বুমেরাং হয়ে পরমাণু বোমা আছড়ে
পড়েছিল আমেরিকার মাটিতেই
ছোট্ট একটা সুইচ। পরমাণু বোমার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মার্কিন মুলুককে! হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকি হতে হয়নি দেশটাকে।
এ হেন খবরই প্রকাশিত হয়েছে একটি ব্রিটিশ দৈনিকে। ঘটনার পঞ্চাশ বছর পরেও যা সমূলে নাড়িয়ে দিয়েছে অর্ধশতাব্দীর মার্কিন ইতিহাস।
আগেও বহু বার এ ধরনের দাবি উঠেছিল। কিন্তু সত্যতা প্রমাণিত হয়নি কোনও দিনই। কারণ আমেরিকা মেনেই নেয়নি। বরং ভিত্তিহীন খবর বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।
তাই এমন একটা আবিষ্কার হয়তো অপ্রত্যাশিতই ছিল ব্রিটিশ দৈনিকের সাংবাদিকটির কাছে। তথ্য জানার অধিকার আইনে তিনি ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবস্বরূপ তাঁর হাতে আসে বহু দিন গোপন ফাইলে বন্দি হয়ে থাকা একটি তথ্য। তাতে লেখা “আমেরিকা ও সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মাঝখানে রক্ষাকবচ হয়ে ছিল একটা সাধারণ সুইচ।” আর অবশ্যই কয়েক সেকেন্ড।
দিনটি ছিল ২৩ জানুয়ারি, ১৯৬১ সাল। উত্তর ক্যারোলাইনার গোল্ডসবোরোর উপর দিয়ে পাক খাচ্ছিল বি-৫২ বোমারু বিমান। সাধারণ নিয়মমাফিক উড়ান। সিমোর জনসন বিমানঘাঁটি থেকে যাত্রা শুরুর পর মাঝ-আকাশে হঠাৎই বিপর্যয়। ভেঙে পড়ে বি-৫২। আর সে সঙ্গে গোল্ডসবোরোর মাটিতে আছড়ে পড়ে বিমানে থাকা দু’-দু’টি হাইড্রোজেন বোমা। ৪০ লক্ষ টন টিএনটি বিস্ফোরকে ঠাসা বোমাদু’টির একটি গিয়ে পড়ে ফারোর চাষজমিতে। দ্বিতীয়টি বিগ ড্যাডি’স রোডে। বিস্ফোরণ রুখতে তৈরি বোমার চারটে নিরোধক ব্যবস্থার তিনটেই তখন আর কাজ করছে না। এ দিকে মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফায়ারিং সিগনাল পৌঁছে গিয়েছে বোমার অন্দরে। রক্ষাকবচ বলতে একটা সুইচ। সে দিন যদি সেটাও কাজ না করত, হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত গোটা ওয়াশিংটন, বাল্টিমোর, ফিলাডেলফিয়া এমনকী নিউ ইয়র্ক শহরের বেশ কিছুটা অংশটা। লক্ষ লক্ষ মানুষকে শেষ করে দিত পলকে।
ঠিক যেমনটা হয়েছিল এর ষোলো বছর আগে ১৯৪৫ সালে। জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির উপর আঘাত হেনেছিল মার্কিন পরমাণু বোমা ‘লিটল বয়’ ও ‘ফ্যাট ম্যান’। চার মাসের মধ্যে অন্তত দেড় লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল শুধু হিরোশিমায়। নাগাসাকিতে সংখ্যাটা আরও এক লক্ষ। বস্তুত আজও সে দাম চুকোতে হচ্ছে জাপানকে। আমেরিকাকে কিন্তু আরও বড় মাসুল দিতে হতো। লিটল বয় কিংবা ফ্যাট ম্যানের থেকে অন্তত ২৬০ গুণ শক্তিশালী ছিল সেটি।
প্রমাণস্বরূপ যে তথ্যটি ব্রিটিশ দৈনিকের হাতে এসেছে, সেটি লেখা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। লেখক পার্কার এফ জোনস। স্যান্ডিয়া জাতীয় গবেষণাগারের পরমাণু অস্ত্র নিরাপত্তা দফতরের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তিনি। পার্কারের লেখায় মেলে ঘটনার ঠিক তিন দিন আগে প্রেসিডেন্টের পদে শপথ নিয়েছিলেন জন এফ কেনেডি। দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তখনও তেমন সড়গড় নন তিনি। লেখক বলেছেন, সে দিনের সেই সুইচটা যদি অকেজো হয়ে যেত, অবধারিত ছিল পরমাণু বিপর্যয়। কেউ রক্ষা করতে পারত না আমেরিকাকে।
পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিক ১৯৬৪ সালে একটি ব্যাঁঙ্গাত্মক ছবি বানিয়েছিলেন “ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ অর: হাউ আই লার্নড টু স্টপ ওরিং অ্যান্ড লাভ দ্য বোম্ব”। সে ছবির নামে জোনস তাঁর রিপোর্টের নাম রেখেছিলেন “গোল্ডসবোরো রিভিসিটেড অর: হাউ আই লার্নড টু মিসট্রাস্ট দ্য এইচ-বোম্ব”।
সত্যিই তাই। আমেরিকার নিজের অস্ত্রই বুমেরাং হয়ে যেত পারত। নিশ্চিহ্ন করে দিত পারতো কেনেডির আমেরিকাকে। বদলে যেত ইতিহাস। বদলায়নি ছোট্ট একটা সুইচ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.