|
|
|
|
বাকিটা সবার জন্য |
সৃজিত মুখোপাধ্যায় এ ছবির পরিচালক নন। অভিনয়ও করেননি। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ কেবল
পরিবেশনা করেছেন। বলিউডের ট্রেন্ড চলে এল টালিগঞ্জেও। লিখছেন সংযুক্তা বসু |
সত্যিকারের প্রেমিক বা প্রেমিকা খুঁজছেন?
তা হলে এ বার পাবেন। চলুন সবুজ গাছগাছালি-ধানখেত ঘেরা মোহিনী গ্রামে। গ্রামবাসীরা প্রেমের কথা বলে, প্রেমের গান গায়।
|
সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
কী করে যাবেন? সেটা জানতে গেলেই তো দেখতে হবে প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য পরিচালিত ছবি ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’। এ ছবির নায়ক ঋত্বিক চক্রবর্তীর জীবনেও প্রেম ছিল না। তাই তিনি ঠিক করে ফেললেন নানা মানুষের প্রেম নিয়ে তথ্যচিত্র বানাবেন। ছবি বানাতে গিয়েই পৌঁছে গেলেন মোহিনী গ্রামে। খোঁজ পেলেন প্রেমের।
ইতিমধ্যে আপনারা কেউ কেউ ছবিটা দেখে ফেলেছেন। আর যাঁরা দেখেননি তাঁরা প্রোমো আর রাস্তার পোস্টার দেখে জেনে গিয়েছেন এই ছবির নিবেদক পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
আসল কথা হল, ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ ছবি বা বিভিন্ন প্রযোজকের ক্ষুদ্র বিনিয়োগ যোগ করে অল্প বাজেটে তৈরি স্বাধীন পরিচালকদের ছবিতে দর্শকদের নজরে আনার জন্যই বড় কোনও পরিচালক বা অভিনেতার নামে ব্র্যান্ডিং করা ইদানীং একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যেমন ভাবে বলিউডে মহেশ ভট্ট, অনুরাগ কাশ্যপ, আমির খান, কিরণ রাও, কর্ণ জোহররা একের পর এক অখ্যাত পরিচালকের ছবি উপস্থাপনা করেছেন, ঠিক সে ভাবেই সৃজিতও ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ ছবিটা উপস্থাপনা করেছেন।
সম্প্রতি ‘শিপ অব থেসিয়াস’ উপস্থাপনা করেছেন কিরণ রাও। আর ‘দ্য লাঞ্চবক্স’ ছবির অন্যতম উপস্থাপক কর্ণ জোহর। সেই প্রসঙ্গ টেনেই সৃজিত বললেন, “অল্প বাজেটে ডিজিটাল ক্যামেরায় অনেক ভাল ভাল বাংলা ছবিও তৈরি হচ্ছে এখন। কোনও কোনও ছবি উৎকর্ষের গুণে পুরস্কারও পাচ্ছে। কিন্তু আমি নিজেই জানি অন্তত খান দশেক এমন ভাল ছবি যা শুধু চেনা-পরিচিতির অভাবে বা প্রযোজকের টাকাপয়সার টানাটানির জন্য রিলিজ হচ্ছে না। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ সেই রকমই একটা ছবি যা দেখে আমার মনে হয়েছিল এ ছবিটা রিলিজ হওয়া উচিত। গল্পের মধ্যে একটা সরল জাদুবাস্তবের ছোঁয়া আছে। মনে হল আমার যতটুকু নামযশ হয়েছে তারই ব্র্যান্ডিংয়ে ছবিটা উপস্থাপনা করলে হয়তো দর্শক হলে আসবেন।” |
|
‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ ছবিতে ঋত্বিক চক্রবর্তী ও অপরাজিতা ঘোষ দাস। |
