একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ক্লাসের মধ্যে ছাত্ররা প্রায়ই উত্ত্যক্ত করে ছাত্রীদের। এমনকী, মোবাইলে সহপাঠিনীর ছবিও তুলছে কেউ কেউ। কয়েক জন অভিভাবকের কাছ থেকে সেই অভিযোগ পাওয়ার পরেই মালদহ শহর লাগোয়া রায়গ্রাম হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, একই ঘরে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো খুব ‘ঝুঁকি’র হয়ে যাবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তাই ওই স্কুলে একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের ছাত্রীরা শুধু সোম, মঙ্গল ও বুধবার ক্লাস করছে। ওই তিন দিন অনুপস্থিত থাকছে ছাত্রেরা। ওই শ্রেণির ছাত্রেরা আবার ক্লাস করছে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার। সে সব দিনে ওই ক্লাসের ছাত্রীরা স্কুলে আসছে না।
স্কুলটির পরিচালন সমিতি তৃণমূলের হাতে। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ২০১০ সালে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর ছবি মোবাইলে তুলে তা গ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছিল স্কুলের এক ছাত্র। তাই নিয়ে রায়পুর ও আশপাশের গ্রামে উত্তেজনা ছড়ায়। স্কুলের শিক্ষক তথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মিশ্র বলেন, “আমরা সেই আশঙ্কাতেই এ বার ঝুঁকি নিইনি। ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে ক্লাসে দেখাই না হয়, সেই ব্যবস্থা করতে চেয়েছি।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) আশিস চৌধুরী অবশ্য বলেন, “স্কুলের পঠনপাঠন সংক্রান্ত এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ বা পরিচালন সমিতি নিতে পারে না। বিষয়টি স্কুলের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে।”
এই স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শুধুই ছাত্রেরা পড়ে। শুধু উচ্চ মাধ্যমিক কলা বিভাগে ছাত্রছাত্রীদের এক সঙ্গে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাতারাতি ছাত্র ও ছাত্রীদের ক্লাস করার দিন আলাদা করে না দিয়ে, অন্য ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যেত কি না তা নিয়ে। প্রধান শিক্ষক শিবেশ মিশ্র বলেন, “পাঁচ ছাত্রের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। তাদের অভিভাবকদের ডেকে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা চাইনি এমন কিছু করতে যাতে তাদের ভবিষ্যৎই নষ্ট হয়ে যায়।” কিন্তু ওই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে আসার দিন আলাদা করে দেওয়ায় পড়ুয়ারা প্রতি সপ্তাহে মাত্র তিন দিন করে স্কুল করছে। তাতে তাদের স্কুলে পড়াশোনার দিনও কমে যাচ্ছে। তাতে পাঠক্রম শেষ করা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। কয়েক জন অভিভাবকের দাবি, কয়েকটি ছাত্রের জন্য ওই ক্লাসের সব ছাত্রছাত্রীই সমস্যায় পড়ছে।
স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক কানুগোপাল রায় অবশ্য বলেন, “অভিভাবকদের কাছ থেকে যে সব অভিযোগ পেয়েছি, তাতে আশঙ্কা হচ্ছিল, বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে যে কোনও দিন। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি, ছাত্র ও ছাত্রীদের স্কুলে দেখাই হবে না, এমন কোনও ব্যবস্থা করতে।” স্থানীয় বিধায়ক তথা পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরির বক্তব্য, “স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি বড় ঘটনা এড়াতে এই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে, তা হলে ঠিকই করেছে। তবু আমি খোঁজ নিচ্ছি।” |