২০১০ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তার পরে এক বছর চুক্তি ভিক্তিতে কাজ করেছেন। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কাজ ছাড়ার কথা ভাবতে পারেননি সন্ধ্যা পাইন। আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ-সি কর্মী । আজও তিনি বিনা পারিশ্রমিকেই কাজ করে চলেছেন। তাঁর এই সেবার মনোভাব দেখে মুগ্ধ স্বাস্থ্য কর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই। হাসপাতাল সুপার সুজয় বিষ্ণ জানান, দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ওই স্বাস্থ্য কর্মী হাসপাতালের রক্ত পরীক্ষার কাজে নিয়মিত সাহায্য করছেন। অবসরের পরেও বেতন বা পারিশ্রমিক ছাড়াই হাসপাতালে এসে কাজ করেন। তাঁর এ মনোভাবে ও কাজে আমরা গর্বিত। বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্তাদের জানানো হয়েছে। তাঁকে ফের চুক্তিতে নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি। এমন এক কর্মীকে আমাদের পাশেই রাখতে হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সন্ধ্যা দেবীর বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” |
১৯৮১ সালে ল্যাবরেটরিতে কর্মী হিসবে কাজে যোগ দেন সন্ধ্যা দেবী। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি টেকনিশিয়ান হন। সেই থেকে ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষার কাজ করেন। অবসর নিলেও কাজ ছাড়তে পারেননি। আলিপুরদুয়ার বাবুপাড়া পলাশবাড়ি এলাকার বাসিন্দা অবিবাহিত সন্ধ্যা দেবী নিয়মিত সকাল ১০টার মধ্যে হাসপাতালের আসেন। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত এক নাগাড়ে কাজ করেন। ল্যাবরেটরির কর্মী রাজেশ প্রসাদ ও শ্যামলী চট্টোপাধ্যায় জানান, পরীক্ষাগারে চার জন কর্মীর প্রয়োজন। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস-বি সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষার কাজ করতে হয়। দুই জনে পেরে ওঠা সম্ভব নয়। সন্ধ্যা দেবী অবসরের পরে নিয়মিত এসে কাজ করেন।
সন্ধ্যা দেবী বলেন, “কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। হাসপাতালের কাজ করা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালেই হাসপাতালে চলে আসি। সারাদিন কাজে কেটে যায়। পরীক্ষাগারের কোনও কর্মীর ছুটি নিলে, সে দিন সকাল নটার মধ্যে ঢুকে পড়ি। আমার এখন টাকার দরকার নেই। যা পেনশন পাই তাতে দিব্যি চলে যায়।” নতুন করে চুক্তির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এক বার কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। উত্তর পাইনি।” সন্ধ্যা দেবীর ভাই প্রবীর পাইন জানান, ৪ ভাইবোনের মধ্যে দিদি সবার বড়। ও যে পেনশন পায় তাঁর অর্ধেক বাড়ির ছেলে মেয়েদের পড়ার পিছনে খরচ করে। হাসপাতালে গিয়ে কাজ করাটা ওঁর নেশা।” |