বন্ধ রয়েছে চটকল
বিশ্বকর্মা উৎসবের রাত ম্লান মুখেই
কাটাল ব্যারাকপুর-কল্যাণী
শিল্পাঞ্চলের আকাশ আলো করে যে উৎসবে রাতভর জেগে থাকত ব্যারাকপুর-কল্যাণী, বিশ্বকর্মার সেই সন্ধ্যা এখন অন্ধকার। কারখানার গেটে আলোর মালা, দিনভর খাওয়া-দাওয়া এমনকী উত্তর ২৪ পরগনার এই দুই শিল্পাঞ্চলের বেশ কয়েকটি কল-কারখানায় এ দিনে মিলত প্রাক-পুজো বোনাসও। সে সব হারানো অতীত।
দুই শিল্পাঞ্চলের ম্যাড়ম্যাড়ে কিছু মণ্ডপে এখন কাজ-হারানো শ্রমিকদের পুরনো সেই অতীত হাতড়ে চলা। বন্ধ নৈহাটি জুট মিলের এক শ্রমিক কুলি লাইনে তাঁর দশ-বাই দশ ঘরের মোমবাতির আলোয় আক্ষেপ করেন, “বছর পনেরো আগেই দিনটা অন্যরকম ছিল জানেন। মিলের গেটে মেলা বসে যেত। বিশ্বকর্মাপুজোর আগের দিন সন্ধ্যায় শিফ্ট শেষে বোনাসও আসত হাতে। আগে আমাদের শারোদৎসবটা শুরু হয়ে যেত বিশ্বকর্মা পুজোর থেকেই!”
মণ্ডপে চলেছে পুজো। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
গঙ্গার কোল বরাবর ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্প তালুকে এখন কল-কারখানার নিতান্তই করুণ চেহারা। কারখানার গেটে কিংবা কুলি লাইনের টিমটিমে আলোয় ফাটা মাইকের সোল্লাশে দু-একটা পুজো যে হচ্ছে না তা নয়, তবে বড় বাজেটের পুজোর চল আর এখন নেই। কি করেই বা থাকবে? ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ২১টা চটকলের প্রায় সবক’টিই শ্রমিক-মালিক বিরোধ এবং বকেয়া পাওনা সমস্যায় জর্জরিত। উৎপাদন থমকে যাওয়ায় মিলের গেটে লক-আউটের নোটিস ঝুলিয়ে স্তব্ধ অনেকগুলিই। কল্যাণা শিল্পতালুকের ছবিটাও প্রায় একই। ছোট-বড় বেশ কয়েকটি কারখানায় গত কয়েক মাসে লক-আউট ঘোষণার পরে কাজ-হারা শ্রমিকদের আর বিশ্বকর্মী পুজোয় মন নেই।
কারড়ায়া শ্রমিকেরাই মূলত পুজোর দায়িত্ব নেন। কল্যাণীর একটি পরিচিত বন্ধ কারখানার শ্রমিক বলেন, “কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বকেয়া-পাওনা নিয়ে নিত্য ঝঞ্ঝাট। পুজো করার আর ম নেই দাদা।” তবু তারই মাঝে কারখানার গেটে প্রায় নিয়ম রক্ষার খানকতক পুজো যে চোখে পনে না তা নয়। তবে, কান পাতলে সেখানেও আক্ষেপ আর ‘পুরনো সেই দিনের কথা’। জাঁকজমক নেই।
ব্যরাকপুরের গৌরীপুর কুলি লাইনে এখনও প্রায় হাজার খানেক শ্রমিকের বসত। গৌরীপুর চটকল ছাড়াও, গৌরীপুর থার্মাল পাওয়ার, নৈহাটির নাম করা রঙ কারখানা, কন্টেনার্স অ্যান্ড ক্যাপস-এর শ্রমিকেরা থাকেন এই কুলি লাইনে। গত কয়েক বছরে পর পর বন্ধ হয়ে গেছে ওই সব জুট মিল আআর কারখানাগুলি। শ্রমিকেরা বকেয়াও পাননি প্রায় কিছুই। তবু তাঁরা স্বপ্ন দেখেন, ‘যদি কখনও কারখানা খোলে’ কিংবা দৈবাত যদি মিলে যায় বকেয়া।
ওই কুলি লাইনেরই এক শ্রমিক বলেন, “এই সব উৎসবের দিনে এই সব আসার কথা খুব মনে হয় জানেন।” গৌরীপুর চটকলে ধুমধাম করে বিশ্বকর্মা পুজো করতেন সত্যরঞ্জন চক্রবর্তী। বহুবার পুরোহিত আসতে দেরি করায় নিজেই সে কাজ করেছেন। এখন বয়স আশির কাছাকাছি। বাড়িতে বিদ্যুত নেই। মোমবাতির আলোয় স্মৃতি রোমন্থন করেন, বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোটাও যেন ইতিহাস। আগে মেলা বসত কারখানার বাইরে গঙ্গার ধারে। নাগরেৃদালা, জিবে গজা কত কি! সব কোথায় হারিয়ে গেল বলুন তো!”
শ্রমিকদের পরিবারের সবাই পুজোতে অংশ নিত। গৌরীপুর কুলি লাইনের এই ছবি শিল্পাঞ্চলের আনাচে কানাচে। শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা বলেন, ‘‘আগে শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা পুজো হত কারখানায়। এখন হয় রিকশা আর অটো স্ট্যান্ডে।’’ তবে তার মধ্যেই ম্লান আলোয় মাইকের চিৎকারে সামান্য আমোদ। নাকি দুঃখ ভোলার চেষ্টা! আর আছে প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো কয়েক হাজার শ্রমিকের চাপা কান্না।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.