তাঁতের শাড়ি না হলে বাঙালির পুজোই মাটি। কিন্তু দাম বৃদ্ধির কারণে তাঁত শিল্পে এ বছর মন্দার ছোঁয়া।
তাঁতের শাড়ি তৈরির জন্য বর্ধমানের কালনা-১ ব্লকের ধাত্রীগ্রাম ও পূর্বস্থলী-১ ব্লকের সমুদ্রগড় এলাকার খ্যাতি বহুদিনের। শুধু বাংলায় নয়, ভিন রাজ্যেও যায় এখানকার তাঁত। সারা বছর ধরেই এখানে তাঁতের পাইকারি ও খুচরো কারবার চলে। তবে সব থেকে বেশি ব্যবসা হয় দুর্গাপুজোর সময়ে। |

চলছে সুতো রং করে শুকোনের কাজ। পূর্বস্থলীতে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বৈশাখ মাস থেকেই শুরু হয় পুজোর মরসুম। এই সময়ে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২৫টি করে ট্রাকে তাঁতের শাড়ি যায় আসানসোল, দুর্গাপুর, হাওড়া, কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকায়। অনেক সময় শহর এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা নিজেরা এসেও নিয়ে যান তাঁতের শাড়ি। কিন্তু এ বছর এখনও পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি-সহ নানা কারণে তাঁত ব্যবসায় ভাটার টান। নানা কারণে তাঁতের শাড়ির দাম বৃদ্ধি-সহ অন্যান্য কারণে তাঁতের শাড়ির জায়গা দখল করছে বাংলাদেশ থেকে আসা শাড়ি।
ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে সমুদ্রগড় ও ধাত্রীগ্রামের তাঁতিদের বোনা চিরাচরিত নকশার তাঁতের শাড়ির পাইকারি দাম ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা। খুচরো বাজারে এই শাড়িগুলি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৪০০ টাকায়। এই দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় কুড়ি শতাংশ বেশি। কেন দাম বাড়ছে তাঁতের শাড়ির?
দামবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, তাঁতের শাড়ি তৈরির সুতোর দাম বেড়েছে। বেড়েছে সুতোর রঙের খরচ ও শাড়ি বোনার মজুরি। গতবার যেখানে ২৫ মোড়া সুতোর দাম ছিল ১৮০০ টাকা, এ বার সেটা বেড়ে হয়েছে ২২০০ টাকা। গত বছর ২৫ মোড়া গাঢ় রঙের দাম ছিল ১৫০ টাকা। এই বছর সেটি বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। তাঁতের কাপড় প্রতি কারিগরদের মজুরি বর্তমানে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। গতবারে এই মজুরি ছিল ২৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। এরপরেও মিটছে না ভাল কারিগরের অভাব। আগে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর-সহ কয়েকটি এলাকা থেকে তাঁত শিল্পীরা কাজের জন্য সমুদ্রগড়, ধাত্রীগ্রামে আসতেন। কিন্তু এখন তাঁরা তাঁদের এলাকাতেই তাঁতের শাড়ি তৈরি করেন। |

কাটোয়ায় কর্মরত মহিলা তাঁতশিল্পীরা। —ফাইল চিত্র। |
তাঁতের শাড়ির দাম বৃদ্ধি ছাড়াও তাঁতশিল্পের নিম্নমুখী রেখাচিত্রের অন্যতম কারণ স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। সমুদ্রগড় তাঁত টাঙ্গাইল বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য কার্তিক ঘোষ বলেন, “বেশিরভাগ স্থানীয় বাসিন্দারই পেশা চাষ। পুজোর আগে বেশির ভাগ চাষিই পাট বিক্রি করে পুজোর বাজার করেন। এ বছর পাটের বাজার ভাল নয়।” সমস্যা রয়েছে আরও। বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির কর্তাদের দাবি, এই এলাকায় বেশ কিছু যুবক বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থায় এজেন্টের কাজ করতেন। কিন্তু বেশির ভাগ অর্থলগ্নি সংস্থা উঠে যাওয়ায় তাঁদের অনেকেই এখন বেকার। তাঁত ব্যবসায়ী মনোতোষ বসাকের কথায়, “শুধু যে এজেন্টরাই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাই নয়, বহু তাঁত ব্যবসায়ীও ওই সংস্থাগুলিতে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।”
সমস্যার কথা স্বীকার করছেন রাজ্যর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, “তাঁতিদের সার্বিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে তাঁতের শাড়ি ও ধুতি কেনা হচ্ছে। কিন্তু এটা ঠিক যে, তাঁত শিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণগুলির দাম বেড়েছে। ফলে তাঁতের শাড়ির দামও বেড়েছে। বিষয়টির দিকে আমরা নজর রাখছি।” |