সম্পাদকীয় ২...
ঐতিহ্য
তাত্ক্ষণিকতার এই স্বর্ণযুগেও ধ্রুপদীয়ানা বিশ্বক্রীড়ামঞ্চে ফিরিল। সাত মাস পূর্বে স্থির হইয়াছিল, আগামী ব্রাজিল ও জাপান অলিম্পিকে কুস্তি থাকিবে না। সম্প্রতি বুয়েনোস আইরেস-এ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কর্তারা সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করিয়াছেন। বেসবল, সফট্বল ও স্কোয়াশ হারিয়া গিয়াছে, ঠিক হইয়াছে, অলিম্পিকের ক্রীড়াভূমিতে উহারা এখন স্থান পাইবে না। মল্লযুদ্ধ বহাল থাকিবে। মল্লক্রীড়া নিছক বিনোদন নহে। গ্রিক সভ্যতায় দর্শনচর্চা ও মল্লক্রীড়া অঙ্গাঙ্গি। সোক্রাতেস, প্লাতো, আরিস্ততল যে ‘জিমনেসিয়াম’-এ দর্শনচর্চা করিতেন, সেখানেই থাকিত ২৮.৫ মিটার দীর্ঘ ও তদনুরূপ প্রশস্ত মল্লক্ষেত্র। শরীর সুগঠিত ও সুন্দর না হইলে বুদ্ধির বিকাশ অসম্ভব, আথেনীয়রা এমনই ভাবিতেন। সোক্রাতেস আরও এক ধাপ অগ্রসর হইয়া বলিয়াছিলেন, দুরন্ত দৌড়বাজও গড়পড়তা মল্লযোদ্ধার ধারে-কাছে আসেন না। পুরাতন গ্রিক সভ্যতায় তাই চার বছর অন্তর যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হইত, সেখানে শুধু দৌড় থাকিত না। সোক্রাতেসের জন্মের বহু আগে, ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেখানে ঢুকিয়া পড়িয়াছিল কুস্তি। ‘ইলিয়াড’ মহাকাব্য স্মরণীয়। মহাবীর আকিলিসের মৃত্যু ঘটিয়াছে, কোন গ্রিক বীর তাঁহার বর্ম এবং অস্ত্রাদি লাভ করিবেন? স্থির হইল, অদিসিয়ুস ও অ্যাজাক্সের মল্লযুদ্ধ হইবে। যিনি জয়ী হইবেন, তিনিই পাইবেন ওই বর্ম। কেবল গ্রিক সভ্যতা নহে। মহাভারতের সভাপর্বে ভীম ও মগধরাজ জরাসন্ধের মধ্যে মল্লযুদ্ধ সাতাশ দিন চলিয়াছিল। ওল্ড টেস্টামেন্টে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কুস্তি করিয়াই জেকব-এর নূতন নাম হয় ইজরায়েল। জাপানি পুরাণ জানায়, সমুদ্র-উপকূল কাহার অধিকারে থাকিবে, তাই লইয়া দুই দেবতার মধ্যে হাতাহাতি ঘটিয়াছিল। বিজয়ী দেবতা অতঃপর দেশ শাসনের জন্য প্রতিনিধি পাঠাইলেন। সম্রাটই সেই প্রতিনিধি! কুস্তির প্যাঁচের এই বিশ্বভ্রাতৃত্বের নিকট বেসবল বা স্কোয়াশ নিতান্ত দুগ্ধপোষ্য। কুস্তিকে ভোটে জিতাইয়া অলিম্পিক-কর্তারা তাই ধ্রুপদী ঐতিহ্যেরই বিজয় ঘটাইলেন।
জয় কিন্তু পুরা হইল না। অলিম্পিকে খেলার সংখ্যা গত কয়েক বছরে ক্রমে বৃদ্ধি পাইতেছিল। শেষে স্থির হয়, ২৮টির বেশি খেলা থাকিবে না। ২৫টি মূল খেলা, বাকি তিনটি শর্তসাপেক্ষে ‘সাময়িক’। মল্লযুদ্ধ সেই গোত্রে। অলিম্পিক-ঐতিহ্যের প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধাশীল হইলে কমিটি মল্লযুদ্ধকে মূল মঞ্চে রাখিত, শর্তাধীন নহে। দ্বিতীয়ত, বলা হইয়াছে, শরীরের উপরভাগে প্যাঁচ মারিবার ‘গ্রেকো-রোমান’ ও পা চালাইবার ‘ফ্রি স্টাইল’, দুটিই চলিবে। ফ্রি স্টাইল কেন? গ্রিক সভ্যতায় কিন্তু আজিকার ডব্লিউ ডব্লিউ ই বা ওয়ার্ল্ড রেসলিং এন্টারটেনমেন্টের সেলেব্রিটি মল্লযোদ্ধাদের মতো অঙ্গভঙ্গি চলিত না। নিয়ম ছিল, ভূপতিত মল্লযোদ্ধা ফের উঠিয়া দাঁড়াইবার পর তবেই খেলা শুরু হইবে। ভারতীয় দেবতারা অবশ্য সর্বদা এত নিয়মনীতির ধার ধারিতেন না। শ্রীকৃষ্ণ জরাসন্ধের দুই পা চিরিয়া মল্লযুদ্ধে ভীমকে জয়ের কৌশল দেখাইয়াছিলেন। প্রথম আধুনিক অলিম্পিকের মল্লভূমিতে ফ্রি স্টাইল স্থান পায় নাই। উহা পরে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার অলিম্পিকে প্রবিষ্ট হয়। টিভি সম্প্রচারের খাতিরে বুয়েনোস আইরেসে স্থির হইয়াছে, অতঃপর কুস্তির ম্যাট হইবে উজ্জ্বল বহুবর্ণ। মেয়েদের কুস্তির অনুষ্ঠানসংখ্যাও বাড়িবে। ইহাও ঐতিহ্যসম্মত। প্রাচীন গ্রিসের কুস্তিতে মিক্সড ডাবল্সও চলিত, উপকথার রাজকন্যা আটলান্টা রাজা পেলেয়াসের বিরুদ্ধে মল্লযুদ্ধে নামিয়াছিলেন। সুতরাং, মার্কিন প্রভাব ছাড়িয়া কেবল গ্রেকো-রোমান কুস্তি রাখিলেই ঐতিহ্য অটুট থাকিত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.