পুজোর আগে আর মাত্র চারটে রবিবার হাতে পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পুজোর ‘কাউন্টডাউন’ শুরু হতেই ভিড় বাড়তে শুরু করেছে কান্দি, ডাকবাংলো, বড়ঞা, খরগ্রাম কিংবা ভরতপুরের মতো বাজারগুলোতে। আর রবিবার এলেই সেই ভিড় বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ। পুজোর কেনাকাটার জন্য যেমন এই দিনটার অপেক্ষায় থাকেন চাকরিজীবীরা। তেমনই এই ছুটির দিনটার জন্য তৈরি থাকেন ব্যবসায়ীরাও। কান্দি শস্যগোলা হিসাবে পরিচিত। ফলে চাকরিজীবীদের পাশাপাশি বাজারগুলো অনেকটাই নির্ভর করে কৃষির উপর।
|
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এবারের ঈদে ভালই ব্যবসা হয়েছে। তবে পুজোর বাজারের শুরুর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পুজোর ব্যবসাও ভাল হবে। সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ভিড় জমাচ্ছেন গ্রামের লোকজন। আর সন্ধ্যার পর থেকেই বাজারের দখল নিয়ে নিচ্ছেন শহরের মানুষ। অন্যান্য সময় বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় রাত সাড়ে আটটা থেকে ন’টার মধ্যে। সাত দিনই এখন রাত এগারোটা পর্যন্ত বাজার খোলা থাকছে।
কান্দি মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারকনাথ প্রামাণিক বলেন, “পুজোর বাজার জমতে শুরু করছে। বিশ্বকর্মা পুজো পার হয়ে গেলেই বাজারে মানুষের ঢল নামবে। শেষের দিকে বর্ষা সদয় হওয়ায় আমন চাষ ভাল হয়েছে। বাজার ভাল তিল, সর্ষে, ধান ও সব্জির। চাষির হাতে পয়সা আছে। তার একটা প্রভাব বাজারের উপর তো পড়ছেই। এদিকে চাকরিজীবীরাও মাইনে পেয়ে যাওয়ায় মাসের দ্বিতীয় রবিবারেও বাজার চাঙা ছিল।” পুজো কিংবা ঈদের বাজারে ফি বছরই শাড়ি, চুড়িদার কিংবা জুতোর নতুন ধরণের কিছু নাম ভেসে ওঠে। এ বারও সেরকম বেশ কিছু নাম উঠে এসেছে। এক ব্যবসায়ী বলেন, সাধারণত বিভিন্ন সিনেমা বা সিরিয়াল জনপ্রিয় হলে তার চরিত্ররা যেমন পোশাক পরে সেই ধরনের পোশাকের চাহিদা বাড়ে। ডাকবাংলা বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী দীপক ঘোষ বলেন, “অন্য বারের তুলনায় এবার পুজোর বাজার আগে থেকেই জমতে শুরু করেছে। ধারের খাতা কম খুলতে হচ্ছে। নগদেই বেশি বিক্রি হচ্ছে।” |
জমেছে পুজোর কেনাকাটা |
• সাত দিনই খোলা থাকছে দোকানপাট।
• বৃষ্টি নেই, আবহাওয়াও মনোরম। তাই স্বস্তিতে ক্রেতা-বিক্রেতা।
• ঈদে ব্যবসা ভাল হয়েছে। পুজোর কেনাকাটাও
শুরু হয়েছে অন্য বারের থেকে অনেক আগেই।
• ব্যবসায়ীদের আশা, বিশ্বকর্মা পুজো পার হলেই আরও ভিড় বাড়বে বাজারে।
• বিশ্বকর্মা পুজোর পরে সারানো হবে বাজারের রাস্তাঘাট। |
|
রবিবার দুপুরে পুজোর বাজার করতে বেরিয়েছিলেন কান্দির স্বপ্না চৌধুরী ও সুপ্রিয়া সিংহ। তাঁদের কথায়, “আবহাওয়া ভাল থাকতে থাকতেই বাজারটা সেরে নিচ্ছি। হঠাৎ করে টানা কদিন বৃষ্টি শুরু হলেই তো সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। তাছাড়া রবিবার ব্যস্ততা কম থাকে বলেই আরও বেরিয়ে পড়লাম। অনেকটা সময় নিয়ে বাজার করা যাবে।” দল বেঁধে কিংবা সপরিবারে কান্দিতে বাজার করতে আসছেন গ্রামের মানুষ। সকাল সকাল বাজারে এসে গুছিয়ে নানা ধরনের জিনিসপত্র কেনাকাটা করে বাজার করে, স্থানীয় কোনও হোটেলে খাওয়া দাওয়া সেরে তারপর বাড়ি ফিরছেন তাঁরা। খড়গ্রামের কান্দুরি গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত দাস পেশায় শিক্ষক। রবিবার সকালে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি কান্দিতে বাজার করতে এসেছিলেন। জয়ন্তবাবু বলেন, “খুব সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কেনাকাটার শেষে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে বলে দুপুরে একটি হোটেলে খেয়ে নিয়েছি।”
কান্দির হোটেল ব্যবসায়ী রাজু রায় বলছেন, “এখন হোটেলে ভিড় বাড়ছে। পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই ভিড়টা থাকবে।” কান্দি পুরসভার পুরপ্রধান গৌতম রায় বলেন, “উৎসবের সময়ে মানুষ যাতে কোনওরকম সমস্যায় না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে। বিশ্বকর্মা পুজো বেরিয়ে গেলেই এলাকার বেশ কিছু রাস্তা মেরামত করা হবে। যেখানে আলো নেই সেই রাস্তাগুলোতে আলোর ব্যবস্থাও করা হবে।” |