সভায় দরাজ মুখ্যমন্ত্রী, ক্ষতি পূরণে সংশয়
রাজ হাতে বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দুপুরে কোলাঘাটের প্রশাসনিক সভায় শুধু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদেরই নয়, ধান, সব্জি ফুল চাষি এমনকী মৎস্যজীবীদেরও হাঁড়ি সমেত মাছের চারাপোনা বিলোলেন। মোট ৪০টি দফতর থেকে আলাদা-আলাদা ভাবে সাহায্য করা হয় ৪ হাজার ৯১১ জন ক্ষতিগ্রস্তকে। উদ্যান পালন দফতর থেকে পানের মিনিকিট, প্রাণিপালন থেকে মুরগির ছানা, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে ডিসাস্টার কিটকী নেই। ‘ডিসাস্টার কিটে’র বিশাল বস্তায় চাল, ডাল, মশলাপাতির সঙ্গে বালতি, মগ, থালা-বাটি-জামাকাপড়ও আছে। বিশাল সেই বস্তা টেনে নিয়ে যেতে রীতিমতো ঘাম ঝরছিল পাঁশকুড়ার রাধাবন গ্রামের সন্ধ্যা হাইতের। এক গাল হেসে বলেন, “বন্যায় ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। এগুলো খুব কাজে লাগবে। তবে, বাড়ি তৈরির টাকা পেলে ভাল হত। এখানে এক জন কেবলমাত্র একটি বিভাগেই সাহায্য পাচ্ছে। চাষে ক্ষতির জন্য বা ঘরবাড়ি সারানোর জন্য মনে হয় পাব না।”
মিনিকিট নিয়ে বাড়ির পথে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
বস্তুত কে কী সাহায্য পাচ্ছে তা নিয়ে ধোঁয়াশাটাই এ দিন ঘুরপাক খাচ্ছিল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরীর মাঠে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। সভায় প্রাপকদের তালিকা কোন নিরিখে হল, তা পরিষ্কার নয়। এক আধিকারিক জানান, জলমগ্ন এলাকাগুলি থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আনা হয়েছে। প্রশাসনের মাধ্যমে পঞ্চায়েতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চায়েত প্রধানরা যে যার এলাকা থেকে প্রাপকদের নিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন দফতরের শিবিরে উপচে পড়ছে ভিড়। শিবিরগুলিতে প্রাপকদের তালিকা নিয়ে বসে আছেন প্রশাসনের লোকেরা। নাম-ঠিকানা বললে কুপন দেওয়া হচ্ছে হাতে-হাতে। পরে সংগ্রহ করে নিতে হচ্ছে মিনিকিট বা চারাপোনার হাঁড়ি। ভাগ্যবান কয়েকজন মঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকেই ক্ষতিপূরণ পেলেন। দাসপুর ২ ব্লকের শিবড়া গ্রামের বৃদ্ধ প্রভাস গুছাইত ফোকলা গালে হেসে বলেন, “আগেও বন্যায় ঘর ভেঙেছে। তখন খালি শুনতাম টাকা পাব বলে। হাতে পাইনি। এ বার এত তাড়াতাড়ি ক্ষতিপূরণ পেয়ে ভাল লাগছে।”
আবার কোনও তালিকাতে নাম না থাকলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অনেকে শুধুই মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতে উজিয়ে এসেছেন দূর-দূরান্ত থেকে। কোলাঘাটের পারিট গ্রামের ফুলচাষি গোপাল প্রামাণিক বলেন, “১০ কাঠা জমির ফুল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আজকের তালিকায় নাম নেই। তবে যে ভাবে এতগুলো লোক সাহায্য পাচ্ছে, তাতে আশা জাগছে আমারও কিছু একটা সুরাহা হবেই।”
পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করতে শুক্রবার কোলাঘাটে প্রশাসনিক সভা করলেন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হয়নি। প্রতীকী সাহায্য হিসেবে কিছু চাষিকে মিনিকিট,
প্রাণিপালকদের মুরগির ছানা, ধীবরদের চারাপোনা ও হাঁড়ি দেন মুখ্যমন্ত্রী। বাকিরা মঞ্চের বাইরে শিবির থেকে
সংগ্রহ করে নেন ক্ষতিপূরণ। দুই জেলা মিলিয়ে ৪৯১১ জনকে সাহায্য করা হয়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
আশার চেয়ে অবশ্য উদ্বেগটাই বেশি। কোলাঘাটেরই এক ফুলচাষি যেমন বলেন, “আজ মুখ্যমন্ত্রী এসেছেন বলে হড়বড় করে তালিকা বানিয়ে প্রশাসন কয়েকজনের হাতে থলি ধরিয়ে দিল। এ বার বাকি তালিকা কবে হয় সেটাই দেখার। প্রশাসনের উপরে আমার কোনও রকম ভরসা নেই। ওদের একুশ মাসে বছর।”
ক্ষতিপূরণের ধরন নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। যেমন পানচাষিদের মিনিকিটে রয়েছে নিম খোল, নিম তেল, জৈব সার আর একটা পানের চারা। ওই একটা পানের চারা নিয়ে কী হবে, জানতে চাইছিলেন চাষিরা। কোলাঘাটের এক পানচাষি বলেন, “শুধু সার আর কীটনাশক তেল নিয়ে কী হবে। আমাদের খরচাটা তো হয় শ্রমিকদের পিছনে আর বরজ বানাতে। নগদ টাকা পেলে লাভ হত।” জেলার কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ নায়েক অভিযোগ করেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাত্র হাতে গোনা কয়েকজনের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেন। তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। তার উপরে প্রশাসন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জমির হাল খাজনার রসিদ সহযোগে আবেদন করতে বলায় অনেকে বিপদে পড়েছেন। অনেকেরই জমির খাজনা দেওয়া নেই।”
পূর্বের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল অবশ্য আশ্বাস দেন, “পান চাষি, মৎস্যজীবীদের পরে আর্থিক সাহায্য করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলিতে আবেদন করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বাকি কাজও দ্রুত হবে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.