কলকাতায় যে হিংসাত্মক অশান্তি থামাতে রাজ্য সরকারকে সেনা নামাতে হয়েছিল, সেই গোলমালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জারি থাকা মামলাটি শেষ পর্যন্ত তুলেই নেওয়া হল!
নন্দীগ্রামে গণহত্যার প্রতিবাদ, তসলিমা নাসরিনের ভিসা বাতিল এবং তাঁকে বিতাড়নের দাবিতে ২০০৭ সালের ২১ নভেম্বর রাজ্য অচল কর্মসূচি নিয়েছিল দু’টি সংগঠন। সেই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ভাঙচুর হয়, আগুন জ্বলে, আক্রান্ত হয় পুলিশও। সে দিন কলকাতার রিপন স্ট্রিট, মৌলালি, পার্ক সার্কাস, তপসিয়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চলেছিল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।
কলকাতা পুলিশের তৎকালীন ডিসি (সাউথ) এবং অন্য কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হন। সাম্প্রতিক কালে সেই ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতেই কলকাতায় সেনা নেমেছিল। সেনা টহল দিতে শুরু করার পরেও অবশ্য এন্টালি, পার্ক স্ট্রিট, তপসিয়া, বেনিয়াপুকুর, কড়েয়া থানা এলাকায় কার্ফু জারি রাখতে হয়েছিল। সে দিনের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতেই তসলিমার নিরাপত্তার জন্য কলকাতা পুলিশ গোপনে তাঁকে রাজ্যের বাইরে সরিয়ে দেয়। সে দিনের তাণ্ডবের পরে পার্ক স্ট্রিট থানা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। বিক্ষোভকারী একটি সংগঠনের নেতা ইদ্রিশ আলি-সহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দেয় পুলিশ। যে ইদ্রিশ রাজ্যে ‘পরিবর্তন’-এর হাওয়ায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন।
সেই মামলা ব্যাঙ্কশাল কোর্টে বিচারাধীন ছিল এত দিন। গত ১২ সেপ্টেম্বর সরকারি কৌঁসুলি (কলকাতা ইন চার্জ) প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় আদালতে মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন জানান। ওই দিনই শুনানির পরে নবম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় মামলা প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তুলেছে আইনজীবীদের একাংশ। আইনজীবী শুভাশিস রায়ের অভিযোগ, “যে কোনও মামলা প্রত্যাহার করা যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে করা যায়, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে। সেই নির্দেশ মানা হয়নি। রাজ্য সরকারের চাপে সরকারি কৌঁসুলি মামলা প্রত্যাহারে সচেষ্ট হয়েছেন।”
যদিও সরকারি কৌঁসুলি (কলকাতা ইন চার্জ) প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “রাজ্য সরকার আমাকে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেয়নি। মামলা প্রত্যাহারের পূর্ণ অধিকার আইন পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর)-কেই দিয়েছে। সেই ক্ষমতাতেই আমি রাজ্য সরকারের কাছে ওই মামলা তোলার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। লিগ্যাল রিমেমব্র্যান্সার কোনও আপত্তি করেননি।”
প্রদীপবাবু জানান, দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চলছিল। অভিযুক্তদের তিন-চার জন বাদে বাকিরা কেউ নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজিরা দিতেন না। তা ছাড়া, ওই মামলায় অভিযুক্তেরা সকলেই সংখ্যালঘু। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ মামলা করেননি। সব দিক খতিয়ে দেখেই মামলা তুলে নেওয়া সঙ্গত বলে মনে হয়েছে তাঁর। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের আইন প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “মামলা প্রত্যাহারের পূর্ণ এক্তিয়ার সরকারি কৌঁসুলির। যা করার, তিনি করেছেন। আদালত রায় দিয়েছে। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।”
তবে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ কিছু অভিযুক্তকে রেহাই দিতে এবং সামগ্রিক ভাবে সংখ্যালঘু ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখেই শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তাণ্ডব-মামলা। |