পলকের মধ্যেই সলিল-সমাধি হল ছোট্ট বাড়িটার। আর অসহায় প্রতিবেশীরা দেখলেন কেমন অনায়াসে সে বাড়ির মালকিন ৬০ বছরের প্রৌঢ়াকেও ভাসিয়ে নিল প্রবল জলস্রোত। ছবিটা কলোরাডোর লারিমার কাউন্টির। বুধবার থেকে চলতে থাকা অতিবৃষ্টি ও তার ফলে হড়পা বানের জেরে কলোরাডোতে ইতিমধ্যেই চার জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রৌঢ়ার খোঁজ না মেলায় উদ্ধারকারী দলের আশঙ্কা, বেঁচে নেই তিনিও। প্রশাসনের দাবি, এ পর্যন্ত নিখোঁজের সংখ্যা প্রায় ৫০০।
বুধবার থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে কলোরাডোতে। হাওয়া অফিসের হিসেব মতো, সাধারণত যে সব এলাকায় সেপ্টেম্বর জুড়ে ২ ইঞ্চির মতো বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, সেখানে এক সপ্তাহেই বৃষ্টি হয়েছে ১৫ ইঞ্চি। স্বাভাবিক ভাবেই বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছে। বন্যার ধাক্কায় বড়সড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোবাইল ফোনের টাওয়ার এবং বিদ্যুৎ পরিবহণ। ফলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। কিন্তু আশঙ্কাটা অন্য জায়গায়। হাওয়া অফিসের ধারণা, যে কোনও মুহূর্তে ফের প্রবল বৃষ্টি শুরু হতে পারে কলোরাডোয়। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে, ভেবেই আতঙ্কিত প্রশাসন। |
বন্যার জলে ধুয়ে গিয়েছে সড়ক। চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: এপি। |
তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই উদ্ধারকাজ চলছে জোরকদমে। প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবার রাত পর্যন্ত বোল্ডার এবং লারিমার কাউন্টি থেকেই ১৭৫০ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়েছে উদ্ধারকারী দল। এ জন্য ইতিমধ্যেই পাঁচটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার অনবরত চক্কর খাচ্ছে জলমগ্ন এলাকার উপর দিয়ে। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে সেনাও। গভীর জল ঠেলে উদ্ধারকাজ চালানোর পাশাপাশি বারবার তাঁরা ঘোষণা করে চলেছেন, এখনও বাড়ি ছেড়ে যাঁরা বেরোননি, তাঁরা সময় থাকতে থাকতে নিরাপদ স্থানে চলে যান। কারণ, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির ফলে আগামী বেশ ক’দিন বিদ্যুৎ, পানীয় জল এবং খাবারদাবার ছাড়াই কাটাতে হতে পারে তাঁদের। যাঁরা কোনও ভাবেই বেরোতে পারছেন না, তাঁদের চপারে করে উদ্ধার করা হচ্ছে। এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন কলোরাডোর গভর্নর জন হিকেনলুপার। আর তাঁর চপারে করেই প্রায় ছ’জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ২ পোষ্যও।
তবে উদ্ধারকাজ সত্ত্বেও কপালে ভাঁজ বাড়ছে প্রশাসনের। বুধবারের পর থেকে যে পরিমাণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে, তা আয়তনে কানেক্টিকাট শহরের সমান। বহু বাসিন্দার সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পৌঁছনো যাচ্ছে না বহু এলাকায়। লারিমার কাউন্টির শেরিফের অফিস থেকে জানানো হয়েছে, প্রায় সাড়ে তিনশো মানুষ নিখোঁজ। বোল্ডার কাউন্টি প্রশাসন দাবি করেছে, তাদের অন্তত ২৩১ জনের খোঁজ মেলেনি। তবে নিখোঁজ হিসেবে নথিভুক্ত হলেও ওই বাসিন্দাদের এখনই মৃত ধরে নিচ্ছে না প্রশাসন। তাদের হিসেব মতো, এখনও যাঁরা আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি, তাঁদেরই নিখোঁজ হিসেবে ধরা হচ্ছে। অর্থাৎ জল নামলে এঁদের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ করা যাবে বলে আশা প্রশাসনের। কিন্তু একই সঙ্গে আশঙ্কা মৃতের সংখ্যাও বাড়বে।
পরিস্থিতি দেখেশুনে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রবিবারই কলোরাডোর ঘটনাকে ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যেই ত্রাণ হিসেবে ৫০ লক্ষ ডলার পাঠানোও হয়েছে সেখানে। আরও ত্রাণ পাঠানো হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে হোয়াইট হাউসের তরফে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যে অপ্রতুল তা এখনই পরিষ্কার। |