পুরভোটের জেরে এবারের পুজোর জৌলুস ফিকে হয়ে পড়েছে বালুরঘাটে। ২১ সেপ্টেম্বর পুরসভার নির্বাচন। এক মাস ধরে শহরময় ক্লাব সদস্যরা বিভিন্ন দলের হয়ে ভোটের প্রচারে ব্যস্ত। পুজোর আয়োজক ক্লাবগুলির বড় বড় প্যান্ডেলের গেট, তোরণের জায়গায় রাস্তা জুড়ে শোভা পাচ্ছে রাজনেতিক নেতানেত্রীর ছবি লাগানো বড় তোরণ, হোর্ডিং। পুজোর চাঁদা তোলা শিকেয়। পুরভোটকে ঘিরেই ব্যস্ত অধিকাংশ পুজোর আয়োজক ও উদ্যোক্তারা। তার উপরে শহরের বিগ বাজেটের পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের একাংশ ডান ও বাম প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে যাওয়ায় ক্লাব সদস্যরাও প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পুজোর বাকি আর ২০ দিনের মত। জেলায় সেরা পুজোর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শেষ অবধি কতটা কি হবে, তা নিয়ে চিন্তিত শহরের কংগ্রেস পাড়ায় বিগ বাজেটের পুজো করে আসা কচিকলা ক্লাবের কর্মকর্তারা। রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর পাড়ার এই ক্লাবের সভাপতি সুখেন্দু চট্টোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রার্থী। তিনি বিদায়ী আরএসপির চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়ছেন। সুখেন্দুবাবুকে জেতাতে ক্লাবের বড় অংশের সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সুখেন্দুবাবু বলেন, “সকলেই পুজো প্রস্ততি থেকে কিছুটা সরে। এবারেও কচিকলার পুজোর আকর্ষণ থাকবে।”
শহরের বেলতলাপার্ক এলাকার নিউটাউন ক্লাবের পুজোর উদ্যোক্তা অরিজিৎ মোহন্ত আরএসপি-র প্রাক্তন কাউন্সিলর। এবার তাঁর স্ত্রী আরএসপির প্রার্থী। ২৪ সেপ্টেম্বর পুরভোট গণনার আগে ক্লাব সদস্যদের কোনও ভাবেই পুজো প্রস্তুতির কাজে যুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রতি বছর এই সময় ওয়ার্ডগুলিতে পরিবেশ অন্য রকম থাকে। ঘনঘন ক্লাবের বৈঠক, মণ্ডপের প্রস্তুতি। চাঁদা তোলার ব্যস্ততা। এবারে অভিযাত্রী, সৃজনী, উত্তমাশা, ত্রিধারা, কবিতীর্থ, যুবসঙ্ঘ এবং বিপ্লবী সঙ্ঘের মত বড় পুজোর উদ্যোক্তারা ভোটের প্রভাবে পুজোর বাজেট কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছেন। উদ্যোক্তাদের একাংশের বক্তব্য, ক্লাব সদস্যরাই তো অনেক জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের ফল বার না হওয়া পর্যন্ত চাঁদা তোলার কাজ শুরু হবে না। তাছাড়া, চিটফান্ডের মতো সংস্থার সাম্প্রতিক অবস্থার জেরে চাঁদা সংগ্রেহের সমস্যাও এ বারে বড় পুজোর ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে পুজোর উদ্যোক্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন।
মৃৎশিল্পী থেকে জামার দোকান পুজোর উৎসাহ এ বার অনেকটাই কমেছে বলে বালুরঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান। শিল্পী মনা পাল, বাবু দাস, দেবেশ সরকাররা বলেন, “মূর্তির দাম সকলে কমাচ্ছেন। অথচ গত বারের চেয়ে এ বারে নানা জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটও হচ্ছে। তাই উদ্যোক্তাদের যেন এ বার আর পুজোতে মন নেই। ক্লাবে ঘুরে প্রতিমার বায়না আদায় করে নিতে হয়েছে মৃৎশিল্পীকে।”
বালুরঘাটের বুড়িকালীতলার বস্ত্র বিক্রেতা নির্মল অগ্রবাল, শম্ভু অগ্রবাল বলেন, “পুজোর কেনাকাটার ছবিটা এ বারে মিলছে না। এই সময় নতুন জামা কেনার ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকে। এখনও ক্রেতার ভিড় তেমন নেই বললেই চলে। সবাই এখন ভোট নিয়ে ব্যস্ত।” |