বাজার ধরতে হাতিয়ার ফেসবুক
ফেসবুকে বাবার তৈরি জাকার্ড গরদের শাড়ির ছবি দিয়েছিলেন তুহিন মণিগ্রাম। নেহাৎ-ই খেয়াল বশে। আর তাতেই কেল্লা ফতে। তুহিনের সেই শাড়ির ছবি নজর কেড়েছে অনেকেরই। অনেকেই টেলিফোনে তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগ্রহ জানিয়েছেন শাড়ি কিনতে। জনা চারেক খদ্দের তো ইতিমধ্যেই সরাসরি তুহিনের বাড়ি গিয়ে তাঁর বাবার তৈরি শাড়ি কিনেও নিয়ে গিয়েছেন।
কলেজ ছাত্র তুহিনের এই উদ্যোগই মির্জাপুরের তাঁতশিল্পীদের কাছে খুলে দিয়েছে ব্যবসার নতুন একটি দিক।
রঘুনাথগঞ্জ লাগোয়া মির্জাপুরে এখন কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন তাঁতশিল্পীরা। গত বারের পুজোয় সে ভাবে বাজার পায়নি তাঁদের শাড়ি। এ বার কিন্তু দামি জাকার্ড গরদের চাহিদা মেটাতে রীতিমতো হিমসিম অবস্থা তাঁদের। আর কম বাজেটের মধ্যে নজর কাড়ছে কাঁথা স্টিচ, আরি স্টিচ ও নিমজরি। পুজোর এখনও মাস খানেক বাকি। কিন্তু স্টিচের শাড়ি সে ভাবে মিলছে না মির্জাপুরের দোকানগুলিতে। তুলনায় বালুচরির চাহিদা নেই বললেই চলে। জামদানিও সে ভাবে নজর কাড়ছে না ক্রেতাদের।
প্রচার অন লাইনেই। —নিজস্ব চিত্র।
মুর্শিদাবাদের গরদ সিল্কের অন্যতম পীঠস্থান মির্জাপুর। সেখানকার সিল্ক শাড়ির বরাবরই বাজারে চাহিদা রয়েছে। কিন্তু ঠিক মতো প্রচারের আলোয় আসতে না পারায় জেলার বাইরে এই সিল্ক শাড়ির বাজার সে ভাবে গড়ে ওঠেনি আজও। অন্যতম নামী তাঁতশিল্পী ধর্মলাল কাপুড়ির ৩টি তাঁত রয়েছে বাড়িতে। দু’ভাই কাজ করেন সেখানে। গত ৩ মাস থেকে সকাল সন্ধ্যা খেটেও শাড়ির যোগান দিতে পারছেন না তাঁরা।
ধর্মলালবাবুর কথায়, “মির্জাপুরের জাকার্ড গরদের কদর রয়েছে সর্বত্র। ভাল ভাবে একটি জাকার্ড গরদ তৈরি করতে অন্তত সাড়ে চারশো গ্রাম সুতোর ভরনা এবং আড়াইশো গ্রাম সুতোর তানা লাগে।” শাড়ির প্রস্থ যে সুতো দিয়ে তৈরি হয়, তার নাম ভরনা। তানা দিয়ে তৈরি হয় শাড়ির দৈর্ঘ্য। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত বছর পুজোতে যে সুতো মিলেছে কেজি প্রতি ১১০০ টাকায়, এ বার তা প্রায় ১৮০০ টাকার কাছাকাছি। তানার ডিজাইনের সুতো কেজি প্রতি ৩২০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে প্রায় ৪০০০ টাকা। ধর্মলালবাবু বলেন, “ফলে এখন একটা জাকার্ড গরদ তৈরিতেই খরচ পড়ছে ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা। দোকানে কিনতে গেলে ৩৫০০ টাকা দাম পড়বে।” তিনি জানান, মাসে বড় জোর ৭ থেকে ৮টি জাকার্ড গরদ বানানো সম্ভব। ভরনা ও তানার সুতোর মানের উপরই নির্ভর করে শাড়ির উৎকর্ষ।
তিনি বলেন, “এত দাম বলে অনেকে সিল্কের উপর সুতোর কাজ করে আরি ও কাঁথা স্টিচ চাইছেন। কারও ঝোঁক নিমজরির দিকে। দামে এ গুলো জাকার্ড গরদের অর্ধেক। তবে সিঙ্গল জাকার্ডের দাম কম।” তুহিনের বাবা তাপসবাবু দু’টো তাঁত চালান। তাঁর কথায়, “মির্জাপুরে মূলত তৈরি হয় জাকার্ড, বালুচরি, কোরিয়াল ও জামদানি। সাধারণ সিল্কের শাড়িকে আরি স্টিচ ও কাঁথা স্টিচের কাজ করা হয় হুগলি ও বোলপুর থেকে। বেশির ভাগ তাঁতশিল্পী তাই এখানে গরদের শাড়ি তৈরি করে। সবটাই তৈরি হয় তাঁতেই। ফলে বাইরে থেকে রঙ করে আনার ব্যাপার নেই।”
তুহিন বলেন, “ফেসবুকে বাবার বানানো শাড়ির ছবি দিয়েছিলাম। অনেকের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।” মির্জাপুরের নামী ব্যবসায়ী গৌতম মনিয়ার মতে, “এ বারের পুজোয় সব চেয়ে বেশি চাহিদা দামি জাকার্ড গরদের।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.