বুড়ি নজরওয়ালে তেরা মন কালা
ময়: বিকেল সাড়ে চারটে।
‘বিগ বস’ হওয়ার পাঁচ দিন পর। দক্ষিণ কলকাতার এক বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট। পুজোর বাজার খানিকটা সেরে সবে প্রেমিকা দেবলীনাকে নিয়ে অনীক ধর ফিরেছেন দেবলীনার চোদ্দোতলার ফ্ল্যাটে।


এই যে কুড়ি লক্ষ টাকা প্রাইজ মানি পেলেন, তা দিয়েই কি পুজো শপিং শুরু করলেন?
আরে না, না। ওই টাকাটা আমি অন্তত দু’তিন বছর ছোঁব না। প্রথমে ওটা দিয়ে একটা শনিপুজো করব। লোকের যা নজর লেগেছে ওই টাকাতে, হয়তো দেখলেন যে অ্যাকাউন্টে রাখলাম, সেটাই ক্র্যাশ করে গেল।

সেটা খুব ভুল বলেননি। বাড়ির সদস্যরা তো আপনাকে কিছু বলতে বাকি রাখেননি...
পড়লাম রুদ্রদা আমাকে ‘রাবণ’ বলেছে। তার পর বলেছে যে আমি নাকি অমিতাভ বচ্চনের থেকেও বড় অভিনেতা। আমার মতো একজন মানুষকে যদি রুদ্রদা অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তুলনা করে, তা হলে তো আমি এটাকে কমপ্লিমেন্ট হিসেবেই নেব।

উনি কিন্তু কমপ্লিমেন্ট হিসেবে আপনাকে এ সব বলেননি...
আমি জানি। কিন্তু আমি কি ওর মতো করেই ও ভাবে কাদা ছেটাব নাকি? তা হলে তো কাদাটা আমার গায়েই এসে লাগবে। একটা কথা মনে রাখবেন: যো জিতা, ও হি সিকন্দর! যে যা বলছে বলতে দিন। আমি ও সবে কান দিই না।

যদি যা বলা হচ্ছে তা সবই মিথ্যে হয়, তা হলে প্রতিবাদ করবেন না?
কী প্রতিবাদ করব? আমার বয়স ২৩। ১৬ বছর বয়স থেকে আমি রিয়েলিটি শো জিতে এসেছি। আমার আইডল হলেন সচিন তেন্ডুলকর। উনিও ১৬ বছর বয়স থেকেই খেলা শুরু করেছিলেন। যখন প্রথম বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেন, তখন আমি নিশ্চিত ওঁর টিমের মধ্যেও হয়তো কেউ কেউ ওঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছিল। এত অল্প বয়সে এত জনপ্রিয়তা। সে হঠাৎ এসে জিতে গেল। ইগোতে লাগছে তাই। আমার থেকে রুদ্রদার ডাবল বয়স। আমাদের কাছে কত গল্প করেছে নিজের স্ট্রাগল নিয়ে। তার পর এই সব বেসলেস অ্যালিগেশন! সেদিন আপনাদের কাগজে রুদ্রদার একটা ছবি দেখলাম। মনে পড়ে গেল রুদ্রদা ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে থাকার সময় একটা গল্প বলত। শ্যুটিং করতে গিয়েছিল। স্ক্রিপ্টটা আগে জানত না। ওখানে গিয়ে দেখে ওর জন্য একটা গরিলার পোশাক নিয়ে আসা হয়েছে!
মানে, আপনি কি ওই গরিলাটার সঙ্গে কোথাও...
না না। ছবিটা দেখে মনে পড়ে গেল গল্পটা। রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু রাগের বহিঃপ্রকাশটা ও রকম হওয়া ঠিক নয়। ‘বিগ বস’-এর বাড়িতে তো ও বেস্ট পলিটিশিয়ানের অ্যাওয়ার্ড পেল। সাক্ষাৎকারটা পড়ে মনে হল যেন কাগজে বেস্ট পিএনপিসি অ্যাওয়ার্ডটাও পেতে পারত। এভরি ফাইটার ওয়ান্টস টু উইন। বাট এভরি ফাইটার হ্যাজ টু লুজ গ্রেসফুলি টু। আমার মতে খেলা শেষ হয়ে গেলে আর তাকে নিয়ে খেলা উচিত নয়। এত সবের পরেও আমি রুদ্রদাকে সম্মান করি।

তাই?
হ্যাঁ। তবে চল্লিশ বছর বয়সেও যদি রিয়েলিটি শো করতে গিয়ে হেরে যাই, তা হলে আমি এই ভাবে কাউকে ছোট করব না। টুম্পাদি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) নাকি মানসিক ভাবে অসুস্থ! তার আরোগ্য কামনা করেছে রুদ্রদা। এ সব বলার কী মানে বলুন তো?

