পুজোর আগে রাস্তায় নামছে সিএসটিসি-র একটি দ্বিতল বাস। টানা কয়েক বছর অচল অবস্থায় পড়ে থাকা একটি বাসকে এ কারণে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী চলচ্চিত্র উৎসবের প্রচারে এটিকে রাস্তায় নামানো হবে। পুজোর আগে আরও একটি বাসকে পর্যটনের প্রচারে ব্যবহারের জন্য চেষ্টা চলছে।
লন্ডনের ধাঁচে কয়েক দশক আগে এ শহরে চালু হয়েছিল দোতলা বাস। কিন্তু চড়া রক্ষণাবেক্ষণের খরচের জন্য সেগুলি আস্তে আস্তে বসে যায়। বছর দুই আগে পরিবহণমন্ত্রী প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন, ফের দোতলা বাস নামানো হবে। কিন্তু অচল যে ক’টি দোতলা বাস ডিপোয় আছে, সেগুলি ১৫ বছরেরও বেশি পুরনো। হাইকোর্টের নির্দেশে এ ধরনের গাড়ি বাণিজ্যিক ভাবে চালানো যাবে না। মূলত এ কারণে মন্ত্রীর আশ্বাস বাস্তবায়িত করা যায়নি।
|
নতুন করে ফের দোতলা বাসের কথা উঠেছে তথ্য ও সংস্কৃতিসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক এক আলোচনায়। অত্রিবাবু চান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রচারে নতুনত্ব আনতে।
তিনি বলেন, “১০ নভেম্বর উৎসবের উদ্বোধন। সাত দিন ধরে চলবে। আমরা সব রকম ভাবে এটিকে সফল করতে চাই।” দোতলা বাসকে তিনি এ কারণে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করতে চান। সুভাষ চক্রবর্তী পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তী একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নামে দীর্ঘকাল দোতলা বাসে ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার চালিয়েছেন। মহাকরণে পালাবদলের পরে সেই বাস নিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন তা ডিপোয়।
এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা দোতলা বাসের কথা শুনেছে মাত্র, চোখে দেখেনি। এ কথা জানিয়ে আলাপনবাবু বলেন, “আমি সিএসটিসি-র এমডি-কে বলেছি, আপাতত এ রকম একটি বাস চলার ব্যবস্থা করে দিতে। পারলে নিউ টাউনে আরও একটি বাস পর্যটকদের জন্য চালানো হবে। তবে বাসগুলি প্রযুক্তিগত ভাবে কতটা সচল, তা বলতে পারব না।” |
সিএসটিসি-র এমডি প্রসন্নকুমার মণ্ডল বলেন, “সচিবের কাছে ১৫ দিন সময় চেয়েছি। প্রাথমিক কথা বলেছি সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে। অঘটন না হলে অক্টোবরের গোড়ায় রাস্তায় এ রকম অন্তত একটি বাস দেখতে পাবেন।” যেহেতু বাণিজ্যিক ভাবে এই বাস চলবে না, ১৫ বছরের পুরনো হলেও আইনি বিধি-নিষেধ কার্যকরী হবে না বলে মন্তব্য করেন প্রসন্নবাবু।
মুম্বাই-সহ দেশের কিছু শহরে এখনও দোতলা বাস চলছে। নতুন করে কেন কলকাতায় কেনা হচ্ছে না? সিএসটিসি-র এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “একতলা একটি বাসে ৭২ জন ধরে। দাম পড়ে বড়জোর ২০ লক্ষ টাকা। দোতলা বাসে ধরে ৯১ জন। দাম পড়ে ৩০ লক্ষ টাকার উপরে। এই দু’রকম বাসে কিলোমিটার পিছু ব্যয় যথাক্রমে ৪৫ টাকা ও ৭০ টাকা। ১৫ বছরের পুরনো দোতলা একটি বাস বিক্রি করে পাওয়া যায় কমবেশি ৫ লক্ষ টাকা।” অর্থাৎ, দোতলা বাস চালিয়ে তাই আয়ের তুলনায় ব্যয় অনেকটাই বেড়ে যায় বলে মত তাঁর।
সিএসটিসি-র পাইকপাড়া, বেলঘড়িয়া এবং মানিকতলা ডিপোয় একটি করে দ্বিতল বাস দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় পড়ে আছে। বিভিন্ন ডিপোয় আছে আরও প্রায় ৩০০ একতলা অচল বাস। নিগমের প্রায় সওয়া সাতশ বাসের অর্ধেক নামানো যাচ্ছে রাস্তায়। বেশির ভাগই পুরনো। এ রকম প্রায় ২০০ অচল বাস বিক্রি করবে সিএসটিসি। ৩০ সেপ্টেম্বর নিগমের বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গত বছর পুরনো ২১৮টি বাস বিক্রি করে নিগমের আয় হয় ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। |