উত্তমকুমারের নাতনি নবমিতার বিয়ে হতে চলেছে আগামী ২০ জানুয়ারি। পাত্র, অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। বাংলা সিরিয়ালের জনপ্রিয় অভিনেতা।
মহানায়কের বাড়িতে এখন যেন বিয়ের ধুম। এ বছর জানুয়ারিতেই অনিন্দিতার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল
উত্তম-পৌত্র গৌরবের, আর আগামী বছর নবমিতার।
সাউথ পয়েন্টের সায়েন্সের ছাত্র ভাস্বর, ভারতীয় বিদ্যাভবন থেকে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পাশ করার পর প্রথমে এক নামী কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার পরে কিছু দিনের জন্য যোগ দেন ‘পদাতিক’ নাট্যদলে। ক্রমশ নানা সিরিয়াল ছাড়াও সন্দীপ রায়ের ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’, ‘যেখানে ভূতের ভয়’ বা ‘আলো’, ‘বালিগঞ্জ কোর্ট’, ‘দ্য লেজেন্ড অফ ভগত সিংহ’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ছবিতে অভিনয়।
আর নবমিতা? উত্তমকুমার একমাত্র এই নাতনিরই নামকরণ করে যেতে পেরেছিলেন। নতুন বন্ধু, তা-ই ‘নব মিতা’। আর এ বার সেই ‘নতুন বন্ধু’ জীবনে পেতে চলেছেন আর এক বন্ধুকে।
কে, কী ভাবে দিল প্রস্তাবটা?
সলজ্জ হেসে নবমিতা জানালেন, “সাত-আট বছর ধরে চিনি ওঁকে। ‘হাঁউমাউখাউ’ নামে টিভিতে একটি অনুষ্ঠানে দু’জনেই ছিলাম বিচারক। তার পর ভাইয়ের সঙ্গে ‘ইতি’ ছবিতে কাজ করে ও। আস্তে আস্তে পরিবারিক বন্ধু হয়ে যায়। লক্ষ্মীপুজোয় তখন থেকেই আসা-যাওয়া। কিন্তু প্রেম বলতে যা বোঝায়, ঠিক তা হয়নি।” |
‘সাহেব বিবি গোলাম’-এর সুমিত্রাদেবীকে মনে আছে? ভাস্বরের মায়ের জেঠিমা ছিলেন তিনি। তাই অভিনয়ের সূত্রে দুই পরিবারের মধ্যে একটা যোগসূত্র কোথাও যেন ছিলই।
ভাস্বরের কাছে জানতে চাইলাম কী ভাবে হল সব কিছু?
গজ দাঁতে মিষ্টি হেসে বললেন, “প্রথম থেকেই ভাল লাগত, কিন্তু আমার জীবনে একটা সমস্যা ছিল...একটা অতীত ছিল। তাই কিচ্ছু বলতে পারতাম না।” সেই সমস্যা ছ’মাস আগে মিটে যাওয়ায় বিয়ের প্রস্তাব দেন। তা-ও হোয়াটস-অ্যাপে!
অনেক দিন থেকেই সেন্সর বোর্ডে রয়েছেন নবমিতা। আর হালে যোগ দিয়েছেন ভাস্বর! সেই সূত্রে দু’জনের প্রায়শই দেখাসাক্ষাৎ হত। এক দিন অসুস্থতার জন্য নবমিতা সময়ে পৌঁছতে পারেননি। ভাস্বর হোয়াটস-অ্যাপে জানতে চান, ‘শরীর ভাল তো?’ নবমিতার কুশল সংবাদ পাওয়ার পরেই তাঁকে হঠাৎ ভাস্বর বলেন, “এক সঙ্গে থাকলে কেমন হয়? থাকবি এক সঙ্গে?” বিস্মিত নবমিতা বলেন, “দাঁড়া ভেবে দেখি।”
কিন্তু ভাবাভাবির আর সময় পাননি। প্রস্তাবটা শোনার পরে ভাই-বোন থেকে শুরু করে বাড়ির সবাই হইহই করে ওঠেন। দিন কুড়ির মধ্যে সব ঠিক হয়ে যায়। আর্মি টেরিটোরিয়ালে ২০ জানুয়ারি বিয়ে। আইবুড়োভাত বাড়িতে হলেও বিয়ে হবে রেজিস্ট্রি করে। তবে আত্মীয়দের অনুরোধে মালা-বদল, সিঁদুর-দানও হবে। এক দিনেই হবে রিসেপশনও।
বিয়ের শপিং-এর জন্য মুম্বইয়ে অনিন্দিতার বাপের-বাড়ি ঘুরে এসেছেন নবমিতা, মৌমিতা আর অনিন্দিতা। নবমিতার জন্য কেনা হয়েছে পার্পল-অরেঞ্জের মিশেলে লেহেঙ্গা। আর ভাস্বরের জন্য অফ-হোয়াইট-মেরুনে শেরওয়ানি।
হানিমুনে কোথায় যাবেন নবদম্পতি? “হয় লেহ্-লাদাখ, নয় দুবাই”, বললেন ভাস্বর। “আসলে আমার বিয়ের পর, আমার আর এক বোন (উত্তম-পরিবারের আর এক নাতনি) তোর্ষার বিয়ের কথা। তাই চট করে ঘুরে এসে পরের বিয়ের তোড়জোড়,” জবাব নবমিতার।
গৌরীদেবীকে উত্তমকুমারের দেওয়া অসংখ্য বেনারসী সম্ভার থেকে বাছাই করা বেশ ক’টি দেওয়া হবে নবমিতার তত্ত্বে। এখনও পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, বিয়ের দিন নবমিতা পরবেন উত্তমের মা, চপলাদেবীর বিয়ের নবরত্নের পাঁচ পিসের সাবেকি সেট। যাতে থাকবে, চিক, তিন-লহরী হার, দুল, আংটি ও রিস্টলেট।
হাসতে হাসতে নবমিতা বললেন, “একটা ব্যাপার দারুণ লাগছে। আমার পদবিটা একই থাকল, চট্টোপাধ্যায়!” |