|
|
|
|
গল্ফ ও সুন্দরী |
গল্ফ কোর্সের পাশাপাশি ঝড় তুলেছেন পুরুষ-হৃদয়ে। মডেলিং ছাড়াও আছে অভিনয়ের
প্রস্তাব। তবু তিনি থাকবেন ক্রীড়াবিদই। তিনি ভারতীয় গল্ফের শারাপোভা।
সেই শর্মিলা নিকোলেট-কে নিয়ে লিখছেন কুন্তল চক্রবর্তী |
সুইৎজারল্যান্ডে গত বছর মহিলাদের গল্ফে ইউরোপিয়ান ট্যুরের একটা ইভেন্ট চলছিল। বিশ্বের সেরা গল্ফারদের অনেকে থাকা সত্ত্বেও টিভি ক্রুয়ের সব থেকে বেশি নজর ছিল এক ভারতীয় গল্ফারের দিকে। বিশ্বের যেখানেই তিনি খেলতে যান, তাঁকে ঘিরে আগ্রহ আয়োজক থেকে স্পনসরদের।
কয়েক সপ্তাহ আগেই বেঙ্গালুরুতে অডির মতো সংস্থা তাদের নতুন মডেলের গাড়ি লঞ্চ করিয়েছে এই গল্ফারকে দিয়ে। ফেসবুকে তাঁর হোমপেজে এক লক্ষেরও বেশি ফলোয়ার। বয়স ২৩। এর মধ্যেই গল্ফের পাশাপাশি নাম করে নিয়েছেন মডেল হিসেবেও। একমাত্র ভারতীয় মহিলা হিসেবে ইউরোপিয়ান ট্যুরে খেলা শর্মিলা নিকোলেট বলছেন, “মডেলিং করতে গিয়ে গল্ফ থেকে মনঃসংযোগ মাঝে মধ্যে নষ্ট হয় বইকী। টিভি ক্যামেরার সব সময় পিছু পিছু ঘোরা থেকে গল্ফের বাইরে আমি কী করছি সে সব নিয়ে লোকজনকে উত্তর দিতে গিয়ে ফোকাস একটু আধটু এ-দিক ও-দিক হয় সত্যি কথা, কিন্তু আমি ফোটোশু্যট, বিজ্ঞাপন, এ সবও ভালবাসি। লোকজন অন্য রকম কিছু ভাবলে আমার যায়-আসে না। আমি আমার মতো।”
শর্মিলার হাতে ইতিমধ্যেই রয়েছে হিরো, পুমা, ব্ল্যাকবেরি, অডির মতো স্পনসর। বেঙ্গালুরুর এই গল্ফারকে অনেকেই ডাকেন ভারতীয় গল্ফের শারাপোভা বলে। শর্মিলা নিকোলেট অবশ্য বলছেন, “ভাল দেখতে হওয়ার থেকেও ভাল খেলাটা বেশি জরুরি। পারফরম্যান্সই আমাকে শর্মিলা নিকোলেট বানিয়েছে। সেটাই ধরে রাখতে চাই।”
গত দশ বছর ধরে শর্মিলাকে কোচিং করাচ্ছেন তরুণ সরদেশাই। বেঙ্গালুরুর এই কোচের মতে গত দু’বছরে প্রচণ্ড উন্নতি করেছেন ইউরোপিয়ান ট্যুরে খেলা ভারতীয় গল্ফার। কোচ ছাড়াও শর্মিলার সঙ্গে কাজ করে একটা টিম। ব্যক্তিগত ম্যানেজার ছাড়াও যেখানে রয়েছেন একজন করে ফিজিকাল ট্রেনার, ফিজিও এবং আইনজীবী। খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট হলে এই গল্ফারের সঙ্গেই বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় চলে যান তাঁর কোচ ও ফিজিকাল ট্রেনার। সুন্দরী খেলোয়াড়দের প্রায়শই বায়নাক্কার শেষ থাকে না। “শর্মিলা কিন্তু তেমনটা নয়,” বলছিলেন কোচ তরুণ সরদেশাই, “বরং এখনও কোচের কথা শোনে। ওর টিম কোনও পরামর্শ দিলে সেটাই মেনে নেয়।” |
|
আয়েসি অবসর: শর্মিলা নিকোলেট |
কয়েক মাস আগের কথা। একটি মদ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্ব্যাসাডর হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল শর্মিলা নিকোলেটকে। কোচ ম্যানেজারেরা ওঁকে পরামর্শ দেন প্রস্তাবটি নাকচ করতে, কারণ শর্মিলার ইমেজের জন্য ব্যবসায়িক ডিলটা ভাল হবে না। পরামর্শটি মেনে নিতে এক মুহূর্ত দ্বিধা করেননি ভারতীয় এই গল্ফার। ইউরোপিয়ান ট্যুর থেকে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে মহিলা গল্ফারদের নিয়মিত দেখার পর তরুণ সরদেশাই বলছেন, “বিশ্বের সেরা ৫ জন সুন্দরী গল্ফারের তালিকায় শর্মিলা অবশ্যই থাকবেন। তবে ওঁকে ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এত আগ্রহ থাকলেও গোটা ব্যাপারটা এখন খুব ভাল ভাবে সামলাতে শিখে গিয়েছে আমার এই ছাত্রী।”
ফিটনেস ফ্যানাটিক ভারতীয় গল্ফারের রোজনামচা দেখলে কিন্তু একটা শব্দই সামনে আসবে। ডিসিপ্লিন। সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত অনুশীলন করেন শর্মিলা। এর পর ঘণ্টা দুয়েক সময় কাটান জিমে। টুর্নামেন্ট না থাকলে রোজই থাকে এই শিডিউল। তবে সপ্তাহে একটা দিন রাখেন নিজের শখ মেটানোর জন্য। ও দিন বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি থেকে সিনেমা দেখতে যাওয়া সবই থাকে।
