এক মাত্র সাক্ষী প্রাক্তন ছাত্র। কাঠগড়ায় প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক।
টিএমসিপি সমর্থক ছাত্র তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ খুনের প্রত্যক্ষদর্শী। মঙ্গলবার পূর্বস্থলী কলেজের তৃতীয় বর্ষের সেই শৌভিক আইচই নবদ্বীপ আদালতে দাঁড়িয়ে বর্ণনা করলেন, এক বছর আট মাস আগে সেই রাতে কী ঘটেছিল। আর, আগাগোড়া আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে স্থির ভাবে তা শুনে গেলেন হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত, সিপিএমের পূর্বস্থলী লোকাল সম্পাদক প্রদীপ সাহা।
সাক্ষ্য শুরুর প্রথম দিন, সোমবার কয়েকশো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বিক্ষোভ দেখানোয় এ দিন পুলিশ দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল গোটা আদালত চত্বর। ফলে, এ দিন আর এজলাস বন্ধ করে শুনানি চালানোর প্রয়োজন হয়নি। দুপুর ২টো নাগাদ প্রদীপ সাহার শাস্তির দাবি তুলে তৃণমূলের একটি মিছিল এলেও পুলিশ সেটিকে চত্বরে ঢুকতে দেয়নি। খানিক বাদে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাদা হাফ শার্ট-নীলচে ধূসর রঙের ট্রাউজার্স পরা প্রদীপ সাহা ছাড়াও কাঠগড়ায় হাজির অন্য তিন অভিযুক্ত। তার মধ্যে পূর্বস্থলী কলেজের এসএফআই সমর্থক সন্তু ভৌমিকও ছিলেন।
নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ এবং সেশন জজ শুভব্রত চৌধুরীর এজলাসে দাঁড়িয়ে শৌভিক জানান, ২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি দুপুরে বর্ধমানে পূর্বস্থলী কলেজের ছাত্র সংসদের মনোনয়ন জমা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের সদস্যদের গণ্ডগোল বাধে। টিএমসিপি-র শৌভিক এবং হালিম শেখ আহত হয়ে নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের সঙ্গেই ভর্তি হন এসএফআইয়ের সন্তু ভৌমিক। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ চিকিৎসাধীন দুই ছাত্রকে দেখতে হাসপাতালে আসেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়। সজল ঘোষ-সহ সহ পূর্বস্থলীর কয়েক জন তৃণমূল নেতা তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। হাসপাতালের দোতলার ঘরে তাঁরা যখন আহত দুই ছাত্রের সঙ্গে কথা বলছেন, এক জন অচেনা ছেলে এসে সন্তুর সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলে। তার পরই সন্তু গিয়ে সজল ঘোষ বলেন, পূর্বস্থলী কলেজের এসএফআই নেতা লোকনাথ দেবনাথ তাঁকে নীচে ডাকছে। সজলবাবু নীচে নেমে যান। সঙ্গে যান শৌভিকও। কিন্তু হাতে স্যালাইনের চ্যানেল থাকায় হাসপাতালের গেটে নিরাপত্তা কর্মী তাঁকে আটকে দেয়। গেট থেকে ২০-২৫ হাত দূরে অ্যাম্বুল্যান্স গ্যারাজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল লোকনাথ, সঙ্গে প্রদীপ সাহা। সজলবাবু এগিয়ে যেতেই লোকনাথ খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে। সজলবাবু লুটিয়ে পড়েন। অন্য যাঁরা তাঁর সঙ্গে নীচে নেমেছিলেন, তাঁরা তাঁকে তুলে হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এই হট্টগোলের মধ্যেই লোকনাথ (এখনও ফেরার) এবং প্রদীপবাবু পালিয়েছিলেন বলে শৌভিক তাঁর সাক্ষ্যে জানিয়েছেন। পরে রাতে নবদ্বীপের বাড়ি থেকে পুলিশ প্রদীপবাবুকে গ্রেফতার করে। বাকিরা জামিন পেলেও তিনি এখনও জেলে রয়েছেন। সাক্ষ্যের শেষে সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় শৌভিকের কাছে জানতে চান, এজলাসের ভিড়ের মধ্যে তিনি সন্তু ভৌমিক এবং প্রদীপ সাহাকে দেখিয়ে দিতে পারবেন কি না। শৌভিক আঙুল তুলে তাঁদের চিহ্নিত করে বলেন, “সন্তু পূর্বস্থলী কলেজেরই ছাত্র।” আর প্রদীপবাবু? সন্তু বলেন, “আমি পারুলিয়া কুলকামিনী হাইস্কুলে পড়তাম। উনি সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।”
আজ, বুধবার মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
|