বুলেট-বৃষ্টিতে গরিষ্ঠদের হটিয়ে সংখ্যালঘু সদস্যদের নিয়েই কমলগাঁও সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কী ভাবে এটা সম্ভব হল, তা নিয়ে মামলার সূত্রে আগেই বিস্ময় প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার তারা জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্য সরকার ১০ দিনের মধ্যে এর যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে না-পারলে ইসলামপুর ব্লকের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে সদ্যগঠিত বোর্ড ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে।
ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে সদস্য-সংখ্যা ১৮। তাঁদের মধ্যে ১২ জন সিপিএমের। পাঁচ জন তৃণমূলের। এক জন কংগ্রেসের। অভিযোগ, বোর্ড গঠনের দিন সিপিএমের ১২ জন সদস্যকে ঢুকতে না-দিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের ছ’জন সদস্য ওই পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন সাঙ্গ করে বোর্ডও গড়ে ফেলেন। তার পরেই রমজান আলি-সহ কয়েক জন নির্বাচিত সদস্য মামলা করেন হাইকোর্টে। সেই মামলায় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য সরকারকে জানাতে বলেছিলেন, ওই বোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে না কেন।
এ দিন শুনানির সময় বিচারপতি রাজ্য সরকারের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, নির্বাচিত ১৮ সদস্যের মধ্যে সিপিএমের ক’জন? সরকারি আইনজীবী কোনও উত্তর দিতে পারেননি। বিচারপতি বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলের ১২ জন নির্বাচিত সদস্য হাজির ছিলেন না। অথচ মাত্র ছ’জন সদস্যকে নিয়ে বোর্ড গঠন হয়ে গেল! এটা আদালত মেনে নিতে পারে না।” তিনি জানান, সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের অনুপস্থিতিতে সংখ্যালঘু সদস্যদের নিয়ে বোর্ড গড়া হয়েছে জেনেও সরকার নীরব থাকল, এটাও মানতে পারে না আদালত।
আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ওখানে বোর্ড গঠনের তারিখ নির্দিষ্ট ছিল ১৭ অগস্ট। সিপিএমের নির্বাচিত সদস্যেরা তার আগের দিন অর্থাৎ ১৬ অগস্ট উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং বিডিও-র কাছে ফ্যাক্সবার্তা পাঠিয়ে জানান, তাঁরা যে-কোনও সময়েই আক্রান্ত হতে পারেন। বোর্ড গঠনে তাঁরা যাতে হাজির হতে না-পারেন, সেই জন্যই তাঁদের আক্রমণ করা হতে পারে। যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য আর্জি জানান ওই সদস্যেরা।
কিন্তু জেলাশাসক বা পুলিশ সুপার কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে আবেদনকারীদের আইনজীবীর অভিযোগ। তিনি জানান, ১৭ অগস্ট নির্বাচিত সিপিএম সদস্যেরা বোর্ড গঠনের বৈঠকে যোগ দিতে গেলে তাঁদের আক্রমণ করা হয়। গুলি চলে। ১৮ জন গুলিবিদ্ধ হন। নির্বাচিত সিপিএম সদস্যেরা আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। এর মধ্যেই বিডিও-র নেতৃত্বে পাঁচ জন তৃণমূল সদস্য এবং এক জন কংগ্রেস সদস্য বোর্ড গঠন করে ফেলেন। তৃণমূলের এক সদস্য পঞ্চায়েতের প্রধান হন এবং উপপ্রধান হন কংগ্রেসের একমাত্র সদস্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতেই বোর্ড গঠন হয়ে যায়। বিচারপতি এ দিন সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, এটা কী করে সম্ভব হল?
সরকারি আইনজীবী বলেন, “চার ভাগের এক ভাগ সদস্য হাজির থাকলে বোর্ড গঠন করা যায়।” ক্ষুব্ধ বিচারপতি জানান, তিনি রাজ্য সরকারকে আরও এক বার সুযোগ দিতে চান। ১০ দিনের মধ্যে হলফনামা পেশ করে তাদের এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হবে। ব্যাখ্যা যুক্তিগ্রাহ্য না-হলে হাইকোর্ট ওই বোর্ড ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেবে। বোর্ড ইতিমধ্যেই যে-সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা-ও খারিজ করে দেওয়া হবে। |