জনবসতির কোনও ক্ষতি ছাড়াই কুলটির ১৭টি মৌজায় গড়া হবে ভূগর্ভস্থ খনি। এমনই দাবি করেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন। খনিতে নিয়োগে স্থানীয় লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস সংস্থাটির। খনি চালু হলে খুলবে পরোক্ষে আয়ের রাস্তাও। সম্প্রতি ওই খনির ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে একটি পরিবেশ সংক্রান্ত জনশুনানি করে জেলা প্রশাসন। সরকারি ছাড়পত্র হাতে এলেই খনির কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্পোরেশনের এমডি আর মুৎসুদ্দি।
রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন প্রায় সাত বছর আগে কুলটি এলাকায় দু’টি কোল ব্লক পায়। কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে এই ব্লক দু’টি পেয়েছিল রাজ্য সরকার। জানা গিয়েছে, কুলটি ব্লকটি ২০০৬ সালে এবং সীতারামপুর ব্লকটি ২০০৭ সালে মিলেছে। পরে মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন এই দু’টি ব্লক একত্র করে নেয়। সংস্থার এমডি জানান, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত কারখানায় প্রয়োজনীয় কয়লা এই দু’টি ব্লক থেকে সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তিনি বলেন, “জিন্দল গোষ্ঠী এই কয়লা তুলে আমাদের দেবে। আবার সেই কয়লা ওদের ইস্পাত কারখানার জন্য আমাদের কাছ থেকে কিনে নেবে।”
কর্পোরেশনের আধিকারিকেরা জানান, ব্লকের দু’টির অন্তর্গত ১৭টি মৌজা এই খনি এলাকায় পড়েছে। প্রায় ১৬০২ একর জায়গায় মোট কয়লার স্তর আছে ১৬টি। এর মধ্যে কুলটি ব্লকে ৭টি ও সীতারামপুরে ৯টি। দু’টি ব্লকে কয়লা মজুত রয়েছে প্রায় ১৩৩ মেট্রিক টন। পুরো কয়লা তুলতে প্রায় ৭২ বছর সময় লাগার কথা। বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতি বছর ২০ লক্ষ টন করে কয়লা তোলা হবে। প্রথম কয়লাস্তরটি আছে ভূস্তর থেকে তিনশো মিটার গভীরে। শেষ স্তরটি রয়েছে প্রায় ১৪০০ মিটার গভীরে।
কর্পোরেশনের আধিকারিকেরা জানান, ভূগর্ভস্থ এই খনির জন্য মাটির উপরিভাগের স্তরে কোনও ক্ষতি হবে না। তাই জনবসতি সরানোর প্রয়োজন নেই। শুধু যেখানে সুড়ঙ্গের মুখ তৈরি হবে, সেখানে প্রায় ৬৫ একর জমি দরকার। তা অধিগ্রহণ করা হবে। যদিও সেই জায়গা এখনও চিহ্নিত হয়নি। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, খনির উৎপাদন চালাতে সরাসরি ৮০০ শ্রমিক-কর্মী নিয়োগ করা হবে। সংস্থার এমডি আর মুৎসুদ্দির আশ্বাস, নিয়োগে স্থানীয় যুবকেরা অগ্রাধিকার পাবেন। তাঁদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। খনিতে উৎপাদন শুরু হলে পরোক্ষে আয়ের রাস্তাও খুলবে।
এলাকার উন্নয়ন ও সুরক্ষার বিষয়েও একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলে মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়। সংস্থার এমডি জানান, পরিবেশ দূষণ রুখতে এলাকায় ১২ হেক্টর জমিতে সবুজায়ন করা হবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৫০০ করে গাছ লাগানো হবে। তা ছাড়া এলাকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথাও জানানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অবশ্য দাবি, মাটির তলায় কয়লা কেটে বের করে নেওয়ার পরে ভিতরের অংশ ফাঁপা হয়ে যায়। তখন মাটির উপরের অংশ ধরে রাখার ব্যবস্থা ঠিক মতো না হলে ধস নামতে পারে। ইদানীং রানিগঞ্জ খনি অঞ্চলে এই সমস্যা প্রায়ই হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশনের এমডি আর মুৎসুদ্দি অবশ্য জানান, বিদেশের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় রয়েছে। কিছু বাসিন্দার আরও দাবি, প্রস্তাবিত এই খনিটি ‘থার্ড ডিগ্রি’ খনি। সেখানে প্রচুর মিথেন গ্যাস মজুত আছে। ফলে, কয়লা কাটার সময়ে বাইরের বাতাস ঢুকে মিথেনের সঙ্গে বিক্রিয়ায় আগুন ধরে যেতে পারে খনিগর্ভে। সেরকম কোনও সম্ভাবনার কথাও অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন আর মুৎসুদ্দি। তিনি জানান, খনির পরিকল্পনা সংক্রান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রে অনুমোদিত হলেই তাঁরা দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে নামবেন। |