জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বহু দিন ধরেই নানা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু আদৌ কী কৃষি ক্ষেত্রে জৈব প্রযুক্তি বেড়েছে? উত্তর, একটাই, না। এ কথা স্বীকার করছেন স্বয়ং বিভাগীয় মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ও। তবে তার জন্য তিনি দায়ী করছেন বিগত বাম সরকারকে। তাঁর কথায়, “রাজ্যে এ রকম একটি বিভাগ থাকলেও কাজে তার কোনও অগ্রগতিই ঘটেনি। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে কোনও কাজ হয়নি। এ বার আমরা জৈব প্রযুক্তির উন্নয়নে পদক্ষেপ করছি।”
সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে জৈব প্রযুক্তি শিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনে এসেছিলেন মন্ত্রী। মেদিনীপুর শহরের বিধাননগর এলাকায় হবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। যেখানে বিভিন্ন গ্রামের পুরুষ, মহিলারা প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব সার তৈরি করবেন, কম সময়ে কিভাবে জৈব সার দিয়ে বীজ তৈরি করা যায়, কিভাবে সাধারণ চাষ করা যায় - এই সব যাবতীয় বিষয়ই শেখানো হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাও। তাঁর কথায়, “বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তিকে মিলিয়ে দিলে কত সহজে যে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব তা সকলেরই জানা। এ বার জৈব প্রযুক্তি শিক্ষণ কেন্দ্রে তা-ই শেখানো হবে। এতে কম খরচে অনেক বেশি ভয় করতে পারবেন সাধারণ কৃষকেরা।” |
যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটেনি, তখন সাধারণ পদ্ধতিতেই চাষ করতেন সাধারণ মানুষ। বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে উন্নত ধরনের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক তৈরি হয়। এই পদ্ধতিতে চাষে খরচ বৃদ্ধি হলেও কম পরিশ্রমে বেশি ফলন মেলে। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে ততই অভিযোজিত হয়ে যাচ্ছে মাটি ও বিভিন্ন রোগপোকা। ফলে ৪-৫ বছর ছাড়াই রাসায়নিক সারের পরিমাণ বা কীটনাশকের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। কিংবা আরও উন্নত ধরনের কোনও কিছুর দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন চাষের খরচ বৃদ্ধি হচ্ছে তেমনি খাবারের গুনও কমছে। এভাবে কৃত্রিম উপায়ে শস্যবৃদ্ধি হওয়ার ফলে সেই শস্য খেয়ে মানুষের নানা ধরনের রোগও দেখা দিচ্ছে। কিন্তু জৈব প্রযুক্তিতে তৈরি সার, কীটনাশক ব্যবহার করলে এই ধরনের সমস্যা থাকবে না।
কৃষি দফতরও জানিয়েছে, এই পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রথম ২-৩ বছর সামান্য কম ফলন হবে ঠিকই কিন্তু তারপর থেকে ফলন এমন বৃদ্ধি হবে যা রাসায়ানিক সার ব্যবহারের কাছাকাছি। এক্ষেত্রে সব দিক দিয়েও লাভবান হবেন কৃষকেরা। একদিকে কম খরচে চাষ হবে, আবার জৈব পদ্ধতিতে তৈরি ফসলের দামও পাবেন বেশি। কারণ, জৈব পদ্ধতিতে তৈরি জিনিসের উপরেই মানুষের ঝোঁক বাড়ছে। বিভাগীয় মন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, রাজ্যের সর্বত্রই ধীরে ধীরে এই ধরনের শিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এদিন যার প্রথম সূচনা হল, মেদিনীপুরে। বর্ধমান, হুগলী সহ অন্যান্য জেলাতেও কেন্দ্র তৈরি হবে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে সেখানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, “জৈব প্রযুক্তির ব্যবহারকে প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছতে পদক্ষেপ করবে সরকার। রাজ্যের সর্বত্রই এই প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।” |