তেরো বছরের দাম্পত্যে আগেও এসেছিল বহু ঝড়ঝাপ্টা। কোনও বারই অবশ্য সে সব ঝড়কে ঘর ভাঙতে দেননি। কিন্তু শেষরক্ষা বোধহয় হল না। বলিউডে জোর গুঞ্জন, শীঘ্রই বিবাহবিচ্ছেদ হতে চলেছে হৃতিক রোশন-সুজান খানের। কারণ?
এখনও অজানা।
বিষয়টি নিয়ে জনসমক্ষে এখনও মুখ খোলেননি কেউ। এমনকী, বিবাহবিচ্ছেদের জল্পনা ছড়ানোর পর ‘লাইমলাইট’ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন সুজান। তবে কানাঘুষোয় যতটুকু জানা গিয়েছে তাতে পরিষ্কার, প্রথমে করিনা কপূর, তার পর বারবারা মোরি এবং আরও বেশ ক’জন নায়িকার সঙ্গে হৃতিকের প্রেমের গল্প শুনতে শুনতে ক্লান্ত সুজান ক্ষান্ত দিতে চান এই ‘সুখী দম্পতির অভিনয়ে’। অতএব বাঁধন আলগা করতে শুরু করেছেন তিনি।
যা প্রথম নজরে আসে রাকেশ রোশনের জন্মদিনের পার্টিতে। রোশন পরিবারের বৌ হয়েও অবশ্য তাতে প্রথম থেকে হাজির ছিলেন না সুজান। ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, পার্টি শুরু হয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ক্ষণ পরে মায়ের সঙ্গে ঢোকেন তিনি। আর পাঁচ জন অতিথির মতোই কিছু ক্ষণ কাটিয়ে বেরিয়ে যান। সন্দেহের শুরু তখনই। যা পাকাপাকি বিশ্বাসে পরিণত হয় গণেশ উৎসবের সময়। রোশন পরিবারে গণপতি উৎসব যেমন ধুমধাম করে আয়োজন হয়, তেমনই ঘটা করে হয় বিসর্জন। গোটা পরিবার তাতে উপস্থিত থাকে। গত বছর পর্যন্ত সুজানও ছিলেন। এ বার দুই ছেলে রিহান এবং রিধান হাজির থাকলেও আসেননি তিনি।
এর পরের ঘটনাটির নেপথ্যে অবশ্য ‘কৃশ’ স্বয়ং। সম্প্রতি তিনি টুইট করেছিলেন, “জাস্ট এ থট ইওর লাইফ ইজ লেস অ্যাবাউট ইউ অ্যান্ড মোর অ্যাবাউট দা পিপল অ্যারাউন্ড ইউ হু লাভ ইউ।” ইঙ্গিতটা কার দিকে, কেনই বা করেছিলেন, ভাবতে গিয়ে অঙ্কটা মিলিয়ে দিলেন অনেকে। ভাঙন ধরেছে সুখী সংসারে। তার উপর গত ক’দিন ধরেই বাবা সঞ্জয় খান এবং মা জারিন খানের সঙ্গে থাকছেন সুজান। ঘনিষ্ঠদের দাবি, সাধারণ কথাবার্তাটুকুও হয় না হৃতিক এবং সুজানের মধ্যে।
সব মিলিয়ে জোরালো হচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদের সম্ভাবনাই। |
যদিও ‘ধুম-থ্রি’র গ্ল্যামারাস চোরের মুখচোখ দেখে বোঝার উপায় নেই এখন তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ঠিক কতটা উথালপাথাল। আগামী নভেম্বরে মুক্তি পাবে ‘কৃশ থ্রি’। পর্দায় তোলপাড় ফেলতে রীতিমতো প্রস্তুত সুপারহিরো। আপাতত ব্যস্ত তার প্রচার নিয়ে। আর তাই বোধহয় বিবাহবিচ্ছেদের ব্যাপারে রা কাড়ছেন না। অসমর্থিত সূত্রের ধারণা, ‘কৃশ থ্রি’র মুক্তির পরে বিষয়টি নিয়ে কিছু শোনা যেতে পারে।
তবে হৃতিক-সুজানের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে জল্পনা এই প্রথম নয়। সময়টা ২০০০ সাল। কিছু দিন আগেই মুক্তি পেয়েছে ‘কহো না প্যায়ার হ্যায়।’ রাতারাতি প্রথম সারির অভিনেতাদের তালিকায় চলে এলেন হৃতিক। আর সে বছরের ডিসেম্বরেই বিয়ে করলেন কৈশোরের বান্ধবী সুজানকে। সমস্যার শুরু তার পর থেকেই। ২০০১ সালে মুক্তি পেল সুভাষ ঘাইয়ের ‘ইয়াদেঁ’। ছবি বক্স অফিসে তেমন সাড়া না ফেললেও হৃতিক-করিনার রিল এবং রিয়েল লাইফ রোম্যান্স আলোড়ন ফেলেছিল। তাতে টালমাটাল হয়েছিল হৃতিক-সুজানের দাম্পত্যও। সে বার পরিস্থিতি সামলেছিলেন রাকেশ। জনশ্রুতি, করিনার সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করতে বারণ করেছিলেন ছেলেকে।
পরিস্থিতি সে বারের মতো নিয়ন্ত্রণে এলেও বেশ ক’বছর পরেই তা জটিল হয়ে ওঠে। ‘কাইটস’ ছবির নায়িকা বারবারা মোরির সঙ্গে হৃতিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তখন বলিউডের অন্যতম ‘গসিপ’। ফল? ঘর ছাড়লেন সুজান। এ বারও ত্রাতার ভূমিকায় রাকেশ। সংবাদমাধ্যমকে জানালেন, তাঁদের বাড়ি মেরামতির জন্যই বাপের বাড়ি থাকছেন সুজান। যদিও তামাম বলিউড জানত, বাড়ি-ঘর নয়, মেরামতি চলছে হৃতিক-সুজানের সম্পর্কের।
এর পরও অবশ্য ‘সুখী দম্পতির’ ছবি ফিরে পেতে নেমে পড়েছিলেন হৃতিক-সুজান। দেখিয়েছিলেন, কবজিতে একই রকম উলকি আঁকিয়েছেন দু’জনে। ঘটনাচক্রে হুবহু একই রকম উল্কি দেখা গিয়েছিল বারবারার হাতেও। এমনকী বলিউডের প্রযোজকদের কাছে বারবারার নাম সুপারিশ করতেও শোনা গিয়েছিল হৃতিককে। সব মিলিয়ে সুজানের সন্দেহ কমেনি। শোনা যায়, সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘গুজারিশ’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময়ও সুজান পাশে পাশে থাকতেন হৃতিকের।
সেই সব কিছু নিয়েই তেরো বছর পার করল তাঁদের দাম্পত্য। কিছুটা সুখে, বাকিটা হয়তো সুখের অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে। এর শেষ পরিণতি বিচ্ছেদ কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। ভাঙনটা যদিও চোখে পড়ছেই। |