উৎসবের মরসুমের বোধন বিশ্বকর্মা পুজোয় |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দুই মেদিনীপুর জেলায় বড় শিল্প বলতে হাতে গোনা কয়েকটি। তাতে অবশ্য দেব কারিগরের আরাধনায় উৎসাহের খামতি নেই। রেল, হিমঘর, ছোটখাটো গ্যারাজ থেকে পাড়ায় পাড়ায় রিকশা স্ট্যান্ড সর্বত্রই বিশ্বকর্মা পুজোর রমরমা। বাদ যায়নি থিমের পুজো, আলোকসজ্জার রংবাহার। মঙ্গলবার বিশ্বকর্মা পুজো দিয়েই যেন শুরু হয়ে গেল উৎসবের মরসুম। এর মধ্যে জাঁক সব থেকে বেশি পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পশহর হলদিয়ায়। |
|
এগরায় আরাধনা কারিগর দেবতার। ছবি: কৌশিক মিশ্র। |
মঙ্গলবার সকালে ও বিকালে পুজোর অঙ্গনে আনন্দ-উৎসাহে বৃষ্টি জল ঢাললেও সন্ধ্যা থেকেই রাস্তায় উপচে পড়ে ভিড়। চন্দনগরের বাহারি আলোয় উজ্জ্বল শিল্পশহরে দলে দলে লোকজন বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। ভিড় জমান মণ্ডপে-মণ্ডপে। জাঁকের দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রেলশহর খড়্গপুর। রেলশহরে পুজোর মূল সুর অবশ্য রেলেই বাঁধা। ‘মিনি ইন্ডিয়া’ খড়্গপুরে বিশ্বকর্মা পুজোতেও মিলেমিশে একাকার হয়ে যান বহু ভাষাভাষি মানুষজন। |
|
হলদিয়ায় আরাধনা কারিগর দেবতার। ছবি: আরিফ ইকবাল খান। |
এ বার বিশ্বকর্মা পুজোর বড় আকর্ষণ ছিল রেলের ইএমইউ কোচ শপ। এখানে সশরীরে হাজির ছিলেন বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, ক্ষুদিরাম, ভগত সিংহরা। জীবন্ত মডেল দেখে ছোট-বড় সকলেই খুশি। রেলকর্মী পার্থসারথি সরকার বলেন, “এই প্রথম জীবন্ত মডেল দেখলাম। ভীষণ ভাল লাগছে।” মডেল দেখে হাসিতে লুটোপুটি ছোট্ট কৃষ্ণাতুলসি বারিক। ফিক করে হেসে বলল, “রবিঠাকুর নড়ছে যে গো। মনে হচ্ছে ছুট্টে গিয়ে জাপটে ধরি।” |
|
খড়্গপুরের বোগদায় আরাধনা কারিগর দেবতার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
উপরিবিভাগ সরঞ্জাম অনুরক্ষণ কেন্দ্রে আবার থিম ছিল কেদারনাথের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। রেলের অন্য ওয়ার্কশপেও ঠাকুর দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন উৎসাহীরা। দফতরের কর্মী তথা পুজোর উদ্যোক্তা ভিন পরিহার, রণেশ সিংহের কথায়, “এ বার কেদার দর্শনে গিয়ে দুর্যোগে আটকে পড়ি। সে যে কী দুর্ভোগ বলে বোঝানো যাবে না। সেই টাটকা স্মৃতিকে মনে রেখেই এই উদ্যোগ।” ট্র্যাকশন মেরামত বিভাগ মডেল বানিয়েছে, ট্রেন চলাচলে বৈদ্যুতিন তারের ট্র্যাকশনের ভূমিকা কী, সঙ্গে রয়েছে দূষণমুক্ত পৃথিবীর মডেলও। এ সব দেখতেই ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। |
|
|
রেলশহরের কারখানার মনীষীদের
জীবন্ত মডেল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
মেদিনীপুর শহরে মোটরসাইকেল
পুজো। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
এর বাইরে সাহাচক, ইন্দা সহ সর্বত্রই বিশ্বকর্মার আরাধনা হয়েছে। কোথাও গ্যারাজে আবার কোথাও কারখানায় বা ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। শেখ রাজু, শেখ আনসারদের কথায়, “যন্ত্রপাতি নিয়ে গ্যারাজে কাজ করি। তাই বিশ্বকর্মার পুজোও করি।” ধর্মীয় গোঁড়ামির উর্ধে উঠে এখানে বিশ্বকর্মা এখানে কেবলই কারিগরের দেবতা।
মেদিনীপুর শহরেও পুজোর জাঁক কিছু কম ছিল না। একাধিক ট্যাক্সি স্ট্যান্ড, বাস স্ট্যান্ডে পুজো। চন্দ্রকোনা রোডে পরিবহণ শিল্পের বাড়বাড়ন্ত। রয়েছে একাধিক হিমঘরও। এখানে রাস্তার দু’ধারে কয়েকহাত ছাড়াই বিশ্বকর্মার মণ্ডপ।
রেলের ওয়ার্কশপ হোক বা হিমঘর, কারখানা, অন্য সময় সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকে। তবে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সবার জন্যই অবারিত দ্বার। হুজুগে জনতাও এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। |
|