পুজোর বাজারে বিপণনে
নেমেছে স্বাস্থ্য-পরিষেবাও
পুজোর সময়ে শাড়ি-জামাকাপড়, গয়নাগাঁটি, বেড়ানোর প্যাকেজ, আসবাবপত্র কিংবা ফ্রিজ-টিভির মতো নানা জিনিসের রমরমা ব্যবসা হতে পারলে বেসরকারি হাসপাতাল কেন বসে বসে মার খাবে? তাই শহরের তাবড় বেসরকারি সব হাসপাতাল কোমর বেঁধে প্রচারে নেমে বলছে ‘পুজোয় আসুন হাসপাতালেও!’
উৎসবের মরসুমে হাসপাতালের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে চান না কেউই। মা দুর্গার সঙ্গে হাসপাতালের দূরতম যোগসূত্র থাকার কথাও আপাত ভাবে কল্পনা করা যায় না। কিন্তু কলকাতার বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, চিকিৎসা পরিষেবাকে ‘সেবা’ হিসেবে ধরা হলেও আখেরে তো তাঁরা দাতব্য চিকিৎসালয় খোলেননি। ব্যবসা করতে এসেছেন এবং তাতে রীতিমতো লাভ দরকার। তাই ‘সময় বুঝে’ ব্যবসা বাড়িয়ে নেওয়া এবং গ্রাহকের কাছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে ভবিষ্যৎ ব্যবসার পথ প্রশস্ত করার সুযোগ হারাতে তাঁরা রাজি নন। বছরের এই সময়ে সকলেরই নানা খাতে খরচের বরাদ্দ বাড়ে। তাই হাসপাতালগুলিও দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে ব্যবসা বাড়ানোর নতুন সব পরিকল্পনা করছে।
কলকাতার বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল এ বছর ‘পুজো স্পেশ্যাল’ বিভিন্ন হেল্থ প্যাকেজ দিয়ে মুনাফা লোটার প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়েছে। তাদের যুক্তি, ডেন্টাল ক্লিনিকগুলি পর্যন্ত ‘পুজোয় হাসুন ঝকঝকে দাঁতে’ জাতীয় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। পুজোর আগে যদি ত্বকের জন্য ফেশিয়াল করানো যায়, চুলে স্পা করা যায়, তা হলে হেল্থ চেক-আপ করে হৃদয়, ফুসফুস, পেট, রক্ত ভাল আছে কি না দেখা যাবে না কেন? বিজ্ঞাপন জগতে দীর্ঘদিন থাকা, বর্তমানে চিত্রপরিচালক অনীক দত্তেরও বক্তব্য, “পুজোর আগে থেকেই মানুষ একটু ছুটির মেজাজে থাকে। তখন তাঁদের হাতে টাকাও থাকে। এই সময়ে মানুষ শরীরে-মনে চাঙ্গা থাকতে চায়, নিজের একটু যত্নআত্তি করতে চায়। এটাকে তো বেসরকারি হাসপাতালগুলির ক্যাশ করারই কথা।”
অঙ্কন: সুমিত্র বসাক
অ্যাপোলো গ্লেনেগ্লস হাসপাতালের তরফে রূপালি বসু যেমন জানালেন, মহালয়ার দিন থেকেই তাদের বিশেষ পুজো প্যাকেজ চালু হচ্ছে, যার না, ‘হৃদয় সুরক্ষা’। তাতে ৩৯৯৯ টাকায় হার্টের সব রকম পরীক্ষা করানো যাবে। রিপোর্টে যদি দেখা যায় সব কিছু ঠিকঠাক, তা হলে গ্রাহককে দু’লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা নিখরচায় করে দেওয়া হবে। এক বছরের মধ্যে ওই ব্যক্তির অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, ভাল্ভ বা পেসমেকার বসানো অথবা বাইপাস সার্জারির প্রয়োজন হলে ওই হাসপাতালে তিনি দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন।