ইতালি থেকে মরক্কো যেখানেই খেলতে যান, তাঁকে ঘিরে পুরুষদের আগ্রহটা একটু বেশিই। সামলাতে অসুবিধে হয় না? শর্মিলা বলছেন, “মাঝেমধ্যেই অনেককে আমার বলতে হয় আমি এনগেজড্। না বলে উপায় থাকে না। করবটা কী?” |
ওঁর পছন্দ |
• প্রিয় গল্ফার: টাইগার উডস্ ও অ্যাডাম স্কট
• প্রিয় অভিনেতা: ইয়ান সামারহোল্ডার
• পছন্দের বেড়ানোর জায়গা: দক্ষিণ স্পেন ও গোয়া
• প্রিয় খাবার: ইতালিয়ান
• প্রিয় টুর্নামেন্ট: ইভিয়ান মাস্টার্স
• প্রিয় পোশাক: শর্ট প্যান্টস
• শখ: হর্স রাইডিং, জিমে সময় কাটানো, ফোটোগ্রাফি, বেড়াতে যাওয়া, ওয়াটার স্পোর্টস |
|
|
টেনিসে সুন্দরী তারকাদের অনেকের সঙ্গেই এখনও তাঁদের মা অথবা বাবাকে ঘুরতে দেখা যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। শর্মিলার মা বছর চারেক আগে পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ঘুরলেও এখন সারা বিশ্বে একাই খেলতে যান এই ভারতীয় গল্ফার।
তবে শর্মিলা বলছিলেন, “আর বলবেন না। মা এখন না গেলে কী হবে, সারা দিনে ফোন আসতেই থাকে। কখন খেলাম, কী করলাম সব কিছু জানা চাই। আগে অবশ্য মা না থাকলে অসুবিধে হত। কিন্তু এখন আমি অনেক ম্যাচিওরড। যে কোনও পরিস্থিতি সামলাতে পারি। বয়সের তুলনায় বেশি ম্যাচিওরড বলতে পারেন।”
মডেলিংয়ের পাশাপাশি দক্ষিণের ছবিতে কাজ করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাব পেয়েছেন শর্মিলা। সিনেমায় কাজ করার এখনই অবশ্য কোনও ইচ্ছে নেই বেঙ্গালুরুর এই গল্ফারের। “লোককে কে বোঝাবে, আমি একজন মডেলের মতো নয়, একজন অ্যাথলিটের মতো প্রেজেন্ট করতে চাই নিজেকে। ফিটনেস আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার ফোকাস সবচেয়ে বেশি থাকে ফিটনেসের ওপরই।” রাজ্যস্তরে অ্যাথলেটিকস ও সাঁতারে ভাল ফল করা শর্মিলার গল্ফে হাতেখড়ি বারো বছর বয়সে। পনেরো বছর বয়সে জুনিয়র জাতীয় স্তরে একটা প্রতিযোগিতায় জেতার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন গল্ফই খেলবেন। |
|
পাঁচটা শব্দে নিজেকে বর্ণনা করতে বললে শর্মিলার পছন্দ ‘গল্ফ, ফ্যাশন, মিউজিক, স্পোর্টস-কার আর ফিটনেস’। সুযোগ পেলেই চলে যান লং ড্রাইভে। “এই তো কয়েক দিন আগেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম দক্ষিণ স্পেনে।” লন্ডনের পাশাপাশি শর্মিলার সব থেকে পছন্দের হলিডে ডেস্টিনেশন দক্ষিণ স্পেন। যাকে দেখলেই পুরুষদের হৃদয়ে দুলুনি, সেই শর্মিলা নিকোলেট প্রেম করছেন কার সঙ্গে? জানার কোনও আগ্রহ থাকলে বেশি পার্সোনাল প্রশ্ন করছি বলে আবার রেগে যাবেন না তো? ফোনে গলার আওয়াজটা আগাগোড়া ম্যাচিওরড শোনালেও এ বার একটু লাজুক শর্মিলা। “আরে কী বলছেন, রেগে যাব কেন? প্রেম করতে তো আমারও ইচ্ছে করে। কিন্তু কাউকে এখনও মনে ধরেনি। মনের মানুষকে এখনও খুঁজছি বলতে পারেন।” ফিটনেসের দিকে সবথেকে বেশি নজর দিলে কী হবে, খেতে কিন্তু খুব ভালবাসেন শর্মিলা। সবচেয়ে পছন্দের খাবার ইতালিয়ান।
বলছিলেন, “২০১৩ সালে এসেও যে ক্যালোরি ছাড়া খাবার আবিষ্কার হচ্ছে না কেন, কে জানে! একটু বেশি খেলেই জিমে গিয়ে বাড়তি এক্সারসাইজ করতে হয়। তবে সেটা খারাপ লাগে না আমার।” সুইডেনে খেলে এলেন সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ইউরোপিয়ান ট্যুরে একটা খেতাব তিনি জিততে পারলেই মহিলাদের গল্ফ নিয়ে ভারতে ছবিটা বদলে যাবে মনে করছেন শর্মিলা। ভারতীয় গল্ফের শারাপোভা অবশ্য আপাতত নজর রাখছেন এ মাসের ২২ তারিখ থেকে দিল্লিতে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতার খেতাবের দিকে। |
|
|
|
|
|