উন্নয়নের কাজ করেও পঞ্চায়েতের দখল পায়নি তৃণমূল। এমনই দাবি করে পরাজয়ের অভিমানে এ বার এলাকার স্কুল ভোটে প্রার্থী দিল না তারা। পুঞ্চা ব্লকের বাগদা চন্দ্রকান্ত বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে আগামীকাল রবিবার অভিভাবক নির্বাচন হচ্ছে। তৃণমূল নেতৃত্ব রীতিমতো এলাকায় সভা করে এ বার ওই স্কুলভোটে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে।
পুঞ্চার বাসিন্দা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যা বলেন, “এই এলাকায় এত উন্নয়নের কাজ করার পরেও পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ আমাদের ফিরিয়েছে। তাই বাসিন্দাদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি স্কুল নির্বাচনে দল প্রার্থী দেবে না।” তবে দলের কর্মীদেরই একাংশ মনে করছেন, পঞ্চায়েতের মতোই স্কুলভোটেও হারের আশঙ্কা রয়েছে। তাই অভিমানের কথা শুনিয়ে সরে দাঁড়ানো ঢের সম্মানের। তবে ছ’টি আসনেই সিপিএম সমর্থিত প্রার্থীরা রয়েছেন। আছেন কংগ্রেস সমর্থিত পাঁচ ও এক জন নির্দল প্রার্থী।
পুঞ্চা ব্লক মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। ওই বিধানসভা কেন্দ্র দখল করার পরে এ বার পঞ্চায়েত ভোটেও বড় সাফল্যের আশা করেছিল তৃণমূল। সর্বত্র তৃণমূল ভাল ফল করলেও বাগদা পঞ্চায়েত সিপিএমের হাত থেকে তারা ছিনিয়ে নিতে পারেনি। সিপিএম ছ’টি ও তৃণমূল চারটি আসন পায়। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের সরকার চলছে। সাম্প্রতিক পঞ্চায়েত ও তার পরে সদ্য শেষ হওয়া পুরভোটেও দলের ব্যাপক সাফল্য এসেছে। তার পরেও স্কুলভোটের মতো নির্বাচন থেকে দল কেন সরে এল এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল শিবিরের একাংশে প্রশ্ন রয়েছে।
তৃণমূলের পুঞ্চা ব্লক সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতোর দাবি, “গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে আমরা বাগদা এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন করেছি। রাস্তাঘাট থেকে স্কুলকক্ষ নির্মাণ করেছি। ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে অনেকেই বাড়ি পেয়েছেন। তার পরেও বাসিন্দারা এই পঞ্চায়েতে সিপিএমকে ক্ষমতায় ফেরে বসিয়েছেন। তাহলে স্কুলের উন্নয়নটা বিরোধীরাই করুক। এ কারণে আমরা ইচ্ছে করে স্কুল নির্বাচনে প্রার্থী দিইনি।”
তবে বিরোধীরা অন্য কথা বলছেন। কংগ্রেসের পুঞ্চা ব্লক সভাপতি বারিদবরণ মাহাতোর মতে, “কংগ্রেসের সীতারাম মাহাতো মন্ত্রী হয়ে এলাকার প্রচুর উন্নয়ণ করেও হেরেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের ময়দান ছাড়েননি।” তাঁর দাবি, গোষ্ঠী কোন্দলে মত্ত তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক দৈন্যতা স্বীকার করে নিল। সিপিএমের পুঞ্চা জোনাল সম্পাদক বিপত্তারণ শেখরবাবুর কটাক্ষ, “এমনিতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তৃণমূল কাবু। তাই এখানে হার নিশ্চিত বুঝেই আগেভাগে ওরা সরে পড়েছে।”
প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তথা বর্তমানে জেলা কংগ্রেস সম্পাদক তথা বাগদার বাসিন্দা কুমারেশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে এলাকায় উন্নয়নের নামে লুঠতরাজ হয়েছে। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষ জবাব দিয়েছে।” আত্মসমালোচনার সুরে সুজয়বাবু বলেন, “তৃণমূলের সব কর্মী যে ধোয়া তুলসীপাতা এমন দাবি করছি না। হয়ত কেউ কেউ অপকর্মে জড়িয়েছিলেন। তা বলে এলাকার উন্নয়ন তো আড়াই বছরে হয়েছে।” |