সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যজুড়ে দাপট ছিল তৃণমূলের। তবু ডায়মন্ড হারবার পুরসভার নির্বাচনে অন্তর্ঘাতের জুজু তাড়া করে বেড়াচ্ছে । সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াইয়ে কোণঠাসা তৃণমূল আরও বিপাকে পড়েছে গোষ্ঠীবিবাদে।
তৃণমূলের অস্বস্তির কারণ, ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২ ব্লকে প্রভাব বেড়েছে বামফ্রন্টের। ডায়মন্ড হারবার ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে তারা। গ্রামীণ এলাকায় ভোটের হার অনুযায়ী তৃণমূলের একেবারে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বামফ্রন্ট। তৃণমূলের দলীয় অন্তর্ঘাতের জেরেই যে তাদের ফল খারাপ হয়েছে, সে রিপোর্ট পৌঁছেছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। গোষ্ঠীবিবাদ মেটাতে মাস খানেক আগে রাজ্য নেতৃত্ব ডায়মন্ড হারবারের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেন। পুরসভা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের এক জেলা নেতার বক্তব্য, “দলে অন্তর্ঘাতের চোরাস্রোত নিয়ন্ত্রণ করার কাজে রাজ্য নেতারা কতটা সফল হয়েছে সন্দেহ রয়েছে। দলের কাজিয়ায় ভোট কাটাকাটিতে বিরোধীদের লাভের প্রবল সম্ভবনা।”
এ দিকে বিরোধীরা প্রচার শুরু করেছে প্রবল উৎসাহে। সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস, সব দলেরই রাজ্য নেতারা এসে নির্বাচনী প্রচার সভা করছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস। বিজেপি ১৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। লড়াইটা প্রধানত তৃণমূল-সিপিএম হলেও, কোনও কোনও ওয়ার্ডে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি। |
প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগের জন্যও কিছুটা ব্যাকফুটে তৃণমূল। গত ১০ বছর ডায়মন্ড হারবার পুরবোর্ড তৃণমূলের দখলে। বিরোধীদের অভিযোগ, পানীয় জল ও নিকাশির সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ পুরবোর্ড। গত নির্বাচনে ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট-প্ল্যান্ট’ চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছরেও ওই প্ল্যান্ট চালু করতে পারেনি। পুর চেয়ারম্যানের গা-ছাড়া মনোভাবকেও আক্রমণ করছে বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, চেয়ারম্যান আইনজীবী পান্নালাল হালদার কলকাতায় ওকালতির কাজ করার পর বিকেলে অফিসে আসেন।
কী বলছেন পুর চেয়ারম্যান? পান্নালালবাবু ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ প্রসঙ্গে বলেন, “প্রথম তিন বছর বামফ্রন্ট রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল। তখন প্লান্ট তৈরির কাজে বাধা দিয়েছে। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে গত দু’বছর কাজ শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই তা কার্যকর হবে।” সারাদিন দফতরে না-থাকার বিষয়ে তাঁর যুক্তি, “এই পুরসভা ছোট। দিনে দু’ঘণ্টা কাজ করলেই সইসাবুদ সেরে ফেলা যায়। আমি সপ্তাহে তিনদিন পুরসভায় থাকি। পুরসভা থেকে কোনও আর্থিক অনুদান নিই না। সংসার চলে ওকালতির উপার্জনে।”
সিপিএমের তরফে ডায়মন্ড হারবার পুরসভা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী। তিনি বলেন, “দশ বছরে কী উন্নয়ন হয়েছে তা সাধারণ মানুষই বুঝতে পেরেছেন। এখন মানুষ আমাদের দায়িত্ব নিতে বলছে।”
গত পুর নির্বাচনে ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড দখল করেছিল বিজেপি। এবারও পালে হাওয়া প্রবল, দাবি স্থানীয় নেতৃত্বের। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাটআউট, দলীয় পতাকায় ছয়লাপ গোটা শহর। পুরনির্বাচনে বিজেপির তরফে অভিজিৎ দাস (ববি) জানালেন, “সিপিএম-তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে যে মানুষ বিজেপিকে ভাবতে শুরু করেছে, তা পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে টের পেয়েছি। পুরসভার নির্বাচনে সেটাই আরও স্পষ্ট হবে।”
পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ১১টি। বাকিগুলির মধ্যে ২টি বিজেপি, ১টি সিপিএম, ১টি কংগ্রেস ও ১টি পিডিএস। |