নদীর তীর ভরেছে প্লাস্টিকের আবজর্নায়। জলেও ক্রমে জমছে পলিথিনের ব্যাগ, প্যাকেট।
ডিজেল-চালিত পাম্পে ওই নদীর জল ভরা হচ্ছে ট্যাঙ্কারে। প্যাম্পের তেল চুঁইয়ে মিশছে মাটিতে, জলেও। কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে আশপাশে। শুধু তা-ই নয়, জাতীয় জল কমিশনের নির্দেশ উড়িয়ে সেই নদীতেই চলছে ডিজেল-চালিত নৌকা।
এমনই দূষণে ‘আক্রান্ত’ কোডারমার ঝুমরি তিলাইয়া শহরের তিলাইয়া বাঁধের কাছে বরাকর নদীর জল। কিন্তু এ নিয়ে উদ্যোগ নেই কোনও মহলেই। স্থানীয় বাসিন্দারা এই পরিস্থিতির জন্য আঙুল তুলেছেন সরকারের উদাসীনতার দিকেই।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান মণি শংকরের বক্তব্য, “তিলাইয়ায় বরাকর নদীর জলে এ ভাবে দূষণ ছড়ানোর ঘটনা অত্যন্তই দুর্ভাগ্যজনক। প্লাস্টিক ব্যবহার সংক্রান্ত নিয়ম নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। কিন্তু কোনও আইন করা যায়নি। সেই কারণেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।” বরাকর নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি ট্যাঙ্কার জল তুলছে। একটির চালক রাজ কুমার জানান, তিলাইয়া শহরে জল-সংকট রয়েছে। তার জন্যই বরাকর নদী থেকে এ ভাবে জল তোলা হয়। ওই জল বিক্রি করা হয় তিলাইয়া শহরে। কিন্তু বেআইনিভাবে জল তোলায় নদীর জলে দূষণ ছড়ানো নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।
পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য, বরাকর নদীতে দূষণের মূল কারণ প্ল্যাস্টিক।
বাস্তবের ছবিটাও তা-ই। নদীর ধারের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে প্লাস্টিক। চড়ুইভাতির ভিড়ে সেই দূষণের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তিলাইয়া বন বাংলোর পিছনেও জমেছে প্লাস্টিকের থালা, পলিব্যাগ, হরেক খাবারের প্যাকেট। হাওয়ায় উড়ে গিয়ে নদীতে পড়ছে সে সবই।
নদীতে ডিজেল-চালিত নৌকা (ভুটভুটি) চলাচলে জাতীয় জল কমিশনের বিধি-নিষেধ রয়েছে। কিন্তু, বরাকরে ওই ধরনের নৌকার অবাধ গতি। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীর জলে যে ভাবে দূষণ বাড়ছে, ঠিক সে ভাবেই ভুটভুটির ইঞ্জিন-নির্গত তেল থেকে বরাকরের জলেও ছড়াচ্ছে দূষণের ‘বিষ’। কোডারমার ডেপুটি কমিশনার উমা শংকর জানান, এ সবের খবর প্রশাসনের কাছে পৌঁছেছে। তবে লিখিত অভিযোগ তাঁরা পাননি। তিনি বলেন, “কেউ লিখিত অভিযোগ দিলেই প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।” প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি জায়গায় নজরদারিতে সাধারণ মানুষের লিখিত অভিযোগের গুরুত্ব কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি ডেপুটি কমিশনার।
তিলাইয়া বাঁধ ‘দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন’-এর (ডিভিসি) অধীনে। ডিভিসি কতৃর্পক্ষও এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। |