খালের উপরে তৈরি হবে সৌরবিদ্যুৎ। তা ব্যবহার করে মিলবে আর্থিক সুবিধা। পাওয়া যাবে বাড়তি বিদ্যুৎও।
নিউ টাউনের ইকো পার্কে দ্রুত এই অভিনব প্রকল্প রূপায়িত করতে চায় হিডকো। ভারতে এ রকম প্রকল্প দ্বিতীয়। এর আগে একমাত্র গুজরাতে এমন প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে। হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন সম্প্রতি বলেন, “সৌরশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহারের উপরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবর গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে কথা মাথায় রেখে প্রকল্প পরিকল্পনা হয়েছে।”
কী ভাবে হবে এই প্রকল্প? হিডকো সূত্রে জানা গিয়েছে, ইকো পার্কের পাশে রয়েছে ১৫ মিটার চওড়া খাল। তার উপরে দু’ধারে ইস্পাতের দণ্ড বসিয়ে তৈরি হবে প্রায় ১৮ মিটার চওড়া কাঠামো। উচ্চতা হবে প্রায় ৮ ফুট। কাঠামোর দু’পাশ থাকবে খোলা। কিন্তু উপরে থাকবে সৌরপ্যানেল। প্রতিটি প্যানেল দু’মিটার চওড়া, এক মিটার লম্বা। প্রকল্পের অন্যতম প্রধান পরামর্শদাতা, বেসু-র বিজ্ঞানী হিরণ্ময় সাহা বলেন, “প্রতিটি প্যানেল থেকে পাওয়া যাবে প্রায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সব ঠিক মতো চললে তিন মাসেই হয়ে যাবে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ।” |
প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা। এর পরে আরও ৫০০ কিলোওয়াট অর্থাৎ এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলবে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু করেছেন ‘নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (এনকেডিএ)-র ইঞ্জিনিয়ারেরা। তদারকি করছেন সংস্থার সিইও গোপাল ঘোষ। সংস্থার এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “প্রথম পর্যায়ে খালের উপরে প্রায় ৬৫০ মিটার দীর্ঘ কাঠামো হবে। খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। এর ৩০ শতাংশ অপ্রচলতি শক্তি ব্যবহার খাতে অনুদান হিসেবে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।”
কী হবে প্রকল্পের এই বিদ্যুৎ দিয়ে? ইকো পার্কের এই বিদ্যুৎ পাঠিয়ে দেওয়া হবে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের গ্রিডে। এর থেকে মিলবে কিছু আর্থিক সুবিধা। সৌরপ্যানেলের নীচে জল থাকায় তাপ কম হবে। হিরণ্ময়বাবু বলেন, “এর ফলে বাড়তি বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা থাকছে।”
এর পাশাপাশি নিউ টাউনে সৌর-গাছ বসানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেটির নেপথ্যেও রয়েছে ‘বেসু’-র পরামর্শ। প্রতিটি গাছে থাকবে তালপাতার আকৃতির ১৬টি করে পাতা এবং ৮টি করে প্যানেল। প্রতিটিতে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। আপাতত দু’টি দু’টি সৌর-গাছ বসছে। দিনের আলোয় উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতে রাতে এলইডি আলো জ্বলবে ইকো পার্কে।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী উত্তর ২৪ পরগনা থেকে ফেরার পথে গিয়েছিলেন ইকো পার্কে। দেবাশিসবাবু বলেন, “দর্শনার্থীদের সঙ্গে সেখানে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানতে চান, কী ভাবে এই উদ্যানকে আরও জনপ্রিয় করা যায়।” আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজোয় ঘুড়ির লড়াইয়ের আসর বসবে ইকো পার্কে। এ নিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল এবং নির্বাচন দফতরের সঙ্গে কথা বলেছেন দেবাশিসবাবু। এর মাধ্যমে ভোটদানের ব্যাপারে সচেতনতা আনার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।
নিউ টাউনে প্রায় ৪৮০ একর জমির উপরে তৈরি এই ইকো পার্ক গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে চলছে এটির সৌন্দর্যায়নের কাজ। ইতিমধ্যেই ২ লক্ষ দর্শনার্থী ঘুরে গিয়েছেন। আগামী শীতে নানা ভাবে এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হবে বলে জানান হিডকো-র চেয়ারম্যান। |