হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ, হলদিয়া ডেন্টাল কলেজ এবং বি সি রায় হাসপাতালের পরিচালন পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করলেন সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ। নিজের হাতে তৈরি এই তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগের কথা দিন দশেক আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। হাত বদল হয়ে এই তিন সংস্থা চলে যাচ্ছে কলকাতার এক ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর হাতে। তারা লক্ষ্মণ শেঠ-সহ তিন সংস্থার পুরনো পরিচালন পর্ষদের সব সদস্যের পদত্যাগপত্র রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
১৯৯৫ সালে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন (আইকেয়ার) নামে একটি সংস্থা তৈরি করেছিলেন হলদিয়ার তৎকালীন সিপিএম বিধায়ক লক্ষ্মণ শেঠ। মাত্র ৩৭ টাকায় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কাছ থেকে ৩৭ একর জমি নিয়ে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে নার্সিং, বিএড থেকে আইন, মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডেন্টাল কলেজ নির্মাণ করা হয়। তত দিনে তিনি তমলুকের সাংসদ। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা বদলের পর হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে গোলমাল শুরু হয়। পরিকাঠামোর অভাবের কারণ দেখিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (এমসিআই) কাছে ওই কলেজের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানায় স্বাস্থ্য দফতর। এমসিআই-এর প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসে। বাতিল হয় মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের অনুমোদন। যদিও তত দিনে ২০১১-’১২ সালে প্রথম ব্যাচের ছাত্র ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এমসিআই-এর সিদ্ধান্তে অথৈ জলে পড়েন তাঁরা। পাল্টা মামলা করেন লক্ষ্মণবাবুরা। আদালতের রায় তাঁদের পক্ষে গেলেও স্বাস্থ্য দফতর এখনও পর্যন্ত ওই কলেজের ছাড়পত্র দেয়নি। এ বছর নতুন করে আর ছাত্র ভর্তিও হয়নি।
লক্ষ্মণবাবু এ দিন বলেন, “সরকারের যত আক্রোশ তো আমার বিরুদ্ধে। আমার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কেন নষ্ট হবে? তা ছাড়া, গত দু’বছরে আইকেয়ারের কলেজগুলির অবস্থা খারাপ হয়েছে। ছাত্র ভর্তি না-হওয়ায় আর্থিক দায়ও বেড়ে হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। তাই আমি পদত্যাগ করে কলেজ দু’টি ও হাসপাতালের পরিচালন ভার অন্য একটি সংস্থার হাতে তুলে দিচ্ছি। সমস্ত দায় মিটিয়ে নতুন গোষ্ঠীই সংস্থাগুলি চালাবে। সেগুলির পরিচালনায় আমার কোনও ভূমিকা থাকবে না।” তবে তিনি আইকেয়ারের চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকবেন জানিয়ে লক্ষ্মণবাবু বলেন, “আমাদের আরও ১০টি কলেজ রয়েছে। সেগুলিই চালাব।”
সরকারি সূত্রের খবর, লক্ষ্মণ শেঠ সরে গিয়ে নতুন পরিচালন পর্ষদ গঠিত হওয়ায় স্বাস্থ্য দফতরও এখন হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে বিবেচনা শুরু করেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন,“লক্ষ্মণ শেঠের ইস্তফা পত্র পেয়েছি। নতুন যে গোষ্ঠী ওই সংস্থাগুলি নিচ্ছে তারাই তা স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছে। কলেজের অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করছি না। সরকার উপযুক্ত সময়ে সিদ্ধান্ত নেবে।” ওই ব্যবসায়িক গোষ্ঠীটির অবশ্য দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েই মেডিক্যাল, ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতালের ভার নিচ্ছে তারা। লক্ষ্মণবাবুর জায়গায় যিনি ওই তিন সংস্থার চেয়ারম্যান হচ্ছেন, সেই অনিতা সিংহানিয়া বলেন, “রাজ্য সরকারের পরামর্শ-সহযোগিতা নিয়েই আমরা হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের ভার নিচ্ছি। এই কলেজকে রাজ্যের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট মহলের সমর্থন পাব বলেই আশা রাখি।”
ওই গোষ্ঠীর এক মুখপাত্র জানান, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতালের পরিচালন ভার ছাড়াও আইকেয়ারের বাকি কলেজগুলির পরিচালন সমিতিতে অর্ধেক প্রতিনিধি তাঁরা রাখবেন। লক্ষ্মণবাবু আইকেয়ারের চেয়ারম্যান থাকলেও ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন তাঁরাই।
হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্ব নেওয়া গোষ্ঠীটির কলকাতায় তিনটি নার্সিংহোম ছাড়াও বাইপাসের ধারে একটি পাঁচতারা হোটেল এবং আবাসন প্রকল্প রয়েছে। নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানির লাইসেন্স-প্রাপ্ত এই সংস্থাটি অর্থলগ্নির কারবারের সঙ্গেও জড়িত বলে জানা গিয়েছে।
|