বাবুনকে নিয়ে মহা মুশকিলে পড়েছেন তার ঠাকুমা। বেশ কিছু দিন হল, স্কুল থেকে ফিরেই সোজা পাড়ার মণ্ডপে চলে যাচ্ছে সে। তার পরে আর ফেরার নাম নেই। সেখানে কিসের আনন্দে যে এত মশগুল হয়ে আছে কে জানে?
ঠাকুমা যেটা জানেন না তা হল, বাবুনদের পাড়ার পুজোর থিমটাই ‘এবিসিডি-র খেলা’। ৪৯ বছরের সম্মিলিত মালাপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব নিয়ে বাবুনের বিস্ময়ের তাই শেষ নেই। মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি বর্ণমালা। মণ্ডপে ঢুকলেই দেখা যাবে একটি বড় বই, তার ছ’টি পাতা। ইংরেজি অক্ষর সাজিয়েই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন অবয়ব। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বাঁশ ও প্লাই দিয়ে। দেবী এখানে ধ্যানে বসে আছেন সিংহের উপরে। হাতে শুধু ত্রিশূল।
রূপচাঁদ মুখার্জি লেন সর্বজনীন দুর্গোৎসবের থিম আবার ‘লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’। আজকের দিনে প্রতিযোগিতার চাপে শৈশব অকালেই ঝরে যায়। মণ্ডপে ঢুকলেই চোখে পড়বে, বড় বইয়ের উপরে ইংরেজি অক্ষর দিয়ে তৈরি ২০ ফুট উচ্চতার শিশুর মুখ। দেখে মনে হবে, উপরের উঁচু কল থেকে পড়ছে ইংরেজি বর্ণমালা। আর সামনে ভেসে বেড়াবে বাংলা বর্ণমালা। মণ্ডপের ভিতরের ছবিটা অবশ্য অন্য। সেখানে দেখা যাবে, দু’টি বই শিকল দিয়ে বাঁধা, তার উপরে দেবী দুর্গার ত্রিমাত্রিক মূর্তি। নীচে থাকছে অসংখ্য নীল ফুল, যার থেকে বেরিয়ে আসবে আলো।
যোধপুর পার্কের পল্লিমঙ্গল সমিতির এ বারের থিম ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবর্ষ। এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে কলকাতায় ফরাসি দূতাবাসের সাংস্কৃতিক শাখা আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্যু বেঙ্গাল ও একটি ভ্রমণ সংস্থা। ল্যুমিয়ের ব্রাদার্স, দাদাসাহেব ফালকে, হীরালাল সেন, সত্যজিৎ রায় থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ পর্যন্ত বহু ভারতীয় পরিচালকই স্থান পাচ্ছেন সেখানে। শতবর্ষের মহিলা পরিচালক, সঙ্গীতশিল্পী ও বিভিন্ন সময়ের নায়িকাদের নানা
মুহূর্ত দেখা যাবে আলোকচিত্রে ও দুই ফরাসি শিল্পীর ফ্রেস্কো শিল্পে। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবির আটচালার অনুকরণে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রতিমাও তা-ই।
অনেকটা একই পথে হাঁটছে ম্যুর অ্যাভিনিউ পূজা সমিতি। তাদের থিম ‘দাদাসাহেব থেকে ঋতু’। ভারতীয় চলচ্চিত্রের বিবর্তন তুলে ধরা হবে মণ্ডপে। বিশেষ আকর্ষণ সিনেমায় ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এবং শতবর্ষের সিনেমার পোস্টারের প্রদর্শনী।
মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে বায়োস্কোপ যন্ত্রের আদলে। সাবেক বাংলা রীতির প্রতিমাকে পরানো হবে কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজ।
থিমপুজোর রমরমার মধ্যে বেহালা পর্ণশ্রীর উপেন ব্যানার্জি রোডের গভর্নমেন্ট কোয়ার্টার্স দুর্গাপুজো কমিটির পুজো এ বছরও সাবেক। মন্দিরের অনুকরণে হচ্ছে মণ্ডপ। সাবেক প্রতিমাকে পরানো হবে ডাকের সাজ। পুজোর পাঁচ দিন থাকে নানা অনুষ্ঠান, এক সাথে খাওয়া-দাওয়া। আবাসনের কিছু মানুষ যাঁরা বিদেশে থাকেন, পুজোর দিনগুলোয় প্রতি বছর তাঁরা না ফিরে পারেন না। আসলে পুজো মানেই তো ঘরে ফেরা। তাইতো পুজো পুরনো হয়েও চিরনতুন। |