ছবির প্রযোজক সংস্থার অন্যতম কর্ণধার সত্রাজিৎ সেনের বক্তব্য, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ শুধুমাত্র শ্যুটিং হয়ে পড়ে ছিল। তাঁরা ছবিটা কিনে নিয়ে শেষ করেন। এই শেষ পর্বে ছবির দৈর্ঘ্য কেমন হবে, বিপণন এবং প্রচার কী ভাবে হবে এ সবই সৃজিত দেখেছেন। বললেন, “ভবিষ্যতে যদি পরিচালকদের দিয়ে এ ভাবে ছবি নিবেদন করানো হয়, তা হলে তাঁদের পারিশ্রমিক দেওয়ার একটা ব্যাপার আসতেই পারে। কারণ তাঁরাও তো পেশাদার। মূল্যবান সময় দিয়ে ছবির তত্ত্বাবধানের কাজ করবেন।”
তবে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সৃজিতই যে সর্বপ্রথম এমনটা করলেন তা নয়। এর আগে ‘ইচ্ছে’ ছবি নিবেদন করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। তিনি বলছেন, “‘ইচ্ছে’র গল্প ব্যতিক্রমী মনে হয়েছিল বলেই প্রযোজক খোঁজা থেকে প্রচার সবেতেই ছিলাম।’’ অন্য দিকে ‘একটি তারার খোঁজে’ ছবির অন্যতম প্রযোজক ও একক উপস্থাপক ছিলেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। এই বার সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় পরিচালক, ছবি নিবেদনের সেই ট্রেন্ডটাকে আরও যেন জোরালো করে তুলে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিলেন উপস্থাপকের ভূমিকাকে।
তা হলে এর পর থেকে কি এই ভাবেই বাক্সবন্দি ছবি রিলিজ করানোর জন্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন সিনেমা জগতের বিশিষ্টরা? পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “কেন নয়? করতেই পারি আমরা এই কাজ। যদি আগাগোড়া জড়িয়ে থাকতে পারি।” ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের পক্ষ থেকে মহেন্দ্র সোনি বললেন, “হ্যাঁ, এই রকম একটা ট্রেন্ড আসতে চলেছে। কোনও বিখ্যাত মানুষ ছবি উপস্থাপনা করলে দর্শক বুঝতে পারেন সেই ছবিটা দেখতে যাওয়া উচিত। উপরন্তু তাঁরা বিপণন কেমন ভাবে হবে সে ব্যাপারে অনেক রকম মূল্যবান পরামর্শও দিতে পারেন।”
কিন্তু অবাক হতে হয় একটা জায়গায় যে, ‘অটোগ্রাফ’ থেকে ‘২২শে শ্রাবণ’, ‘মিশর রহস্য’ থেকে ‘জাতিস্মর’সৃজিত নিজের প্রায় সব ছবিতেই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মতো সুপারস্টারকে নিয়েছেন। সেই তিনিই কেন প্রায় তারকাবিহীন ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’র মতো ছবির পৃষ্ঠপোষকতা করছেন?
প্রশ্নের উত্তরে সৃজিত যা বললেন তার সারমর্ম হল এই যে, চিত্রনাট্যের প্রয়োজনেই প্রসেনজিতের মতো সুপারস্টারের প্রয়োজন হয়েছে। বললেন, “কিন্তু ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’র চিত্রনাট্য এবং ট্রিটমেন্ট এমন যে অনামা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের উপস্থিতিতেই ছবিটা উচ্চতা পেয়েছে। এই রকম একটা ছবি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকবে? কেউ দেখবেন না? তা তো হয় না। বারবার সুপারস্টার নিয়ে কাজ করলেও আমার ছবির আসল ভগবান কিন্তু চিত্রনাট্য।”
তাঁর মতে, চিত্রনাট্যের জায়গাতেই জিতে গেছে এ ছবি। গান আর ক্যামেরার আলোছায়াও সুন্দর। ভাল গল্পের ছবি পেলে আবারও নিবেদকের ভূমিকা নেবেন তিনি। তাতে ভাল দর্শক তৈরি হয়ে বাংলা ছবির বাজার বাড়বে। |
|
|
|
|
|