রবিবাসরীয় প্রবন্ধ ৩...
একটাভয়[কষ্ট]লজ্জাঘেন্না
গোটা বিশেক ছেলেপুলে-মাঝবয়সি লোক তখন মুখ টিপে হাসছে, উঠতি বয়সের ছোকরা দুটোর তো হাতে তালি দিয়ে দিয়ে ভলকে ভলকে বমির মতো উঠে আসছে হাসি। আমার পা দুটো কেউ সিমেন্ট দিয়ে গেঁথে দিয়েছে মনে হয়। কানের পাশে যেন এক শিশি অ্যাসিড ছড়িয়ে দিয়েছে। আমি কেমন হতভম্ব, নতমুখ, চকচকে রাস্তার পিচে মুখ ঘষে বলছি, এ বার বাঁচাও ধরণী। প্লিজ।
কুড়ি-বাইশ জনের ইতস্তত ছিটিয়ে থাকা আর অদৃশ্য এক বেড়াজালে আমার সাইকেল রিকশা আটকে। সমানে হর্ন বাজাচ্ছে আমার রিকশাওয়ালা। কিন্তু কোনও এক প্রাইজ পাওয়া মেলার ডকুমেন্টারিতে যেমন দেখা যায় একসঙ্গে নাগরদোলা, মাদারি, গরম তেলে জিলিপি ভাজা, বহুরূপী দমবন্ধ করা লাফিয়ে পড়া মুহূর্ত আমার মুহূর্তগুলোও সেই রকম নাক চেপে দমবন্ধ করে যেন হার্ট থেকে ঘোয়াক ঘোয়াক করে চলকে বেরিয়ে পড়ছে আবার সজোর কানের পাটায় থাবড়া মেরে ঢুকছে, মনে হচ্ছে গালটা লাল হয়ে গেল। আর হাসির এমন গা রি-রি করা আওয়াজ আমি শুনিনি। সত্যি।
আমার রিকশার পাশে একটা পাগলি খিলখিলিয়ে হাসছে তো হাসছে। না, এটা মূল ঘটনা নয়। আসলি মিরচি সঙ্গের কাজটা। পাগলি স্থানীয়। ছেলেবুড়োরাও স্থানীয়। পাগলি ডবকা, পাগলি সবকা।
পাগলি ওপরের জামাটা খুলেছে। হোহোহোহা... চল পাগলি চল... এ বার ঘাগরা। পাগলি তখন উন্মুক্ত স্তন নিয়ে গোল গোল ঘুরছে, হাতে ধরা ছেঁড়া শার্টটা। যেটা খোলার জন্য এত ক্ষণ উসকে দিচ্ছিল ওই জনা কুড়ি লোক। আমি যেন চক্রব্যূহে আটকে গিয়েছি। নিজেকে, ওই লোকগুলোকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা কী চলছে? এটা কি সত্যি? আমি নিজের শেষ ঘামরক্তের জোর কাচিয়ে রিকশাওলাকে বলছি, ‘চলুন, আপনি চলুন’... এ বার ঘাগরা রে পাগলি। বলার পরেই ছ’জোড়া চোখ আমার দিকে। চোখের কোণে মৃদু একটা চুক্কি হাসি। আমি তাড়াতাড়ি ওড়না ঠিক করে নিই। পাগলিটা কি সত্যিই ঘাগরাটা...আমার প্রাণ ঠোঁটে। ঝপ্। মাটিতে দেখি ওর ঘাগরাটা পড়ে গেল। আমি চোখ তুলে তাকাতে পারছি না। কমেডি সিরিজের পেছনের হাসির মতো রোরোরোরো হাসি। পটাপট তালি। নাচ পাগলি নাচ।
পাগলির কালো, নোংরা শরীরের কিছু অংশ আমার সামনে দিয়ে বার বার ঘুরে যাচ্ছে। আমি যেন আর দেখতে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে, আমার এক্স-রে হচ্ছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি আমার এই লজ্জাই যেন ওই লোকগুলোর তালির সবচেয়ে বড় কারণ। পাগলির সঙ্গে যেন আমিই বিবস্ত্র হচ্ছি। যেমন খুব জোর শব্দ হলে কানে তালা ধরে যায় আর প্রায় কিছু শোনা যায় না, সেই রকমই শুনছি রিকশাওলার গলা, ‘আর বলবেন না দিদি, এই পাগলিটাকে নিয়ে বড় মুশকিল। মাথার তো ঠিক নেই। ওকে এই অসভ্য সব ছেলেপুলে মিলে বলে জামা খুলতে আর ও জামা খুলে দেয়। কত বলেছি এ রকম করিস না। কিন্তু ও কী আর বোঝে? আজকালকার সব মায়ে খেদানো বাপে তাড়ানো ছেলেপুলে...’ রিকশাওলা বলে চলে। আর আমি ভাবি, তা হলে মাঝবয়সি লোকগুলো? ওরা কী করছিল? ওরা তো কিছু কম তামাশা মারছিল না। তালি দিচ্ছিল কেন? আর একই রকম নোংরা ভাবে আমায় দেখছিল কেন?
তা হলে বিনোদন কোনটা? এই পাগলিটা, না আমার ওই লজ্জিত, অসহায় অবস্থাটা? ওরা কি পাগলিকে আমার ওপর কপি-পেস্ট করছিল? আমিও কি তা হলে কিছুটা হলেও অনাবৃত হলাম? দুটো মিলিয়ে কি আজ ওদের জমজমে ফিস্টি হয়ে গেল? দিবালোক। সূর্যদেব ফুল ফর্মে বিরাজমান। সব পরিষ্কার পাগলির গায়ের রেখা, স্তনের ডৌল, স্কিনের ম্যাটফিনিশ, ছেলেগুলোর উত্তেজিত চোখ, কামনার তুঙ্গের প্রিলিউড, আমার লজ্জা, আমার পালানোর তাড়া, আমার বিবস্ত্র হওয়ার ভয়, আমার শরীরের রেখা, আমার স্কিনের থরথরানি, আমার হাঁসফাঁস।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.