ডিসান আর কলম্বিয়া-এশিয়ার মতো হাসপাতাল আবার হইহই করে প্রচার চালাচ্ছে ‘পুজোর আপনার ছুটি, আমাদের নয়।’ অর্থাৎ, পুজোয় তাদের হাসপাতালের ডাক্তারেরা দল বেঁধে ছুটিতে যাবেন না। প্রয়োজনে তাঁদের পাওয়া যাবে। ২৪ ঘণ্টা চলবে ইমার্জেন্সি। সব ধরনের শারীরিক পরীক্ষাও হবে। ডিসানের তাপস ঘোষের মতে, “বেশির ভাগ ডাক্তার এই সময়ে ছুটিতে চলে যাওয়ায় মানুষ দিশাহারা হয়ে যান, বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী বা বয়স্কেরা অসুস্থ হলে, কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা ইমার্জেন্সি অস্ত্রোপচার দরকার হলে। আমরা যদি এই সময়ে সেই জরুরি পরিষেবা দিয়ে ভরসা অর্জন করতে পারি, সেটা ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসায় সাহায্য করবে। মানুষ অন্য হাসপাতাল ফেলে আমাদের কাছে আসবে।”
ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার সুয়েশ বোরার জানিয়েছেন, পুজোয় লোক টানতে তাঁরা বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাচ্ছেন, আসন্নপ্রসবারা যাতে পুজোয় ডাক্তারের আকালে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য পুজোর পাঁচ দিন বিশেষ পরিষেবা ও ব্যবস্থা চালু করছেন তাঁরা। মেডিকা হাসপাতাল আবার পুজোর সময়ে গ্রাহক টানতে প্রতি রবিবার স্বাস্থ্য-পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করেছে।
পিছিয়ে নেই দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতাল বা হাওড়ার ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক হাসপাতালও। মিশন হাসপাতালের তরফে চিকিৎসক সত্যজিৎ বসু জানিয়েছেন, পুজো উপলক্ষে তাঁদের হাসপাতালে মেয়েদের জন্য সাড়ে ছ’হাজার টাকার বিশেষ স্বাস্থ্য-পরীক্ষার প্যাকেজ ও ছেলেদের সাড়ে চার হাজার টাকার স্বাস্থ্য-পরীক্ষার প্যাকেজ চালু হয়েছে। হাওড়ার ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক হাসপাতালের বিশেষ পুজো প্যাকেজে ৫৫৫ টাকায় ইকো-কার্ডিওগ্রাফি, ইসিজি থেকে রক্তপরীক্ষা সব হচ্ছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের তরফে আশিস চক্রবর্তী জানালেন, পুজোর চার দিন ইমার্জেন্সি কেসের ক্ষেত্রে তাঁরা তাঁদের হাসপাতাল থেকে চার কিলোমিটারের মধ্যে নিখরচায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা দিচ্ছেন। আবার ফর্টিস হাসপাতাল পয়লা অক্টোবর থেকে শুরু করছে ০-১৫ বছরের বাচ্চাদের জন্য পুজো স্পেশ্যাল স্বাস্থ্য-পরীক্ষার প্যাকেজ।
রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দফতর এই মুনাফার খেলায় সামিল হতে না পারলেও পুজোর আবহে নিজেদের ভাবমূর্তি খানিকটা উজ্জ্বল করার তাগিদে তারাও পিছিয়ে নেই। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, পুজোর সময়েই ‘শিশুসাথী’ কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে শিশুদের নিখরচায় কাটা ঠোঁট জোরার অস্ত্রোপচার ও জন্মকালীন ছানির অস্ত্রোপচার। এত দিন শিশুসাথীতে শুধু শিশুদের হৃদ্যন্ত্রের অস্ত্রোপচার নিখরচায় করা হত। স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বলেন, ‘‘এটিই দফতরের তরফে রাজ্যবাসীকে পুজোর উপহার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.