সিগারেট চুরির অভিযোগটা কি মিথ্যে?
আমি সিগারেট খাই না। কে কী খেত না খেত, তা জানি না।

আবার সেই ডিপ্লোম্যাটিক অনীক?
আরে না না। আমি জানি যে সব বিষয়ে আমার নাক গলানোর দরকার নেই, যেখানে কোনও রিটার্ন নেই, সেখানে আমি ইনভেস্ট করি না।

এত ক্যালকুলেটিভ আপনি?
তাতে যে যা ভাবে ভাবুক, এটাই কিন্তু সত্যি। আমাকে কখনও দেখবেন না কফি শপে গিয়ে আড্ডা মেরে সময় নষ্ট করছি। কী হবে ওই সব করে! কত বার তো শুনেছি ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা বলছে যে, যাকে মনে করেছে সব চেয়ে কাছের বন্ধু, সেই পরে গিয়ে বাজে কথা রটিয়েছে তার নামে। কফি শপে কত আড্ডা! তার ওপর আবার পিএনপিসি। আমি ও সবে নেই। কোনও দিন ছিলাম না। তাই আমার কোনও বন্ধু নেই।

কিন্তু ‘বিগ বস’ হাউসে তো আপনাকে দেখে বেশ জমাটি মনে হয়েছিল। সবার সঙ্গে হেসে কথা বলেছেন, মাতিয়ে রেখেছেন...
আমি বাড়ির লোকের সঙ্গে এ রকম। কিন্তু বাইরে আমার কোনও বন্ধু নেই। এই নিয়ে কোনও আফসোস নেই। নিজের কাজ ছাড়া যে সময়টুকু পাই, আমার বাড়ির লোকের সঙ্গে কাটাই।

অনীক এবং দেবলীনা। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

ঘরের সদস্যরা বলছেন যে জেতার পর নাকি আপনার ব্যবহার একদম ১৮০ ডিগ্রি পালটে গিয়েছিল। বাড়ির ভেতরে ছিলেন ‘দ্য কিড’। জেতার পর হয়ে গিয়েছিলেন গম্ভীর উইনার!
তিন মাস পরে যখন বাড়ির লোকেরা সামনে এলেন, তাঁদের মুখের হাসিটা দেখতে দারুণ লেগেছিল। অত সিনিয়রদের ছাড়িয়ে আমি জনতার ভোটে জিতে গেলাম। ভাবলাম এখন আমার লাফানো ঝাঁপানো উচিত নয়।

বলা হয়েছে যে ফাইনালের দিন শেষ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নাকি আপনার ভাগ্য পালটে গিয়েছিল?
সেটাই জনতার সাপোর্ট। এই একই জিনিস ‘সা রে গা মা পা চ্যালেঞ্জ ২০০৭’-এও হয়েছিল। প্রচুর সংখ্যায় ভোট আসে শেষ তিন-চার ঘণ্টায়।

যা বলছেন, এতেও তো ছিদ্রান্বেষীরা রিগিংয়ের গন্ধ পাবে...
আরে এই সব অডিটেড ভোট। চ্যানেলের ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে থাকে এর উপর। সেখানে রুদ্রনীল বা অনীক ছাড়া যদি কোনও আম আদমি বেশি ভোট পেত, তাকেই উইনার করতে হত। সদস্যরা এটা প্রশ্ন করা মানে চ্যানেলকেই প্রশ্ন করা। চ্যানেল ছিল বলে আজ আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছি। এটাকে বলে ‘নাচ না জানে আঙ্গন টেরা’। একদম স্বার্থপরতার পরিচয়!

কনীনিকাকে তো আগে আপনি কনীদি বলে ডাকতেন। শেষে কনী বলে ডাকতে শুরু করলেন। এখন কী বলে সম্বোধন করবেন?
কনীদি বা কনী যেটা মুখে আগে আসবে, সেটা বলেই ডাকব।

আচ্ছা, মহেশ জালানকে আপনি শো-এর আগে সত্যিই চিনতেন?
না। এ বিষয়টা দেবলীনা ভাল বলতে পারবে। গুড়িয়া (দেবলীনা) বলো।
দেবলীনা: আমার যখন তিন-চার বছর বয়স, তখন বাবা আমার কোষ্ঠী করিয়েছিলেন মহেশ জালানকে দিয়ে। ‘বিগ বস’-এর নাম ঘোষণা করার পর অনীক আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি মহেশ জালান বলে কাউকে চিনি কি না। আমি ওকে বলি গুগল করে জানতে কারণ অত ছোটবেলার কথা মনে ছিল না। তার পর আমার মা অনীককে বলেন যে উনি আমার কোষ্ঠী করেছিলেন।

কোষ্ঠীতে কি লেখা ছিল অনীকের সঙ্গে সম্পর্কের কথা?
দেবলীনা: হ্যাঁ, বলা আছে যে আমার একজন ক্রিয়েটিভ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক হবে।

