টি দিনে গড়ে অতিরিক্ত তিন হাজার মেগাওয়াটের সংস্থান রাখতে হবে। |
পুজোর আলো |
|
সর্বজনীনের সংখ্যা
সাধারণ দিনে চাহিদা*
পুজোয় মোট চাহিদা*
পুজোকমিটির চাহিদা*
|
গোটা রাজ্য |
সিইএসসি এলাকা |
২৬১৭০টি
৩০০০
৬০০০
৩০০০
|
৩৬০০টি
১৬০০
১৮৫০
২৫০
|
* গড় হিসেব, মেগাওয়াটে
সূত্র: রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর |
কোন দিন |
কত চাহিদা* |
পঞ্চমী |
৫৯০৮ |
ষষ্ঠী |
৫৯৫৮ |
সপ্তমী |
৫৭০৮ |
অষ্টমী |
৫০০৮ |
নবমী |
৪৭৮৩ |
দশমী |
৪৬২৩ |
|
|
সেটাই পাওয়া যাবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা থেকে। উপরন্তু বাড়তি বিদ্যুৎ আসবে ‘পাওয়ার ব্যাঙ্কিং’-এর সুবাদেও। অর্থাৎ, বছরের নানা সময়ে পশ্চিমবঙ্গ তার যে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ অন্যান্য রাজ্যকে দিয়ে রেখেছে, পুজোর মরসুমে তা নিজের ঘরে ফেরত আনা হবে। “ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলোকে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকেও অবহিত করা হয়েছে।” বলেন মণীশবাবু। তাঁর যুক্তি, “গৃহস্থবাড়ি, অফিস-কারখানার সঙ্গে সঙ্গে পুজো মণ্ডপের চাহিদাও মেটাতে গেলে নিজেদের উৎপাদনের সঙ্গে কিছু বিদ্যুৎ বাজার থেকে কিনতেই হবে। ঠিক যে ভাবে গ্রীষ্মের চাহিদা মেটাতে বাইরের বিদ্যুৎ কেনার আগাম ব্যবস্থা করে রাখতে হয়।”
সিইএসসি-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সাধারণ সময়ে তাঁদের সরবরাহ এলাকায় বিদ্যুতের যা চাহিদা, পুজোর প্রথম ক’দিনে তা গড়ে আড়াইশো মেগাওয়াট বাড়বে। তা মেটাতে অন্তত ৮০০ মেগাওয়াট তাঁরা বণ্টন সংস্থার কাছ থেকে কিনবেন। তবে সিইএসসি ও বণ্টন দু’তরফেরই দাবি, মণ্ডপের আলোকসজ্জায় ইদানীং বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী আলোর চল দেখা যাচ্ছে। ফলে অনেক বড় পুজোয় প্রচুর আলো লাগানো হলেও তাদের বিদ্যুৎ চাহিদা সার্বিক ভাবে খুব বেশি বাড়েনি।
এ দিকে পুজোয় রাজ্যের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহে যাতে কোনও বিঘ্ন না-ঘটে, সে জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দফতরের দাবি। বণ্টন-সূত্রের খবর, পুজোর ক’দিন বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। ইঞ্জিনিয়ার-অফিসারদের নিয়ে নজরদারি দলও তৈরি। সরবরাহে যান্ত্রিক ত্রুটি এড়াতে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে জোর কদমে। নির্দেশ অনুযায়ী, আজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ-পর্ব সেরে ফেলার কথা।
এর পরেও যদি উৎপাদনে কিছু বিভ্রাট ঘটে? বা বাইরে থেকে প্রতিশ্রুত বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়া না যায়?
মণীশবাবু জানিয়েছেন, সামান্য ঘাটতি হলে পুরুলিয়া জলবিদ্যুৎ
কেন্দ্র (পুরুলিয়া পাম্পড স্টোরেজ) থেকেও বিদ্যুৎ আনা হবে। সেটিকে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হবে পুজোর আগেই। “দরকার
পড়লে শুধু পুরুলিয়াই ৮০০-৯০০ মেগাওয়াট দেবে। ডিভিসি-কেও বলা আছে। প্রয়োজনে তাদের কাছে আড়াইশো মেগাওয়াট পাওয়া যাবে,” আশ্বাস বিদ্যুৎমন্ত্রীর। |