কপাল খারাপ না হলে এত দিনে হয়তো তিনি মন্ত্রী।
বিধানসভা ভোটে টিকিট তিনি পাচ্ছেনই ধরে নিয়ে অত্যুৎসাহী অনুগামীরা কিছু দেওয়াল রাঙিয়েও ফেলেছিল ‘বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী ডাঃ স্বরূপ দত্তকে জোড়াফুল চিহ্নে ভোট দিন।’
কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিপিএম-সংসর্গের অভিযোগ ওঠে। দলের একটি অংশ কথা তোলে, স্বরূপবাবুর আসল স্বরূপ কী? লাল না সবুজ? শেষমেশ কলকাতা থেকে রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সিপিএমের খাসতালুক বর্ধমান শহরে নিরুপম সেন-বধ করে মন্ত্রীও হয়ে যান তিনি।
এ বার সেই শহরেই অনেক ছোট রিঙে ফের মুষ্টিযুদ্ধে নামছেন শিশু-চিকিৎসক স্বরূপ দত্ত। গত বারের পশ্চাদপসরণ প্রসঙ্গে তাঁর প্রচার লিফলেটে বলা হচ্ছে, “তাঁর ক্ষুরধার জিভ ও কলমের ভয়ে এবং আইএমএ নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত সিপিএমের প্রত্যক্ষ সাহায্যে কতিপয় স্বার্থান্বেষী বল্গাহীন কুৎসা প্রচার শুরু করে। তিতিবিরক্ত ডাঃবাবু প্রার্থিপদ থেকে সরে দাঁড়ান।”
গত বার গণেশ উল্টোনো ডাক্তারবাবুর সামনে এ বার সত্যি করেই এক গণেশ। ভোটের ব্যালটে যাঁর নাম অমিত হাজরা চৌধুরী, হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা সিপিআই প্রার্থী। কিন্তু গোটা ৩০ নম্বর ওয়ার্ড তাঁকে ‘গণেশ’, ‘গণেশদা’, ‘গণেশ ভাই’, ‘গণেশবাবু’ হিসেবেই চেনে। যাঁর দাবি, গত দশ বছরে এই ওয়ার্ডে তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। মানুষ সেটা জানেন। |
প্রচারে স্বরূপবাবু অবশ্য বলছেন, “সিপিএমের নেতারা তো এত দিন নিজেদের পকেটই ভরেছেন। শহরের রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশির বেহাল দশা দেখে মনে হয়, প্রতি বছর পুর এলাকায় উন্নয়ন খাতে ২১ কোটি টাকা গিয়েছে তাঁদের পকেটেই।” গণেশের পাল্টা “এমন কোনও রাস্তা এমনকী গলিও নেই, যেটা পাকা হয়নি। পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা হয়েছে সমানে। এক সময়ে পানীয় জলের টানাটানি ছিল। এখন নেই। আমি কোনওদিন পরিষেবা দেওয়া নিয়ে রাজনীতি করিনি। যে এসেছে, তাকেই যতটা পেরেছি সাহায্য করেছি।”
প্রচারে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? “আমি তো প্রচারে বের হতেই পারছি না! যেখানে যাচ্ছি, ওরা আমার পিছনে আসছে। অনবরত গালিগালাজ করছে।” ক্রিকেটে যেমন ব্যাটসম্যানের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে চাপা গলায় গালিগালাজ করা হয়, যাকে বলে ‘স্লেজিং’, তাঁকেও কার্যত তা-ই করা হচ্ছে বলে আক্ষেপ গণেশবাবুর। “এক দিনও বাড়ি-বাড়ি ঘুরতে পারিনি। কিন্তু আমি কেন এ বার প্রচারে যেতে পারছি না, এলাকার মানুষ সেটা বুঝছেন।”
স্বরূপবাবু অবশ্য উল্টে বলছেন, “কর্মীদের বলে দিয়েছি, কোনও মতেই যেন বিপক্ষের ফ্লেক্স, ফেস্টুুন, দেওয়াল লিখন নষ্ট করা না হয়। আমার বিরুদ্ধে যাঁরা দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে প্রচার করার। তাতে যেন বাধা না পড়ে।” তা যদি হয়, তা হলে বলতে হবে কর্মীরা স্বরূপবাবুর কথা শুনছেন না। কেননা গণেশবাবুর অভিযোগ, তিনিও বেশ কিছু ফ্লেক্স টাঙিয়েছিলেন ওয়ার্ডের নানা প্রান্তে। সেগুলি হয় খুলে নেওয়া হয়েছে অথবা তৃণমূলের ঝান্ডায় ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি যে প্রতিকূল হতে পারে, সেই আঁচ পাননি? গণেশবাবু বলেন, “আমার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ। ভেবেছিলাম, ভোটে দাঁড়াব না। পরে ভাবলাম, বিপদের সময় পালিয়ে যাবো? দেখিই না দাঁড়িয়ে।” গত দু’বার তিনি কার্যত কংগ্রেস, এমনকী তৃণমূলের ভোট ভাঙিয়ে জিতেছিলেন। এ বার কি সেই ‘আমাদের গণেশ’ মার্কা ইমেজ তাঁকে বৈতরণী পার করাতে পারবে? গণেশবাবুর দাবি, “মানুষ ভোট দিতে পারলে তা-ই হবে। আমার বিরুদ্ধে বলার মতো এক জন সাধারণ মানুষকেও এখানে খুঁজে পাবেন না। ওঁরা যদি প্রত্যাখ্যান করেন তো করবেন।”
আর স্বরূপবাবু? চওড়া হেসে বলছেন “ভোটের আগেই আমি মানুষের হৃদয় জিততে চাই। জেতার হার নিয়েই ভাবছি। অন্য কিছু নয়।”
গণেশ চতুর্থী এই সবে গেল। কার গণেশ ওল্টাবে, কে পুনর্মুষিক ভব? |