দু’সপ্তাহ পরেই দুর্গাপুজো। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা শিল্পী, আলোর যাদুকর কারওরই দম ফেলার ফুরসত নেই। শুরু হয়ে গিয়েছে উত্সবে মেতে ওঠার কাউন্ট ডাউন। কিন্তু বিভিন্ন মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়বে যার হাত ধরে সেই পথই শারদোত্সবের মুখে মাথাব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহকুমাশহর বসিরহাটের। শুধু রাস্তার কারণেই উত্সবের আনন্দ অনেকটাই মাটি হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা যানচালক থেকে বিভিন্ন পুজো কমিটি এমনকী সাধারণ মানুষেরও।
সুন্দরবন এলাকার এই মহকুমা শহরের বড়, ছোট প্রায় সমস্ত রাস্তারই দিনের পর দিন সংস্কারের অভাবে শোচনীয় দশা। বিভিন্ন রাস্তা ভেঙে গিয়ে ডোবার আকার নিয়েছে। যে সব রাস্তায় পিচ ছিল, তার অধিকাংশেই পিচ উঠে নীচের ইটের খোয়া মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। কিছু জায়গায় সংস্কারের নামে ইট পেতে গর্ত বুজিয়ে কোনওরকম তাপ্পি মেরে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হলেও তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি, তার প্রমাণ দুর্ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুরসভার ক্ষমতা দখল নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি যতটা ব্যস্ত থাকে, পুরপরিষেবা নিয়ে তার সিকিভাগ সময়ও খরচ করে না। কমল পালিত, গোবিন্দ মণ্ডল, পূর্ণিমা চক্রবর্তীর মতো পুরবাসীর অভিযোগ, নাগরিক পরিষেবা নিয়ে কোনও দলের নেতাদেরই মাথা ঘামাতে দেখা যায় না। আর তাই বেহাল রাস্তা সংস্কারে কেউ উদ্যোগী হয় না। শুধু রাস্তাই নয়, পরিকল্পনাহীন নিকাশি ব্যবস্থার জন্য শহরের যত্রতত্র জল জমার সমস্যাও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। |
রাস্তা নিয়ে মানুষের ক্ষোভের কথা স্বীকার করলেও পূর্ত দফতরের দাবি, শহরের মধ্যে দিয়ে ইছামতী নদী বয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নিকাশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ায় রাস্তার জমা জল নদীতে পড়ে না। পাশাপাশি রাস্তার নীচে দিয়ে যাওয়া জলের পাইপ লাইন বহু জায়গাতেই ফেটে গিয়েছে। তার উপর আবার সীমান্ত বাণিজ্যের জন্য ৪০-৫০ টন মালবোঝাই ট্রাক যাতায়াতের ফলে রাস্তা ক্রমশ খারাপ হয়েছে।
বসিরহাট মহকুমা হাসপাতাল, বেলতলা, জামরুলতলা, শ্মশানঘাট, পুরাতন বাজার, থানা, বৌবাজার এবং ত্রিমোহিনী এলাকায় ইটিন্ডা রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। মার্টিন বার্ন রোডে পূর্ণচন্দ্র গার্লস হাইস্কুলের কাছে, এসএন মজুমদার রোডে সাঁইপালা এলাকায়, হরিমোহন দালাল গার্লস হাইস্কুলের কাছে এবং টাকি রোডে ত্রিমোহিনী থেকে ফাল্গুনী হয়ে হরিশপুর এলাকায় রাস্তার অবস্থা রীতিমত করুণ।
জাতীয় পাঠাগার ব্যায়ামপীঠ পুজো কমিটির তরফে জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “রাস্তার যা হাল, মণ্ডপে ঠাকুর আনার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন পুজোর উদ্যোক্তারা। অবিলম্বে না সারালে পুজোয় ভগতে হবে দর্শনার্থীদের।” মুন ক্লাবের অনুপম সাহা বলেন, “সারা বছর ধরে মানুষ পুজোর দিনগুলোর জন্য অপেক্ষা করে। ঠাকুর দেখবে, আনন্দ করবে। কিন্তু রাস্তার যা অবস্থা, তাতে আনন্দ না নিরানন্দে পরিণত হয়।”
বাদুড়িয়া আনারপুর প্রতিদ্বন্দ্বী সঙ্ঘের তরফে পলাশ মল্লিক বলেন, “বাদুড়িয়া বাজার এলাকায় যা অবস্থা তাতে পুজোর বাজার করতে গিয়ে জলকাদায় নাজেহাল হচ্ছে মানুষ।”
পুর কর্তৃপক্ষ রাস্তার শোচনীয় হালের জন্য ভারী ট্রাক চলাচলকেই দায়ী করেছেন। সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, “রাস্তা সারানো নিয়ে পুরসভার কতটা মাথাব্যাথা তা পুরবাসী ভালই বুঝতে পারছেন।” কংগ্রেসের পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার বলেন, “পুরসভার অধীনে যে সব রাস্তা রয়েছে, সেগুলি সংস্কারের জন্য টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। কাজ দ্রুত শুরু হবে।” মহকুমা পূর্ত দফতরের সহকারী বাস্তুকার তপন নস্কর বলেন, “আপাতত ইট ফেলে রাস্তা মেরামতি শুরু হয়েছে। আশা করছি পুজোর আগে কাজ শেষ করা যাবে।” |