দেবলীনার হাতে পাঁচটা আংটি। আজও কি মহেশ জালানকেই হাত দেখান?
দেবলীনা: না।
গানে গানে
রুদ্রনীল ঘোষ: তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছ... দিতে পারোনি... সম্পূর্ণা: স্বপন যদি মধুর এমন হোক সে মিছেই কল্পনা... জাগিও না আমায় জাগিও না...
সুদীপ্তা চক্রবর্তী: কথা দাও আবার আসবে... আইরিস: ও কেন এত সুন্দরী হল...
কনীনিকা: তুমি নিজের মুখেই বললে যে দিন... নন্দিনী: আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না...
মহেশ জালান: তুমি একজনই শুধু বন্ধু আমার... বিক্রম: আমি কোন পথে যে চলি...
মল্লিকা: ক’ফোঁটা চোখের জল... কার্তিক দাস বাউল: ও কোকিলা তোরে...
কার্লিটা: যখন কেউ আমাকে পাগল বলে... কাইজ কালিম: কী দেখলে তুমি আমাতে...?
পটা: এ তো রাগ নয় গো... এ যে অভিমান... মানবী: সুন্দরী গো...
দেবলীনার যখন তিন-চার বছর বয়স, তখন মহেশ জালানের বয়স হয়তো আঠেরো। অত অল্প বয়সে উনি কোষ্ঠী ইত্যাদি করতেন?
অনীক: গুড়িয়ার হয়তো ঠিক সময়টা মনে নেই। দেখুন, মহেশ জালানের সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে...

আপনি নিজেকে সচিনের সঙ্গে তুলনা করলেও বাড়ির সদস্যরা তো বেরিয়ে এসে আপনাকে শ্রীসন্থের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। কেউ বলেছেন যে মহেশ জালান নাকি একটা মালা পরতেন যেটা দিয়েই সিগন্যাল করতেন যাতে দর্শক তাঁকে ভোট দেন। আর যে সপ্তাহে উনি মালাটা খুললেন, তার মানে ছিল এ বার ওঁকে নয়, আপনাকে ভোট করতে হবে!
শো-তে গিয়ে আমার সব চেয়ে বড় পাওনা হল আমার বাবা-মাকে আনন্দ দিতে পারা। সত্যি, যারা এ সব বলছে, তাদের একটা কথাই বলব: উপরওয়ালা সবার হিসেব রাখেন। আগামী দু’বছরের মধ্যেই কিন্তু কে ঠিক কে ভুল তা বেরিয়ে যাবে। সত্যি যদি আমার অতই ক্ষমতা ছিল শো-টা রিগ করার, তা হলে আমি কেন নিজের জন্য সিনেমা প্রযোজনা করলাম না? সেটা করে তো নিজেকে সুরকার বা গায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম। আমি তো আগের বছরও একটা রিয়্যালিটি শো-তে গিয়েছিলাম। ‘যো জিতা, ওহি সুপারস্টার’, ন্যাশনাল চ্যানেলে এন্ডেমল-এর শো। জিততে পারিনি। প্রাইজ মানি ছিল পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। তাই বলে যে জিতেছিল, তাকে আমি যা-তা বলব নাকি!

আচ্ছা, আপনি তো সাত বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। গানের গলা ভাল। তবু শুধু একটার পর একটা রিয়্যালিটি শো করে যাচ্ছেন। একটা সিনেমাতেও গানের সুযোগ আসেনি কেন?
জানি না কেন এখনও এক বারও অফার আসেনি! আমি বারবার গিয়ে গান দাও-গান দাও করতে পারি না। এটাও ভেবে দেখুন যে যদি অতই আমার ক্ষমতা থাকত, তা হলে কি নিজের জন্য বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আমি একটা গান গাওয়ার চেষ্টা করতাম না?

আপনার কেরিয়ার স্ট্র্যাটেজি কি তা হলে একের পর এক রিয়্যালিটি শো আর অনুষ্ঠান করে ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়ানো?
আমি একটা সুরের ব্যাঙ্ক তৈরি করেছি। সত্তর-আশিটা সুর তৈরি করেছি। যদি কোনও প্রযোজক রাজি থাকেন, আমি নিশ্চয়ই ওই গানগুলো ফিল্ম-এ ব্যবহার করতে চাইব। একটা প্রাইভেট অ্যালবামও রিলিজ করব আমার সুর আর গান দিয়ে। আর পরের বছর আবার রিয়্যালিটি শো-তে যাব। দেখবেন জিতেই ফিরব!

মানে? এ বার তো আপনি কী-করে-রিয়্যালিটি-শো-জিততে-হয় তার স্কুল খুলবেন। পাঁচটা জিতেছেন...
না না, চারটে। আসল কথা হল অনেস্টি আর মানুষের আশীর্বাদ।

আচ্ছা, ওই শনিপুজোটা কি মহেশ জালানকে দিয়ে করাবেন?
নিশ্চয়ই! সবাই যাঁকে নিয়ে এত ডাকাডাকি করছে, আর যিনি ভগবানকে এত ডাকাডাকি করছেন, আমার তো উচিত তাঁরই দ্বারস্থ হওয়া।

আপনি কি তা হলে বলবেন ‘বুড়ি নজরওয়ালে তেরা মুহ্ কালা’?
না। আজকাল অনেক কসমেটিক্স পাওয়া যায় বাজারে। তাই বলব: বুড়ি নজরওয়ালে তেরা মন জরুর কালা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.