পুরভোট হলেও যুযুধান শিবিরের হাতিয়ার যেন টম্যাটো ও লঙ্কা! অন্তত হলদিবাড়িতে ভোট প্রচার শুনলে সে কথা মনে হতে পারে। অবশ্য উত্তরবঙ্গে তো বটেই, গোটা রাজ্যে টম্যাটো ও লঙ্কার শহর বলে পরিচিত হলদিবাড়িতে এমন হওয়ারই কথা। ভোটে সব দলের আলোচনাতে ফিরে আসছে টম্যাটো ও লঙ্কার কথাই। এ বারও সেই একই ছবি। একই অভিযোগ। জবাবে মিলছে সেই একই আশ্বাস। তৃণমূল আক্রমণ শানাতে গিয়ে বারেবারেই বলছে, কেন হলদিবাড়ির বাজারে যাতায়াত করতে গিয়ে টম্যাটো, লঙ্কা চাষিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। কেনই বা হলদিবাড়ি শহরবাসী যানজটের যন্ত্রণা থেকে আজও রেহাই পেলেন না? রিকশার স্ট্যান্ড কেন গড়া যায়নি? রাস্তার হালও কেন ফেরে না? একটু বৃষ্টি হলেই কেন নিকাশি নালা উপচে রাস্তা ভেসে যায়। কোথাও তো দু-তিন দিন ধরে জল জমে থাকে কেন? এই ভোগান্তির ছবিটা বদলে দেওয়ার জন্য ‘পুরসভায় পরিবর্তন চাই’ ডাক দিচ্ছেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। তাতে প্রতিটি সভায় উপচে পড়া ভিড় সহর্ষে হাততালি দিচ্ছে। |
হলদিবাড়ি পুরসভা টানা ২০ বছর ধরে কংগ্রেসের দখলে রয়েছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গৌরাঙ্গ নাগ দু-দশক ধরে চেয়ারম্যান পদে। স্বভাবতই হলদিবাড়ির অলিগলি হাতের তালুর মতোই চেনেন তিনি। টম্যাটো, লঙ্কার মরসুমে শহরের হাট-বাজারের রাস্তায় যানজট কী ভাবে বাড়ছে, শহরবাসীর ক্ষোভ কতটা বেড়েছে, গৌরাঙ্গবাবু বোঝেন। কারণ, টমেটো এবং লঙ্কার মরসুমে গ্রাম থেকে ভ্যান রিক্সায় চাপিয়ে টমেটো, লঙ্কা ঢোকে শহরে। রাস্তায় ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকায় চলাচল করা দায় হয়ে যায়। গৌরাঙ্গবাবুরা স্বীকার করেন, পুর এলাকার অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ যে দুই সবজি, তাদের তো শহরের বাইরে ঠেলে দেওয়া যাবে না। সে জন্য বিকল্প অনেক কিছুর করার ভাবনা হলেও আজও কাজের কাজ হয়নি। শহরে একটি মাত্র রেল গেট। দীর্ঘ সময় গেটটি বন্ধ থাকে।
পুরভোটের প্রচারে পঞ্চম বার ক্ষমতা দখল করলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলতে শোনা যাচ্ছে বিদায়ী চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গবাবুকে। তিনি বলেন, “হলদিবাড়ি যানজট সমস্যার মোকাবিলার জন্যে রেলের অব্যবহৃত জায়গা লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। জায়গা পেলে পাইকারি সব্জি বাজার সম্প্রসারিত হবে। তখন ভ্যান রিক্সায় সব্জি এনে কৃষককে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না।” রেলগেটে আন্ডারপাস তৈরির জন্যে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। রিক্সাস্ট্যান্ডের জন্যে বাজারের কাছে ধানহাটির মাঠটি নেওয়ার আইনগত প্রক্রিয়া চলছে বলেও বিদায়ী চেয়ারম্যানের দাবি। একইসঙ্গে তাঁর দাবি, “রাস্তাঘাট নিয়মিত সংস্কার করা হয়। নিকাশি পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছে। হলদিবাড়ি শহরে কোথাও সারা দিন জল জমে থাকে, এমন অভিযোগ আমার কাছে অন্তত নেই।” |
হলদিবাড়ি পুরসভা |
আসন ১১
প্রার্থী ৪৪
মোট ভোটার ৯৮০৪।
কংগ্রেস, তৃণমূল, বামেরা
সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
বিজেপি ৭, এসইউসি
সমর্থিত নির্দল ৩, নির্দল ১। |
|
হলদিবাড়ি পুরসভায় কর্তৃত্ব কায়েম করতে পারেননি বামেরা। তাই এবার তাঁরা পুরসভা দখলের কথা বললেও সুরটা আগের চেয়ে অনেকটাই যেন নরম বলে মনে হচ্ছে। তবে বামেরা তাঁদের সাংসদ তহবিলের টাকায় পুরসভায় কী ধরনের কাজ হয়েছে, সেই তালিকা দিয়ে নজর কাড়ার চেষ্টা করে চলেছেন। যেমন হলদিবাড়ির বামফ্রন্টের আহ্বায়ক রথীশ দাশগুপ্ত বলেন, “পুরসভা কংগ্রেসের দখলে থাকলেও প্রান্তিক অতিথি নিবাসের নির্মাণ থেকে স্কুল, কলেজের ভবন তৈরি, খেলার মাঠ সংস্কার এবং রাস্তা সংস্কারের জন্যে সাংসদ এবং বিধায়ক তহবিলের টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা পুরসভা দখল করলে সাংসদ এবং বিধায়কের তহবিলের টাকায় ব্যাপক উন্নতি করা হবে।” রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াইয়ের জেরে যে ভোটা কাটাকুটি হবে তাতে বাড়তি লাভের আশাও কিন্তু বামেরা করছেন।
শেষ পর্যন্ত ভোট পর্ব মিটবে। নয়া পুরবোর্ডও গঠন হবে। কিন্তু, টম্যাটো, লঙ্কার শহরের সমস্যা আরও বাড়বে না কমবে সেটাই এখন দেখার। |