জমি ফেরতের আশ্বাস, সুবিধা চান অনিচ্ছুকরা
ত বার যে আশ্বাস দিয়েছিলেন মোবাইলে, এ বার সরাসরি তা দিলেন সভামঞ্চ থেকে।
গত বছর পুজোর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে জমি ফেরতের একপ্রস্ত আশ্বাস পেয়েছিল সিঙ্গুর। তাতে ‘অনিচ্ছুক’দের প্রত্যাশা মেটেনি। এ বারও পুজোর আগে একই আশ্বাস পেলেন তাঁরা। এ বারেও মিটল না তাঁদের প্রত্যাশা। ‘অনিচ্ছুক’দের কেউ কেউ বলেই ফেললেন, “এক বছরে জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। আদালতে সিঙ্গুর-মামলার নিষ্পত্তি কবে হবে কেউ জানে না। তত দিন পর্যন্ত রাজ্য সরকার যদি সাহায্য কিছুটা বাড়াত, তা হলে সুবিধা হত।”
শুক্রবার সিঙ্গুর ব্লক অফিসে জেলার উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে কামারকুণ্ডুর ভোলার মাঠে আয়োজন করা হয়েছিল তাঁর জনসভার। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর-মামলার শুনানি আছে। আদালত আদালতের কথা বলবে। আমি কথা (গ্যারান্টি) দিচ্ছি, অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দেবই। আমি পালিয়ে যাওয়ার লোক নই। কোনও দু’নম্বরী লোক নই। আমার উপরে পুরো ভরসা রাখতে পারেন।”
গত বছর ২৫ সেপ্টেম্বর ‘সিঙ্গুর দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সশরীরের ছিলেন না। মুকুল রায়ের মোবাইলে ফোন করে ‘অনিচ্ছুক’দের জমি ফেরতের একই আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। তবে, সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর-মামলা হেরে গেলে রাজ্য সরকার কী ভাবে জমি ফেরতের ব্যবস্থা করবে, তার কোনও দিশা কোনও বারই তাঁর কাছ থেকে পেল না সিঙ্গুর।

সিঙ্গুরবাসীর সঙ্গে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার কামারকুণ্ডুর ভোলার মাঠে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।
সিপিএমের সিঙ্গুর জোনাল কমিটির সম্পাদক পাঁচকড়ি দাসের ‘টিপ্পনী’, “গ্যারান্টির কথা তো মানুষ দীর্ঘদিন ধরে শুনছেন। মানুষ এ সব এখন আর বিশ্বাস করেন না।
দাগ কাটার মতো কিছু তো মানুষ পেলেন না।”
দু’বছর আগে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার প্রথম সিদ্ধান্তই ছিল টাটাদের চলে যাওয়া প্রকল্পের জমি ‘অনিচ্ছুক’দের ফিরিয়ে দেওয়া। সে জন্য প্রয়োজনীয় আইনও তৈরি করে রাজ্য সরকার। সেই আইনকে চ্যালেঞ্জ জানায় টাটা মোটরস।
চলতে থাকে আইনি টানাপোড়েন। কলকাতা হাইকোর্টের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে সেই মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।
আর এই দু’বছরে সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’দের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হয়েছে। বেড়েছে ক্ষোভ। তা আঁচ করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ওই সব চাষি-খেতমজুরদের পরিবারপিছু মাসে দু’হাজার টাকা এবং দু’টাকা দরে ১৬ কেজি করে চাল দিচ্ছে। শুক্রবারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী এক সঙ্গে আগামী ছ’মাসের জন্য চালের কুপন বিলি করেছেন। সিঙ্গুর আন্দোলনের ‘শহিদ’ তাপসী মালিক এবং রাজকুমার ভুলের নামে দু’টি রাস্তার নামকরণও করেছেন। সভা শেষে ‘অনিচ্ছুক’ মহিলাদের কাছে টেনে নিয়েছেন।
কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমুখী দামে নাজেহাল ‘অনিচ্ছুক’রা এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থা রেখেও সরাসরিই বলছেন, “দু’হাজার টাকায় আর কুলোচ্ছে না।” সিংহেরভেড়ির মোহিত কোলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে এসেছিলেন। তাঁর চার বিঘা জমি গিয়েছে টাটাদের প্রকল্পে। তিনি বলেন, “জমি-আন্দোলনে প্রথম থেকে ছিলাম। দিদির (মমতা) উপরে এখনও ভরসা রাখছি। কিন্তু সরকারি সাহায্যটা একটু বাড়ানো হলে বা অন্য কোনও সুবিধা দেওয়া হলে আমাদের মতো গরিব মানুষের অনেক উপকার হত।” বাজেমিলিয়ার নিমাই সাঁতরার দু’বিঘা জমি গিয়েছে প্রকল্পে। তিনিও বলেন, “দিদির উপরে ভরসা ছিল, আছে, থাকবেই। আদালতের ব্যাপারে সময় লাগছে। এটাতে দিদির কিছু করার নেই। কিন্তু বাজার যা পড়েছে, দিদি আর্থিক সাহায্য বাড়ালে সুবিধা হত। মাসকাবারি বাজারেই তো দু’হাজার টাকার বেশিটা চলে যায়। হাতে কিছুই থাকে না।”
সভার মাঠে ভাল ভিড় হলেও এ দিন ব্লক অফিসে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালীন গ্রামবাসীদের সেই পুরনো উন্মাদনা বা ভিড় দেখা যায়নি। এমনকী, ব্লক অফিস থেকে মমতা যে পথ ধরে কামারকুণ্ডু পৌঁছন, সেই পথে ভিড় মোকাবিলার জন্য আগে থাকতে রাস্তার দু’ধারে মোটা দড়ি ফেলে রেখেছিল পুলিশ। কিন্তু তেমন ভিড় না হওয়ায় সেই দড়ি পুলিশকে আর ব্যবহার করতে হয়নি।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.