|
|
|
|
বিরুদ্ধে ৩ বাম ভোট, হলদিয়ায় হারলেন তমালিকা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
তিন বাম কাউন্সিলর বিপক্ষে ভোট দিলেন। যাঁদের মধ্যে দু’জন তাঁর নিজের দলেরই সদস্য। আরও এক জন অনুপস্থিত। এই চারমূর্তির ধাক্কায় অনাস্থা প্রস্তাবের তলবিসভায় হেরে হলদিয়ার পুরপ্রধানের পদ খোয়ালেন সিপিএমের তমালিকা পণ্ডা শেঠ।
শুক্রবার তৃণমূলের ১১ কাউন্সিলরের সঙ্গে সিপিএমের দুই ও সিপিআইয়ের এক জন হাত তুলে ভোট দেন (মোট ১৪) তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে। ২৬ আসনের হলদিয়া পুরসভায় পুরপ্রধানের পক্ষে ছিলেন ১১ জন (গরহাজির এক)। অর্থাৎ, ১১-১৪ ভোটে হারলেন লক্ষ্মণ শেঠের স্ত্রী।
পুরসভা চত্বরে ১৪৪ ধারা এবং তার সঙ্গে জুড়ে থাকা উত্তেজনার মধ্যে ভোটাভুটি হয়ে যাওয়ার পরে তমালিকাদেবী আঙুল তুলেছেন তৃণমূলের দিকে। তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূলের আইনি ও রাজনৈতিক চাপে কয়েক জন বাম কাউন্সিলরের পারিবারিক জীবন ও জীবিকা বিপর্যস্ত হয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটা বোর্ডকে ওরা যে ভাবে দখল করল, মানুষই সময় মতো তার জবাব দেবে।” নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলায় হাজিরা দিতে এ দিনই তমলুকে এসেছিলেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। তিনি আবার বলেন, “পুরপ্রধান অপসারিত হয়েছেন শুধু। যাঁরা বিপক্ষে গিয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।”
যাঁর দিকে প্রকারান্তরে সিপিএম নেতৃত্বের আঙুল, তিনি তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। গত বছর যখন বামেরা হলদিয়া পুরসভা দখল করেন, তখনই এক সভায় শুভেন্দুবাবু ঘোষণা করেছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যে পুরসভা দখল করবেন তাঁরা। এ দিন তিনি কিন্তু বলেন, “বামেরা ঘর গোছাতে পারেননি। এটা ওঁদের ব্যর্থতা। উন্নয়নের স্বার্থে ওই বাম কাউন্সিলরেরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
এ দিন নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগে তলবিসভার জন্য পুরসভায় ঢোকেন তমালিকাদেবী-সহ বামেদের ১১ জন কাউন্সিলর। কিছু পরে তৃণমূল কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে ভিতরে ঢোকেন সিপিআই কাউন্সিলর শুকদেব দোলই, সিপিএম কাউন্সিলর বিকাশ জানা ও গোপালচন্দ্র দাস। গরহাজির সিপিএমের দুলালচন্দ্র জানা। পুরসভায় হাজির বাম সদস্যরা তখনই বুঝে যান, ফল কী হতে চলেছে। সিপিএম সূত্রের খবর, এই চার জনের মধ্যে বিকাশবাবু ছাড়া অন্যদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংঘর্ষের মামলা রয়েছে।
তৃণমূলের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়া তিন বাম কাউন্সিলরকে এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তলবিসভায় ভোট দেওয়া মিটতেই তাঁরা পুরসভা থেকে গাড়িতে বেরিয়ে যান। বাড়িতে পাওয়া যায়নি পুরসভায় গরহাজির থাকা বাম কাউন্সিলরকেও। ওই চার জনের মোবাইলও বন্ধ ছিল। তমালিকাদেবী বলেন, “যাঁরা বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই যোগাযোগ করতে পারছিলাম না আমরা।”
প্রশ্ন উঠেছে, দলের নির্দেশ না মেনে যাঁরা তমালিকাদেবীর বিরুদ্ধে ভোট দিলেন, তাঁরা কি দলত্যাগ বিরোধী আইনের আওতায় পড়বেন? তাঁদের সদস্যপদ কি এর পরে খারিজ হয়ে যাবে? পুর আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলত্যাগ বিরোধী আইনের কোপে পড়ার সম্ভাবনা কম। বিষয়টি যাবে মহকুমাশাসকের কাছে। তিনি কত দিনে রায় দেবেন, তার নির্দিষ্ট দিন বেঁধে দেওয়া নেই। প্রশ্ন উঠেছে তমালিকা অপসারণের পরে হলদিয়া পুরসভার ভবিষ্যৎ নিয়েও। এসডিও (হলদিয়া) শঙ্কর নস্কর জানান, নিয়ম অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে পুরপ্রধান নির্বাচনের জন্য সভা ডাকার কথা উপ-পুরপ্রধানের। না ডাকলে তৃণমূলের যে কোনও তিন কাউন্সিলর আরও সাত দিনের মধ্যে ওই সভা ডাকতে পারেন। সেই সভায় তৃণমূল কাকে পুরপ্রধান পদে দাঁড় করাবে? শুভেন্দু বলেন, “সেটা ঘোষণার সময় আসেনি।” নতুন পুরপ্রধান নির্বাচনের দিন আরও কিছু বাম কাউন্সিলরের সমর্থন পাবেন বলে দাবি করেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের দেবপ্রসাদ মণ্ডল। বোর্ড দখল নিশ্চিত জানিয়ে তিনি বলেন, “হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দুবাবুর সহযোগিতায় যৌথ ভাবে কাজ করে উন্নয়নের জোয়ার আনব।” তবে নতুন পুরপ্রধান কে হবেন, জানা যায়নি।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, “তৃণমূল যে গণতন্ত্রের কথা বলে, তা সাধারণ মানুষের নয়। হলদিয়ার মানুষ যে রায় দিয়েছিলেন, গায়ের জোরে তৃণমূল তা বদলে দিল।” সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের দাবি, “আমাদের কাউন্সিলরের উপরে গত দেড় বছর ধরে তৃণমূল অত্যাচার করছিল। বাধ্য হয়েই এক জন তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন।”
শনিবার দিনটা লক্ষ্মণ শেঠের পক্ষে ছিল মিশ্রফল। হলদিয়া পুরসভায় তমালিকাদেবীর হারের দিনই নন্দীগ্রাম নিখোঁজ মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, লক্ষ্মণবাবু আদালতের নির্দেশ ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় ঢুকতে পারবেন না। উল্টো দিকে, এ দিনই হাইকোর্ট রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে হলদিয়া মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন ফিরিয়ে দেওয়া হোক। যা দেখে হলদিয়ায় সিপিএমের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশ বলছেন, “পুরসভা আর সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কার মাঝে হাইকোর্টই স্বস্তির বার্তা বয়ে আনল লক্ষ্মণবাবুর জন্য।” |
|
|
|
|
|